২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বিদ্যুৎস্পৃষ্টে রেসিডেনসিয়াল ছাত্র আবরারের মৃত্যু

কিশোর আলোর বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানে শক খেয়েছিল কয়েকজন

-

রাজধানীর রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রথম আলোর ম্যাগাজিন কিশোর আলোর বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানে নাইমুল আবরার রাহাতের আগেও বেশ কয়েকজন শক খেয়েছিল। এ বিষয়ে অনুষ্ঠানে থাকা ভলান্টিয়ারদের ডেকে জানানো হলেও তারা তেমন কর্ণপাত করেনি। যদি তারা বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে সমাধান করত তাহলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আবরারের এমন মর্মান্তিক মৃত্যু হতো না বলে দাবি করেছে অনুষ্ঠানের প্রত্যক্ষদর্শী রেসিডেনসিয়ালের শিক্ষার্থীরা। মর্মান্তিক এ ঘটনাটি চেপে রেখে অনুষ্ঠান চালিয়ে যাওয়ায় আয়োজক ও কলেজ কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। ঘটনা চেপে রেখে আবরারকে কলেজের পাশের কোনো হাসপাতালে না নিয়ে শুধুমাত্র চুক্তির কারণে মহাখালীর একটি হাসপাতালে নেয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন তারা। এ সময় অবরারের মৃত্যুকে অস্বাভাবিক অভিযোগ করে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা এর সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন।
এদিকে এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা করেন আবরারের বাবা মজিবুর রহমান। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মোহাম্মদপুর থানার ওসি গণেশ গোপাল বিশ্বাস বলেন, বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্তের প্রথম ধাপে আমরা আবরারের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছি। চিকিৎসক আমাদের সার্টিফায়েড করেছেন যে, বিদ্যুৎস্পৃষ্টেই তার মৃত্যু হয়েছে। এখন দ্বিতীয় ধাপের তদন্তে এই ঘটনায় কারো গাফিলতি বা দায় ছিল কি না তা দেখা হবে। তদন্তে আমরা স্কুল কর্তৃপক্ষের সহায়তা নিচ্ছি। এদিকে আবরারের মৃত্যুতে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের মুখে একটি তদন্ত কমিটি করেছে রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ কর্তৃপক্ষ। জানা গেছে, গতকাল ওই কমিটির সদস্যরা মিটিং করেছেন। কিন্তু এ ব্যাপারে কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, আবরার বিদ্যুতায়িত হওয়ার আগে কয়েকজন শিক্ষার্থী বৈদ্যুতিক তারের ত্রুটির কথা জানালেও স্বেচ্ছাসেবীরা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। এ ছাড়া বড় একটি ইভেন্ট হলেও তাতে অল্পবয়সী ও অনভিজ্ঞদের স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে রাখার ঘটনাতেও ক্ষোভ জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, অনুষ্ঠানে সাতটি জোনে ভাগ করা ছিল। জোন ২ -এ ফোটোগ্রাফি প্রদর্শনীর ঠিক বাম পাশে কাপড়ের দিকে ঘেঁষে আমি আর আমার কিছু বন্ধু বসে গান গাচ্ছিলাম ও আড্ডা দিচ্ছিলাম।
এক ফ্রেন্ড ডাকলে আমি জুতো ছাড়া খালি পায়ে এগিয়ে যাই। ফিরে আসার সময় সেখান দিয়ে যাওয়া একটা তারে আমার পা পড়ে। আমি অপ্রস্তুতভাবে শক খাই। কাছাকাছি এক ছেলে ভলান্টিয়ারকে ডেকে বললাম, এটা মেরামত করতে হবে, না হলে একটা অ্যাক্সিডেন্ট হয়ে যেতে পারে। সে বলল, ‘জি ভাইয়া, আমি টেপ নিয়ে আসতেসি।’ এটা শুক্রবার ১টার দিকের ঘটনা। কিন্তু সে আর ওই তার ঠিক করেনি।
ওই শিক্ষার্থী আর জানান, এরপর আমরা বাইরে খেতে চলে যাই। জুমার নামাজের পর এসে তারটি সামান্য সরিয়ে আবার বসি। আমাদের পাশে কিছু বড় ভাই-আপুদের গ্রুপ বসেছিল। তাদের একজন ভাইয়া হাতে শক খেয়ে একজন বড় ভাইয়াকে ডেকে আনেন, তিনি সবুজ জামা পরিহিত ছিলেন, সম্ভবত ভলান্টিয়ারদের সিনিয়র কেউ হবেন। তার পেছনে কয়েকজন ছেলে ও মেয়ে ভলান্টিয়ার ঘুরছিল তিনি এসে বললেন, এখনই ঠিক করিয়ে দেবো। তিনি ও তার ভলান্টিয়ারদের নিয়ে মঞ্চের পেছনে চলে গেলেন। আর ফিরে এসে ঠিক করালেন না।
মিনারের গান শোনার জন্য আমাদের পাশের বড় ভাইয়া ও আপুরা উঠে গেলেন। আমরা বসে ছিলাম। তখন সময়টা সম্ভবত ২টা ৪০ কি ৫০ মিনিট বাজে। তাদের যাওয়ার পর দুজন অভিভাবক ও ছোট ছোট দুটো শিশু নিয়ে আসেন। শিশুদের বয়স আনুমানিক পাঁচ থেকে ছয় বছর হবে। আমি আবার উঠে জোন-২ এর একজন মেয়ে ভলান্টিয়ারকে বললাম, আমাদের সামনের বৈদ্যুতিক তারের কথা। সেও গেল, তখন সময় ৩টা ৩০ মিনিটের মতো। আমাদের সামনাসামনি আবরার বসেছিল। আমাদের খেয়াল ছিল না। হঠাৎ আমরা উঠতে গিয়ে দেখি আবরার কেঁপে কেঁপে শুয়ে পড়ল। আমি দেখলাম তার হাত ওই বৈদ্যুতিক তারে। যথাসম্ভব চিৎকার করলাম ও আশপাশে কাঠ খোঁজার চেষ্টা করলাম। পেলাম না কিছুই। এক ছেলে কাঠ নিতে দৌড় দিলো। ওর নাম জাওয়াদ।
আমি ভলান্টিয়ারদের ওখানে গিয়ে দেখলাম, সবগুলো মেয়ে ও একটি ছেলে। বললাম, একজন শক খেয়েছে। পাত্তাই দিলো না। এরপর আমার এক বান্ধবী ‘ইচ্ছা’ দৌড়ে এসে যখন বলল, তখন তারা তাকাল ও এলো। এসে দেখি এক বড় ভাইয়া কাঠ দিয়ে তার হাত সরিয়ে ফেলেছে। আর এদিকে এক বড় ভাইয়া বৈদ্যুতিক তারটা সরিয়ে ফেলল। এরপর আমরা তাকে নিরাপদে তুলে সরিয়ে নিলাম। এরপর উনাকে তুলে নিয়ে এলাম আমি আমার বন্ধু ও আগের বড় ভাইয়া দুটো। এক ভলান্টিয়ার আমাদের পথ দেখিয়ে দিলো। আমরা তাকে জোন-২ এর চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাই। সেখান থেকে তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নেয়া হয়।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ভলান্টিয়াররা শুরুতেই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিলে এমন দুর্ঘটনা হতো না।


