২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
গোলটেবিল আলোচনায় অভিমত

ভোট কারচুপির নতুন পদ্ধতি হচ্ছে ইভিএম

-

নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম ব্যবহার মানা হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের বিশিষ্ট নেতারা। তারা বলেছেন, এই যন্ত্রের মাধ্যমে সহজেই ভোট চুরি করা যাবে। এটি ভোট কারচুপির নতুন পন্থা। যা বিশ্বের বহু দেশে ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সুতরাং বাংলাদেশেও ইভিএম ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে হবে। এই যন্ত্রের ব্যবহারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
গতকাল বুধবার দুপুরে এক গোলটেবিল আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ‘অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচনে বিশ্বব্যাপী ইভিএম প্রত্যাখ্যান এবং বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে স্বাধীনতা অধিকার আন্দোলন। এতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম। সংগঠনের সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামানের সভাপতিত্বে সভায় নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া, স্বাধীনতা অধিকার আন্দোলনের উপদেষ্টা ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম, ইসমাইল তালুকদার খোকন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের অনিয়ম চাপা দিতেই সিটি নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হচ্ছে অভিযোগ তুলে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে যে বদনাম হয়েছে, সেটা ধুয়ে মুছে সাফ করা দরকার। নির্বাচন কমিশন নির্লজ্জের মত বলেছে, ইভিএম হলে দিনের ভোট রাতে হবে না। আপনিইতো তখন সিইসি ছিলেন। আপনি ওই নির্বাচন বাতিল করতে পারেননি? ওই নির্বাচন নিয়ে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে ইভিএম করেছেন।
যেখানেই ভোট দেয়া হোক, নৌকায় গিয়ে ভোট পড়ে এমন ঘটনা ইভিএমে ভোটগ্রহণের প্রদর্শনীতে সাংবাদিকরা দেখেছেন জানিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ এই নেতা বলেন; কিন্তু এটা আপনি ভোটের দিন দেখতে চাইতে পারবেন না। যেহেতু মহড়া হয়েছে, সেহেতু দেখা গেছে। আপনি কোনো প্রশ্ন করতে পারবেন না, বিতর্কও নাই, মামলাও নাই। মানে এর চাইতে বড় জুয়া-চুরি আর কি হতে পারে? কোনো কারণে ইভিএমে আঙুলের ছাপ না মিললে ওখানে নির্বাচন পরিচালনায় যিনি আছেন, তিনি ২৫ শতাংশ ভোট দিয়ে দিতে পারবেন। যন্ত্রতো মানুষ পরিচালনা করে। আর আমরা এই নির্বাচন কমিশনকে বিশ্বাস করতে পারি না। ইভিএম মানা যাবে না। এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
তিনি বলেন, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে যে ভোট ডাকাতি হলো তখন যদি আমরা মাঠে নামতাম তাহলে তারা সাহস পেত না। আসুন তখন যেটা পারিনি ২০২০ সালে সেটা করি। কারণ এটা বিএনপি, গণফোরাম বা অন্য কারো লড়াই নয়। যেখান থেকেই নির্দেশ আসুক মাঠে নামতে হবে। এটা আমাদের ভোটাধিকার রক্ষার ও বাঁচা মরার লড়াই।
সিটি নির্বাচনে মেয়র পদের শীর্ষ দুই দলের চার প্রার্থীকে কোটিপতি উল্লেখ করে ড. শাহদীন মালিক বলেন, উত্তর দক্ষিণের যে প্রধান চারজন প্রতিদ্বন্দ্বী। একটা কমন ফ্যাক্টর আছে তাদের চারজনের মধ্যেÑ বিকট ধরনের কোটিপতি। এখন শিল্পপতি, কোটিপতি, অন্যান্য বিভিন্নভাবে কোটিপতি, এমপি হয়ে যে, শত কোটিপতি হওয়া যায় বেশি বছর লাগে না। এরকম সৃষ্টিকারী লোকরাই এখন আমাদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণাকালে তারা দুঃখী-দরিদ্র ও বস্তি এলাকায় যায়। কিন্তু এখন আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থায় গণতন্ত্র কোথায় গেছে? ঢাকা সিটি করপোরেশনে একজন ব্যতীত কারো রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা নেই। কিন্তু চারজনেরই কমন ফ্যাক্টর হলো কোটিপতি। সুতরাং আমাদের গণতন্ত্র হয়েছে কোটিপতির গণতন্ত্র। আর কোটিপতি তো সৎ পথে কোটি টাকা বাংলাদেশে আয় করা যায় না। তর্ক হতে পারে কতটা অল্প অসৎ, বেশি অসৎ ইত্যাদি। কোটিপতিদের জন্য দুঃখ-দুর্দশা, গরিবের জন্য কথা বলাটা অনেক সহজ। কারণ এই দুঃখ-দুর্দশা তাদের গায়ে লাগে না। অতএব একটা কোটিপতিদের প্রচারণামূলক নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। দেশ যে গণতন্ত্রহীন সেটা আরও সুদৃঢ় হবে।
