২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নিয়মবহির্ভূত সুযোগে দুর্বল হচ্ছে ব্যাংকিং খাত স্বচ্ছ আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে অন্ধকারে সাধারণ গ্রাহক

-

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়মবহির্ভূত সুযোগে দুর্বল হয়ে পড়ছে দেশের ব্যাংকিং খাত। বছরের পর বছর প্রায় দেড় ডজন ব্যাংককে বাকিতে প্রভিশন রাখার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। ফলে ব্যাংকের কৃত্রিম মুনাফা বাড়ছে। আর এ মুনাফার ওপর সরকার সাড়ে ৩৭ শতাংশ ট্যাক্স নিয়ে যাচ্ছে। একই সাথে বের হয়ে যাচ্ছে ডিভিডেন্ড আকারে ব্যাংকের অর্থ। অপর দিকে ব্যাংকের প্রকৃত মূলধনও সংরক্ষণ করতে হচ্ছে না। এতে ব্যাংকের ভিত্তি যেমন দুর্বল হয়ে পড়ছে, তেমনি ব্যাংকের স্বচ্ছ আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে অন্ধকারে থাকছে সাধারণ গ্রাহক। ফলে আমানত রেখে ঝুঁকির মুখে পড়ছেন তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, খেলাপি ঋণের ধরন অনুযায়ী ব্যাংকগুলোকে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। যে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ যত বেশি সেই ব্যাংকের প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয় বেশি হারে। আর প্রভিশন ও সংরক্ষণ করা হয় ব্যাংকের মুনাফা থেকে। প্রয়োজনীয় প্রভিশন ও সংরক্ষণ করতে না পারলে এক দিকে ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দেখা দেয়, অপর দিকে বাড়তি প্রভিশন সংরক্ষণ করতে গিয়ে মুনাফা স্ফীত হয় না। মুনাফা কমে গেলে সরকারের ট্যাক্স দিতে হয় না। সাধারণের ডিভিডেন্ডও দিতে পারে না। ব্যাংকের ক্যামেলস রেটিং (আর্থিক মানদণ্ড) খারাপ হওয়ার পাশাপাশি মার্কেট শেয়ারের মূল্যও কমে যায়। সাধারণ গ্রাহক সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের প্রকৃত আর্থিক অবস্থা জানতে পারলে ওই ব্যাংকে আমানত রাখতেন না। অপর দিকে ব্যাংকের ব্যালেন্সশিট খারাপ হলে বৈদেশিক বাণিজ্যেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ত। মূলকথা, ব্যাংকের প্রকৃত আর্থিক অবস্থা জানতে পারলে সাধারণ গ্রাহক সচেতন হতে পারত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, কয়েক বছর ধরে ব্যাংকগুলোর চাপে হোক আর প্রকৃত চিত্র আড়াল করার উদ্দেশ্যেই হোক, প্রায় দেড় ডজন ব্যাংককে প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হচ্ছে না। তাদের বাকিতে প্রভিশন সংরক্ষণের সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে। যেমনÑ একটি ব্যাংকের ৩০০ কোটি টাকার প্রভিশন ঘাটতি হলে প্রতি বছর ১০০ কোটি টাকা করে তিন বছরের জন্য বাকিতে প্রভিশন সংরক্ষণের সুযোগ দেয়া হচ্ছে। এতে পরের বছরের নতুন করে ৩০০ কোটি টাকা ঘাটতির সাথে পুরনো ঘাটতির ১০০ কোটি টাকা সংরক্ষণের সুযোগ দেয়া হচ্ছে। ওই কর্মকর্তার মতে, এ ধরনের অনৈতিক সুযোগ আন্তর্জাতিক হিসাব বিজ্ঞান নীতিমালার পরিপন্থী। এ সুযোগ পাওয়ায় এক দিকে সংশ্লিষ্ট বছরে প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণ না করে মুনাফা স্ফীত আকারে দেখানো হচ্ছে। আর ওই কৃত্রিম মুনাফার ওপর সরকারের সাড়ে ৩৭ শতাংশ ট্যাক্স পরিশোধ করতে হচ্ছে। একই সাথে বাকি মুনাফার একটি বড় অংশ নগদে লভ্যাংশ দেয়ার মাধ্যমে শেয়ারহোল্ডারদের পকেটে চলে যাচ্ছে। এতে ব্যাংকের মূলধন লভ্যাংশ আকারে নানা উপায়ে বের হয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের আর্থিক ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ছে।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যেসব ব্যাংককে বাকিতে প্রভিশন সংরক্ষণের সুযোগ দেয়া হয়েছে, তাদের বেশির ভাগই পরের বছর প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণ করতে পারেনি। বরং বকেয়া প্রভিশনের সাথে নতুন করে প্রভিশন ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এভাবে কয়েক বছর সুযোগ দেয়ায় কোনো কোনো ব্যাংক আর প্রভিশনই সংরক্ষণ করতে পারবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে এক দিকে সাধারণ গ্রাহক অন্ধকারেই থেকে যাবে। তাদের আমানত রাখার বিষয়টি বাচবিছার করার কোনো সুযোগ পাবেন না। এক পর্যায়ে ফার্মার্স ব্যাংকের মতো প্রতারিত হবেন তারা। কিন্তু প্রকৃত চিত্র বের হওয়ার সুযোগ করে দিলে দেশের আর্থিক খাত যেমন রক্ষা পাবে, তেমনি সাধারণ গ্রাহকের আমানতও ঝুঁকিমুক্ত থাকবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

 


আরো সংবাদ



premium cement