আরো সংবাদ



premium cement
আজও স্বর্ণের দাম ভরিতে ৬৩০ টাকা কমেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২৮ এপ্রিল খুলে দেয়ার প্রস্তুতি, ক্লাস চলবে শনিবারও মিরসরাইয়ে জুস খাইয়ে অজ্ঞান করে লুট, মূল হোতা গ্রেফতার বৃষ্টি কামনায় ঈশ্বরগঞ্জে জামায়াতে ইসলামীর ইসতিসকার নামাজ আদায় কুবিতে আল্টিমেটামের পর ভিসির কার্যালয়ে তালা ঝুলাল শিক্ষক সমিতি সাজেকে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ শ্রমিক নিহতের খবরে ঈশ্বরগঞ্জে শোক দুর্যোগে এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু কেন বাংলাদেশে? জবিতে ভর্তি পরীক্ষায় আসন বেড়েছে ৫০টি বিএনপি ক্ষমতায় আসতে মরিয়া হয়ে উঠেছে : ওবায়দুল কাদের মাটির নিচে পাওয়া গ্রেনেড মাইন মর্টার শেল নিষ্ক্রিয় করল সেনাবাহিনী অনির্দিষ্টকালের জন্য অনলাইন ক্লাসে যাচ্ছে জবি, বন্ধ থাকবে পরীক্ষা

সকল