২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

পর্যটন স্পটগুলোতে ভিড় থাকলেও সুবিধা নেই

-

নতুন বছরের শুরুতে নগর জীবনের কোলাহল ছেড়ে প্রকৃতির সান্নিধ্যে ছুটির কয়েকটি দিন কাটাতে পর্যটকরা ছুটছেন মেঘ-পাহাড় আর সাগরের কাছে। হাত বাড়ালেই মেঘ আর দৃষ্টিসীমায় সবুজের সমারোহ বান্দরবানের মেঘলা, নীলাচল, নীলগিরি, শৈলপ্রপাত, চিম্বুক, বগালেক, নাফাখুম, রিজুক ঝর্ণাসহ পর্যটন স্পটগুলোতে এখন উপচে পড়া ভিড়। রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতু, শুভলং ঝর্ণা, রাজবন বিহারসহ আদিবাসীদের শান্ত সবুজ গ্রাম ও জনজীবন আকর্ষণ করে পর্যটকদের। নীল জলরাশি আর সবুজ প্রকৃতির নয়নাভিরাম সৌন্দর্য ভুলিয়ে দেয় ব্যস্ততার সব ক্লান্তি। পর্যটকদের পদচারণায় মুখর সিলেট, কক্সবাজার ও সাগরকন্যা কুয়াকাটাও। একইস্থানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দেখতে ভিড় করছেন ভ্রমণপিয়াসী মানুষ। তবে এমন উপচে পড়া ভিড়ে সম্ভাবনার হাতছানি থাকলেও পর্যটকদের জন্য নেই তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধা।
ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে পর্যটকদের পছন্দের বেড়ানোর তালিকায় শীর্ষে রয়েছে সমুদ্রসৈকত শহর কক্সবাজার। তারপরের অবস্থানে রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি। তৃতীয় অবস্থানে আছে সিলেট। এ ছাড়া বেড়ানোর তালিকায় আরো আছে সুন্দরবন, কুয়াকাটা, সেন্টমার্টিন, পাহাড়পুর প্রভৃতি। এসব জায়গায় বছরে তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ পর্যটক বেড়াতে যান। এ ছাড়া বরিশাল, ভোলা, নেত্রকোনা, শেরপুর, সীতাকুণ্ডে এখন পর্যটকদের ভিড় বাড়ছে।
এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, বছরে এখন ৫০ থেকে ৬০ লাখ মানুষ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যান। পাঁচ বছর আগেও পরিস্থিতি এমন ছিল না। তখন বছরে ২৫ থেকে ৩০ লাখ মানুষ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যেতেন। আরো আগে ২০০০ সালের দিকে এ সংখ্যা ছিল তিন থেকে পাঁচ লাখ।
ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিলের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের পর্যটন খাতে সরাসরি কর্মরত মানুষের সংখ্যা ১৫ লাখ। আর পরোক্ষভাবে আরো ২৩ লাখ মানুষ এর সাথে জড়িত। সব মিলিয়ে প্রায় ৪০-৪৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে পর্যটন খাত। আর্থিক মূল্যে দেশীয় পর্যটন খাতের আয়তন বেড়ে এখন দাঁড়িয়েছে কমপক্ষে চার হাজার কোটি টাকার; কিন্তু এত কিছুর পরও পর্যটন স্থানগুলোতে নানান সমস্যার কারণে আগতরা বিরক্তি প্রকাশ করেছেন।
পর্যটকদের অভিযোগ, বেশির ভাগ পর্যটন স্পটে যাতায়াতব্যবস্থা নাজুক। এ ছাড়া নিরপত্তাব্যবস্থা, টয়লেট, থাকাখাওয়াসহ পদে পদে সমস্যায় পড়তে হয়। যার কারণে অনেকে একবার যাওয়ার পর এসব স্থানে আর যেতে চান না। ফলে সম্ভাবনার এ স্থানগুলো একসময় পর্যটকশূন্য হয়ে পড়ার আশঙ্কা তাদের।
তাদের মতে, বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ পর্যটক সংখ্যা বৃদ্ধির মূল কারণ দেশে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর বিকাশ। মানুষের আর্থিক সামর্থ্য এখন আগের চেয়ে বেড়ে যাওয়ায় ট্যুরিস্ট অপারেটরদের ব্যবসা বাড়ছে। দিনে দিনে দেশে অভ্যন্তরীণ পর্যটন বৃদ্ধি পেলেও পর্যটকদের জন্য তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধা বাড়ছে না। দেশের অনেক পর্যটন কেন্দ্রেই এখনো পর্যাপ্ত অবকাঠামোর সুযোগ-সুবিধা নেই। আবার হয়তো যেখানে অবকাঠামো তৈরি হচ্ছে তাতে পরিকল্পনার কোনো প্রকাশ নেই। অপরিকল্পিতভাবে অবকাঠামো গড়ে ওঠায় পর্যটন নগরী কক্সবাজারের অবস্থা এখন যাচ্ছেতাই হয়ে যাচ্ছে। জঞ্জাল নগরীতে পরিণত হয়েছে কক্সবাজার। অতিরিক্ত পর্যটকের চাপে সেন্টমার্টিন দ্বীপের প্রাকৃতিক শোভা ও মাধুর্য হারিয়ে যাচ্ছে। প্রায় একই অবস্থা সুন্দরবন, সিলেটের রাতারগুল, জাফলং, তামাবিল, বিছানাকান্দির মতো দর্শনীয় পর্যটন স্পটগুলোতে। সিলেট ও কক্সবাজারের পর্যটন স্থানগুলোতে যাতায়াতের অবস্থা শোচনীয় হয়ে উঠেছে বহু দিন ধরে।
পর্যটন স্পটগুলোর এমন দুরবস্থার কথা স্বীকার করে ট্যুরিজম বোর্ডের একজন কর্মকর্তা জানান, সরকার পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে অনেক মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করলেও তার বাস্তবায়ন এখনো দৃশ্যমান হয়নি। তিনি বলেন, পর্যটনের এই সম্ভাবনাময় বাজার ধরার জন্য এখন থেকেই ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করতে শুরু করেছে। আমাদের বাংলাদেশ পর্যটনে যথেষ্ট সম্ভাবনাময় হলেও সেভাবে কোনো বৃহৎ পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে না।
পর্যটনে এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলোÑ একটি দর্শনীয় স্থানকে কিভাবে টিকিয়ে রাখা যায়। আজ সুন্দরবন যেমন অবস্থায় রয়েছে, আজ থেকে ১০০ বছর পরেও পরবর্তী প্রজন্ম যাতে তেমন অবস্থায় দেখতে পায় সে অবস্থা সৃষ্টির জোরালো উদ্যাগ গ্রহণ করতে হবে। এটা টেকসইভাবে করতে হলে স্থানীয় লোকজনকে এর সাথে সম্পৃক্ত করতে হবে। যেটিকে কমিউনিটি বেসড ট্যুরিজম হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। যেমন সিলেটের বিছানাকান্দি কিংবা নওগাঁর পাহাড়পুরে যেসব পর্যটক এখন বেড়াতে যায় সেখানে পর্যটকদের থাকার কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে পর্যটনে অপার সম্ভাবনার বাংলাদেশ এখনো পিছিয়ে রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement