২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

আর কোনো ঋণ অবলোপন করতে পারবে না ব্যাংক

অবলোপন পাওয়া গ্রাহকের সাথে নতুন ব্যবসাও করা যাবে না
-

ঋণ অবলোপনের সুযোগ পাওয়া কোনো গ্রাহকের সাথে ব্যবসা করবে না ব্যাংক। নতুন করে আর কোনো ঋণ অবলোপনও করা যাবে না। এ জন্য ব্যাংকগুলোকে দেয়া হয়েছে বিশেষ নির্দেশনা। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ব্যাংকের যে সব গ্রাহকের ঋণ অবলোপন বা মওকুফ করে দেয়া হয়েছে তাদের সাথে ভবিষ্যতে আর কোনো ব্যবসা করা যাবে না। দেয়া যাবে না কোনো ধরনের ঋণও। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি চার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীর সাথে অর্থমন্ত্রীর এক সভার সূত্র ধরে এই নিদের্শনা দেয়া হয়েছে। সেই সভায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ‘নতুন করে আর কোনো ঋণ অবলোপন করা যাবে না। একবার যে গ্রাহকের ঋণ অবলোপন করা হয় তার সাথে আর ব্যাংকের ব্যবসা করা সমীচীন নয়। এ ছাড়া ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে গ্রহীতার ব্যক্তিগত জামানত বা গ্যারান্টি রাখারও পরামর্শ দেন। এর আলোকেই ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের সিইও ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) সাথে বৈঠকে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, খেলাপিঋণ বৃদ্ধির জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। এজন্য নিয়োগ দিতে হবে ভালো ল ফার্ম। অর্থমন্ত্রী প্রশ্ন করেন, সঠিক পদ্ধতিতে ঋণ অবলোপন করা হচ্ছে কি না। ঋণ অবলোপনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। ঋণ খেলাপি সৃষ্টির পেছনে ব্যাংকের অদক্ষ ব্যবস্থাপনা অনেকাংশে দায়ী উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, এ ক্ষেত্রে গ্রাহককে একতরফা দায়ী করা যাবে না, ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে যথোপযুক্ত জামানত গ্রাহক বন্ধক দিচ্ছে কি না তা বিবেচনা করা প্রয়োজন। কোনো ব্যাংকেরই উপযুক্ত জামানত ছাড়া ঋণ প্রদান করা উচিত নয়। কারণ, শতকরা ৭০ থেকে ৮০ ভাগ ঋণ খেলাপি হয়েছে ভুয়া দলিল দাখিল করে ঋণ গ্রহণের সুযোগ পাওয়ায়। সভার রেকর্ড অব নোটিশ থেকে এ সব তথ্য জানা গেছে।
সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল বলেন, ঋণ খেলাপি না হওয়ার জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রয়োজনীয় বিধিবিধান জারি করা হয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃক ওই বিধিবিধানগুলো সঠিকভাবে পরিপালন না করায় ঋণ খেলাপি বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোতে ঝুঁকি নির্ণয় পদ্ধতি, নীতিমালা, কার্যক্রম সবই বিদ্যমান থাকলেও বেশির ভাগ বাণিজ্যিক ব্যাংক সেগুলো পরিপালন করছে না। তিনি ঋণপত্র (এলসি) খোলার ক্ষেত্রে অতি মূল্যায়নের মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচার হচ্ছে কি না সেগুলো যথাযথভাবে যাচাই করার জন্য ব্যাংকগুলোকে পরামর্শ প্রদান করেন।
বৈঠকে অর্থমন্ত্রীর পক্ষ থেকে চার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংককে ৯ দফা নির্দেশনা প্রদান করা হয়। এই সব নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে, সব ব্যাংককে শ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ হ্রাস করতে হবে। নতুন করে আর কোনো ঋণ যাতে শ্রেণিকৃত না হয় সে ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ব্যাংকগুলোর আর্থিক বিবরণী অভিন্ন আকারে প্রস্তুত করতে হবে। বিশেষ করে ব্যালেন্স শিটে আর্নি অ্যাসেট, নন-আর্নি অ্যাসেট, গভর্মেন্ট লাইবেলিটি, নন-গভর্মেন্ট লাইবেলিটি ইত্যাদি বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে। ব্যাংকগুলোর পরিচালনাগত মুনাফা বৃদ্ধি করতে হবে। অটোমেশনের প্রতি গুরুত্বারোপসহ কাগজবিহীন লেনদেন (পেপারলেস ট্রানজেকশন) চালু করতে হবে, যাতে সহজে ও দ্রুত গতিতে আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করা যায়। ব্যাংকগুলোতে প্রণোদনা ব্যবস্থা চালু করতে হবে এবং ভালো গ্রাহককে উপযুক্তভাবে পুরস্কৃত করতে হবে। একইভাবে শাস্তির বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। গ্রাহক কিংবা ব্যাংক কর্মকর্তা যেই অপকর্ম করুক তাকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। এ ছাড়া নতুন করে আর কোনো ঋণ অবলোপন করা যাবে না।

 


আরো সংবাদ



premium cement