২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

উদ্বেগে কুতুবদিয়ার দেড় লাখ মানুষ

কুতুবদিয়ায় ভাঙনকবলিত এলাকায় স্বেচ্ছাশ্রমে বেড়িবাঁধ মেরামত কাজ : নয়া দিগন্ত -

কক্সবাজারের কুতুবদিয়া দ্বীপ দিন দিন ছোট হয়ে আসছে। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পর থেকে দ্বীপের বিশাল অংশ সমুদ্রে বিলীন হয়ে গেছে। অনেকের বসতভিটা সাগরে বিলীন হওয়ায় অন্যত্র বসবাস করতে বাধ্য হয়েছে। ভাঙা বেড়িবাঁধ মেরামত না করায় ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে দ্বীপের দেড় লাখ মানুষ। ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয় ১৫টি গ্রাম। এমনই অবস্থায় নিজেদের বসতভিটা রক্ষায় স্বেচ্ছায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ করছে স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্তরা। আর এ কাজে সহযোগিতা করছে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা।
উত্তর, পশ্চিম ও দক্ষিণ দিকে বঙ্গোপসাগর আর পূর্বে কুতুবদিয়া চ্যানেল। মধ্যখানে ২১৫.৮০ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে সাগরের বুকে ভেসে থাকা দ্বীপ কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলা। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে কুতুবদিয়া প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এলাকা। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পর থেকে দ্বীপের বিশাল অংশ সমুদ্রে বিলীন হতে থাকে। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস থেকে গত ২৮ বছরে কুতুবদিয়ার বিরাট অংশ সাগর বক্ষে বিলীন হয়ে গেছে। দ্বীপের এক তৃতীয়াংশ বেড়িবাঁধ অরক্ষিত। সমুদ্রগ্রাসে অনেকের বসতভিটা বিলীন হওয়ায় অন্যত্রে বসবাস করতে বাধ্য হয়েছে। স্থায়ী টেকসই বেড়িবাঁধ না হওয়ায় সমুদ্রগ্রাসে কুতুবদিয়া দ্বীপ দিন দিন ছোট হয়ে আসছে। সর্বশেষ বেড়িবাঁধ মেরামতের টেন্ডার হয়েছিল ২০১৬ সালে। ২০১৮ সালে কাজ শুরু করলেও বেড়িবাঁধ মেরামত আর হয়নি। ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে প্রতিদিন জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয় ১৫টি গ্রাম। প্রতিদিন জোয়ারের পানিতে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে জনবসতি। শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজে যেতে ব্যাঘাত ঘটছে। চাষাবাদ করতে পারছে না। কুতুবদিয়ার মানুষ অনেকটা দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
কক্সবাজার জেলার পাউবোর ৭১ পোল্ডারের কুতুবদিয়া উপকূলের ৪০ কিলোমিটার বাঁধের মধ্যে ১৪ কিলোমিটার বাঁধ সম্পূর্ণ বিলীন। এর মধ্যে আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের জেলেপাড়া, আনিচের ডেইল, পশ্চিম তাবলরচর, কাহার পাড়া, তেলিপাড়া, হকদারপাড়া, জেলেপাড়া ও বড়ঘোপ মুরালিয়া অন্যতম। এসব বাঁধ ভাঙা এলাকা দিয়ে কয়েক বছর ধরে জোয়ার ভাটা বসেছে।
পাউবো কর্তৃপক্ষ কয়েক বছর ধরে ভাঙন বাঁধ মেরামত করার কথা বলে উপকূলের মানুষকে ধোঁকা দিয়ে আসছে। চলতি বর্ষা মওসুমেও একই অবস্থা। পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের প্রতি আস্থা হারিয়ে বড়ঘোপ ও আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের লোকজন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উদ্যোগে স্বেচ্ছাশ্রমে ভাঙনকবলিত এলাকায় জোয়ার ঠেকাতে বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু করে। বড়ঘোপ আর আলী আকবর ডেইল ইউপির চেয়ারম্যানরা।
এমনই অবস্থায় নিজেদের বসতভিটা রক্ষায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কোস্ট ট্রাস্টের সহযোগিতায় স্বেচ্ছায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ করছে স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্তরা। ভাঙা বেড়িবাঁধ মেরামত না করায় ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে দ্বীপের দেড় লাখ মানুষ। এ অবস্থায় স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণে প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
জোয়ারের পানিতে দেড় হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেড় হাজার একর চাষাবাদ, হাঁস-মুরগিসহ পুকুরের মৎস্য ভেসে গেছে। একটি বেসরকারি সংস্থার সহযোগিতায় স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে বলে জানান এ জনপ্রতিনিধি।
ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে স্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে চাষাবাদসহ বসতঘর প্লাবিত হচ্ছে। এমনই অবস্থায় একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার সহযোগিতায় স্বেচ্ছায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে বলে জানালেন উপজেলা চেয়ারম্যান ফরিদুল ইসলাম।
সামুদ্রিক উচ্চ জোয়ারের ফলে ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি প্রবেশ করার সত্যতা স্বীকার করে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তনয় কুমার ত্রিপুরা জানান, অতি সম্প্রতি ঝুঁকিপুর্ণ স্থানে জোয়ারের পানি ঠেকাতে কাজ করা হবে। বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ চলমান থাকলেও একটু ধীরগতিতে হচ্ছে।
টেকসই বেড়িবাঁধের অভাবে টিকে থাকা নিয়ে উদ্বিগ্ন দ্বীপের দেড় লাখ মানুষ। কুতুবদিয়ার দেড় লাখ মানুষের স্বাভাবিক বসবাস ও জানমাল রক্ষার্থে টেকসই বেড়িবাঁধ পুনর্নির্মাণ করা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। অন্যথায় ইতিহাস থেকে এই দ্বীপটি হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে অনেকে।
গত আগস্ট মাসে আলী আকবর ডেইল ও বড়ঘোপ ইউনিয়নের প্রায় তিন কিলোমিটার ভাঙন এলাকায় জোয়ার ঠেকানোর মতো বাঁধ মেরামত কাজ সম্পন্ন করে। সৎ ইচ্ছা থাকলে কি না পারে! তা দেখিয়ে দিলেন আলী আকবর ডেইল ইউপির চেয়ারম্যান নুরুচ্ছাফা ও বড়ঘোপ ইউপির চেয়ারম্যান আ ন ম শহীদ উদ্দিন ছোটন।
কুতুবদিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন লালা জানান, সম্প্রতি আলী আকবর ডেইল ইউনিয়ন পরিষদের অর্থায়নে এবং এলাকাবাসীর স্বেচ্ছাশ্রমে গত আগস্ট মাসে আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের কাহারপাড়া, তেলিপাড়া, হকদারপাড়া, পশ্চিম তারলচর ভাঙন এলাকায় জিও ব্যাগে বালু ভর্তি ও মাটি ভর্তি বস্তা দিয়ে তিন শ’ মিটার বাঁধ মেরামত কাজ সম্পন্ন করে। গত অমাবস্যা ও পূর্ণিমার জোয়ার ঠেকানো সম্ভব হয়েছে।
গত এক সপ্তাহ পূর্বে আলী আকবর ডেইল ইউপির চেয়ারম্যান ও ইউপির সদস্যদের নিজস্ব অর্থায়নে কুমিরারছড়া জেলেপাড়ার ১০ চেইন সম্পূর্ণ বিলীন এলাকায় বাঁশের বেড়া, খুঁটি ও বালু ভর্তি বস্তা দিয়ে জোয়ার ঠেকানো বাঁধ মেরামত করেছে। চলতি অমাবস্যার জোয়ার ঠেকাতে সক্ষম হয়েছে বলে জানান স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নুরুচ্ছাফা।
তিনি আরো জানান, তিন শ’ মিটার বাঁধ মেরামত করতে পরিষদের ফান্ড শেষ হয়ে যায়। কুমিরারছড়া জেলেপাড়া এলাকায় ১০ চেইন বাঁধ মেরামতে প্রায় ১২ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। বেশির ভাগ অর্থ চেয়ারম্যান নিজে এবং পরিষদের সদস্যদের থেকে সংগ্রহ করে ব্যয় করা হয়েছে।
এ দিকে বড়ঘোপ মুরালিয়া ও কুমিরারছড়া খাল এলাকা পর্যন্ত ১৭ চেইন জোয়ার ঠেকানো বেড়িবাঁধ মেরামত কাজ সম্পন্ন করে বড়ঘোপ ইউপির চেয়ারম্যান ছোটন। আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের কুমিরারছড়া জেলেপাড়া এলাকায় ১০ চেইন বেড়িবাঁধ মেরামত কাজ সম্পন্ন করে আলী আকবর ডেইল ইউপির চেয়ারম্যান নুরুচ্ছাফা। জোয়ার ঠেকানো বাঁধ দেয়ায় গত অমাবস্যার ও পূর্ণিমার জোয়ারে ওই এলাকার জনবসতির ঘর ভিটি ও শত শত একর ফসলি জমি জোয়ারের নোনা জলে প্লাবিত হয়নি। আগামী আশি^ন কার্তিক মাসের জোয়ার ঠেকাতে পারলে অনাবাদি জমিতে চলতি আমন চাষ, শুষ্ক মওসুমে বোরো চাষ ও শাক সবজির চাষ হবে বলে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আলহাজ ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী জানান।

 


আরো সংবাদ



premium cement
অর্থনীতিতে চুরি : ব্যাংকে ডাকাতি পাকিস্তানে আফগান তালেবান আলেম নিহত যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য না করলে এ বছরই রাশিয়ার কাছে হারতে পারে ইউক্রেন : সিআইএ প্রধান রাশিয়ার সামরিক শিল্পক্ষেত্রে প্রধান যোগানদার চীন : ব্লিংকন ইরাকে সামরিক ঘাঁটিতে 'বিকট বিস্ফোরণ' শেখ হাসিনা সব প্রতিবন্ধকতা উপড়ে ফেলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী গাজায় ইসরাইলি গণহত্যা বন্ধে বিশ্ববাসীকে সোচ্চার সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তির মৃত্যু নীলফামারীতে তিন হাজার ১৭০ চাষির মাঝে বিনামূল্যে কৃষি উপকরণ বিতরণ কারাগারে কয়েদির মৃত্যু উজ্জ্বল হত্যার বিচার দাবিতে সরিষাবাড়ীতে মানববন্ধন

সকল