২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

হাড়কাঁপানো শীত, ঘন কুয়াশায় ফেরি চলাচল বিঘিœত

-

ঘন কুয়াশার কারণে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল সাড়ে বারো ঘণ্টা। একই অবস্থা দৌলিতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটের। এ ছাড়া হাড় কাঁপানো শীত আর হিমেল হাওয়ায় কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শৈত্যপ্রবাহের কবলে দিশেহারা হয়ে পড়েছে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলাসহ আশপাশের লোকজন।
মুন্সীগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটে সাড়ে ১২ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর ফেরি চলাচল শুরু হয়েছে। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ফেরি চলাচল শুরু হয়। এর আগে গত মঙ্গলবার রাত ১০টা থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল। মঙ্গলবার রাতে ঘন কুয়াশার কারণে এক ফুট অদূরে ‘মার্ক সিগন্যাল বয়া’ বাতি না দেখার কারণে দুর্ঘটনা এড়াতে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয় বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষ। এ সময় ঘন কুয়াশায় মাঝ পদ্মায় আটকা পড়ে ছয়টি ফেরি।
মাওয়া বিআইডব্লিউটিসির মহাব্যবস্থাপক শফিক আহম্মেদ জানান, কুয়াশার কারণে মঙ্গলবার রাত ১০টা থেকে বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়। শিমুলিয়া-কাঁঠাল বাড়ি নৌরুটে বর্তমানে ১৪টি ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপার হচ্ছে। এ দিকে সাড়ে ১২ ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় পাঁচ শতাধিক ছোট-বড় যানবাহনের লাইন পড়ে। এ বহরে অ্যাম্বুলেন্স ও পচনশীল মালবাহী ট্রাকও রয়েছে।
রাজবাড়ী সংবাদদাতা জানান, পদ্মা-যমুনায় ঘন কুয়াশায় ফেরির মার্কিং বাতির আলো অস্পষ্ট হয়ে যাওয়ায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকে ফেরি ও লঞ্চ চলাচল। গতকাল বুধবার ভোর ৫টায় হঠাৎ ঘন কুয়াশা পড়লে নদীতে দশ গজ দূরেও কোনো কিছু দেখা যাওয়ায় পদ্মার ডুবো চরে শতাধিক গাড়িসহ চারটি ফেরি নোঙর করে থাকে। আর দুর্ঘটনা এড়াতে বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষ ভোর ৫টা থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখে। এ সময় ফেরি বন্ধ থাকায় উভয় ঘাটে প্রায় পাঁচ শতাধিক যানবাহন আটকা পরে। যাত্রীরা প্রচণ্ড শীতে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের এ জি এম আব্দুল্লা আল রনি জানান, মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে কুয়াশা পড়তে শুরু করে। পরে ভোর ৫টার দিকে ঘন কুয়াশায় ফেরির মার্কিং বাতির আলো অস্পষ্ট হয়ে ওঠে। এতে অল্প দূরত্বের কিছুও দেখা যাচ্ছিল না। ফলে দুর্ঘটনার শঙ্কা দেখা দেয়। দুর্ঘটনা এড়াতে ফেরি চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। কুয়াশা কমে গেলে দুপুরে আবার ফেরি চলাচল শুরু হয়।
ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, ঘন কুয়াশা, হাড়কাঁপানো শীত আর হিমেল হাওয়ায় ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গত কয়েক দিন ধরে দিনের বেলা সূর্যের দেখা মিললেও বিকেল হওয়ার সাথে সাথে জেঁকে বসছে ঘন কুয়াশা আর কনকনে শীত। বেলা ১১টা পর্যন্ত কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকছে প্রকৃতি। ফলে শ্রমজীবী-কর্মজীবী মানুষ, শীতবস্ত্রহীন বৃদ্ধ, নারী ও শিশুরা চরম বিপাকে পড়েছে। বিশেষ কাজ ছাড়া বাইরে বের না হয়ে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে অনেকেই।
মাটি কাটার কাজ করতে বের হওয়া পূর্ব ফুলমতি গ্রামের জহুরুল হক, এসপা বেগম ও জরিনা জানান, কয়েক দিন থেকে দুপুরে সামান্য রোদ থাকলেও সকাল ও রাতে কনকনে ঠাণ্ডা পড়ে। সকাল ৮টায় কাজে যাওয়ার সময় কুয়াশায় রাস্তা দেখা যায় না। তারপর শীত উপেক্ষা করে কাজে যেতে হয়।
জেলার রাজারহাট উপজেলার কৃষি আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাকির হোসেন জানান, মৃদু শৈত্যপ্রবাহ কুড়িগ্রামের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ অবস্থায় আরো কয়েক দিন আবহাওয়া এমন থাকতে পারে। গতকাল সকাল ৯টায় কুড়িগ্রামে সর্বনি¤œ ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সবুজকুমার গুপ্ত জানান, শীতে উপজেলায় প্রায় সাড়ে চার হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। আরো কম্বল চেয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে।
শায়েস্তাগঞ্জ (হবিগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, একের পর এক শৈত্যপ্রবাহের কবলে দিশেহারা শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলাসহ আশপাশের লোকজন। সপ্তাহ না যেতেই আবারো শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে এ অঞ্চল। কুয়াশার সাথে পড়ছে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। গতকাল শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলাসহ আশপাশে ঘন কুয়াশা আর হিমশীতল বাতাসে জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে আসে। কুয়াশার কারণে মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কে গাড়ি চলাচলে বিঘœ ঘটেছে। তীব্র শীতে কাঁপছে ফুটপাথে থাকা হতদরিদ্র মানুষ। শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে ফ্লাটফর্মে বসবাসরত মোহাম্মদ আব্দুল জানান, শীতে খুবই কষ্টে আছেন তিনি। রেলওয়ে স্টেশনের পাশের বস্তিবাসী আমেনা বলেন, শীত নিবারণ উপকরণের অভাবে তিনি কষ্টে আছেন। গত বছর অনেকে শীতবস্ত্র বিতরণ করেছেন। সে তুলনায় এবার খুবই কম।

 


আরো সংবাদ



premium cement