ইভিএম চালুর বিরোধিতা করে এটাকে ক্ষমতাসীনদের ভোট কারচুপির নতুন পন্থা হিসেবে অভিহিত করে শাহদীন মালিক বলেন, ইভিএম হলো প্রতারণার একটা নতুন পদ্ধতি। সিটি নির্বাচন হয়ে গেলে আমরা বুঝে উঠতে পারবো প্রতারণার বিষয়টি। আমি মোটামুটি সম্পূর্ণ নিশ্চিত আগামী বড় নির্বাচনে প্রতারণার আরেক পদ্ধতি আসবে। ইভিএম এই নির্বাচন কমিশন ও সরকার চাচ্ছে। নিঃসন্দেহে এর পেছনে কোনো সৎ উদ্দেশ্য, নাগরিকদের ভোট, গণতন্ত্র, কোনো কিছু থাকতে পারে না। যাতে আমাদের ভোট যাতে বানচাল হয়, সূক্ষ্ম কারচুপির পদ্ধতি বের করেছে। ফলাফল কী হবে? আমরা বেশির ভাগ লোক জানি এখানে কারচুপি হবে। ইভিএমের একটা প্রধান অবদান হবে ভোটের দিন খুব অল্পসংখ্যক লোক ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হবে। ভোটার উপস্থিতি যত কম হয়, এই প্রতারণা করা, লোক ঠেকানো, বিভিন্ন ধরনের কারচুপি সহজ হয়। এটা আমার দৃষ্টিতে এর পেছনে সৎ উদ্দেশ্য, সৎ নিয়ত, গণতন্ত্র, আমাদের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা-এর কোনোটাই থাকতে পারে না।
সুব্রত চৌধুরী বলেন, ইভিএমের সরাসরি ভুক্তভোগী আমি। গত নির্বাচনে আমার ঢাকা-৬ আসনে ইভিএমে ভোট হয়েছিল। সেখানে এক জায়গায় দেখেছি, প্রিজাইডিং অফিসার ভোটারের ফিঙ্গার প্রিন্ট নেন ঠিকই; কিন্তু বুথের ভেতরে ভোটারের যাওয়ার সুযোগ থাকে না। আওয়ামী লীগের লোকজনই ভোট দিয়ে দেয়। আমাদের আশঙ্কা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফল তারা ঠিক করে রেখেছে। এখন শুধু ঘোষণার অপেক্ষায়।
ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, ইভিএম নিয়ে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অতি আগ্রহ দেখেই বোঝা যায়, তারা কেনো এটা চাচ্ছে। ৩১টি দেশ ইভিএমে ভোট নেয়ার উদ্যোগ নিলেও টিকে আছে মাত্র চারটি দেশে। আমেরিকা, নরওয়ে, জার্মানি, আয়ারল্যান্ডের মত দেশ এটা থেকে সরে এসেছে। কেননা ইভিএমে কাগজের ব্যবস্থা না থাকায় সেটাকে পুনঃগণনা করার সুযোগ নেই। এ কারণেই ওইসব দেশ সেটা বাদ দিয়েছে। যদিও সেখানে নির্বাচন কমিশন অনেক ভালো ও স্বাধীন। অথচ আমাদের নির্বাচন কমিশনের অবস্থা আমরা জানি। সুতরাং পেপার ট্রেইল না থাকায় আমরা এমন ভোট মেনে নিতে পারি না।
ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে নিয়ে যায় সেখানে ইভিএমে আমাদের ভোট যে চুরি হবে না সেটা কিভাবে বলা যায়? আমাদের গ্রামের সাধারণ মানুষ এখনো ইভিএমে অভ্যস্ত নয়। সুতরাং ব্যালট পেপারে ভোট গ্রহণ করা হোক।
গোলটেবিলের মূল প্রবন্ধে ইভিএমে জালিয়াতি, সফটওয়্যারে ভাইরাস আক্রমণ এবং সফটওয়্যারে নির্দিষ্ট প্রতীকে ভোট পড়ার সুযোগসহ নানা দিক তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম। তিনি বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থায় ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্তকে ভবিষ্যতে এ দেশের মানুষের মৌলিক ভোটের অধিকারকে স্থায়ীভাবে কেড়ে নেয়ার এক মহাষড়যন্ত্র ও দুরভিসন্ধি বলেই জনগণ মনে করে। মূলত বাংলাদেশের বর্তমান নির্বাচনী ব্যবস্থাপনার চরম নৈরাজ্যকর, অব্যবস্থাপনা সর্বোপরি নির্বাচন কমিশনের লাগাতার প্রশ্নবিদ্ধ আচরণ বা তাদের প্রতি সীমাহীন অনাস্থার কারণে মানুষের মনে এমন ধারণার সৃষ্টি হওয়াটা একেবারে স্বাভাবিক।


আরো সংবাদ



premium cement
আওয়ামী লীগকে ‘ভারতীয় পণ্য’ বললেন গয়েশ্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে দাগনভুঞার যুবক নিহত কাশ্মিরে ট্যাক্সি খাদে পড়ে নিহত ১০ অবশেষে অধিনায়কের ব্যাপারে সিদ্ধান্তে পৌঁছল পাকিস্তান জাতিসঙ্ঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থাকে আবার অর্থায়ন শুরু করবে জাপান শেখ হাসিনার অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি বিএনপিকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে : ওবায়দুল কাদের রাশিয়া সমুদ্র তীরবর্তী রিসোর্টে ১৬.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে সিরিয়ায় ইসরাইলি হামলায় নিহত ৩৬ সেনা সদস্য দৌলতদিয়া ঘাটে পন্টুন থেকে নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু অ্যানেসথেসিয়ার পুরনো ওষুধ বাতিল করে কেন নতুনের জন্য বিজ্ঞপ্তি! বাইডেনের মেয়াদে রুশ-মার্কিন সম্পর্কের উন্নতির কোনো আশা নেই : রুশ রাষ্ট্রদূত

সকল