১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বন্দরের মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নে কমিশনের তাগিদ

ভারতীয় ঋণে পায়রায় মাল্টিপারপাস টার্মিনাল

৪২৭ কোটি টাকায় ৫ কিমি সড়ক নির্মাণ ; প্রকল্প ব্যয় ৫ হাজার ২১৯ কোটি টাকা ; সাইলো নির্মাণেই যাচ্ছে ৪০০ কোটি টাকা
-

পায়রা সমুদ্রবন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং আরো দক্ষ করতে মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ভারতীয় তৃতীয় এলওসিতে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। ২০১৯ সালেই স্বল্প পরিসরে পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দরের কার্যক্রম চালু করতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের এই পদক্ষেপ। এই টার্মিনালের পাঁচ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪২৭ কোটি টাকা। আর প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার ২১৯ কোটি টাকা। তবে পরিকল্পনা কমিশন এই ধরনের ভিন্ন ভিন্ন প্রকল্প না করে আগে মাস্টারপ্ল্যান করার জন্য সুপারিশ করেছে বলে পরিকল্পনা কমিশন ও প্রকল্প প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে।
পায়রাবন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্র ও সংশ্লিষ্ট প্রকল্প প্রস্তাবনা অনুযায়ী, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দরকে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি এই তিন ভাগে উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। স্বল্প মেয়াদি পরিকল্পনার মধ্যে আছে বহির্নোঙ্গরে ক্লিংকার, সার ও অন্যান্য পণ্যবাহী জাহাজ আনা-নেয়ার মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরে পরিবহন করা। আর মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনার মধ্যে ১০ মিটার গভীরতার চ্যানেল ড্রেজিং, একটি কনটেইনার, একটি বাল্ক ও একটি মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণ। কারণ আগামী ২০২৩ সালের মধ্যে ১৬ মিটার ড্রাফটসহ বন্দরটি পরিপূর্ণভাবে পরিচালনা করার পরিকল্পনা রয়েছে। অন্যতম চ্যালেঞ্জ ১২০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে একটি মাল্টিপারপাস টার্মিনাল। টার্মিনালের মাধ্যমে পাথর, বালু, কনটেইনার থেকে শুরু করে সব ধরনের পণ্য খালাস করা হবে।
জানা গেছে, টার্মিনালে পণ্য খালাসের সুবিধায় একটি মোবাইল হারবার ক্রেন, ১৮টি ট্রাক্টর, ৩৬টি ট্রেইলর, পাঁচটি ফর্ক লিফট ও ছয়টি ছোট ইয়ার্ড ক্রেন ক্রয় করা হবে। ১২০০ মিটার দীর্ঘ মাল্টিপারপাস টার্মিনালে মোট ব্যয় হবে ৫ হাজার ২১৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে ভারতীয় ঋণ ৪ হাজার ৯৪৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা এবং সরকারি অর্থায়ন ২৭৩ কোটি ১২ লাখ টাকা। মূলত ভারতীয় ঋণেই নির্মিত হবে মাল্টিপারপাস টার্মিনাল। এই টার্মিনাল নির্মাণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের অবস্থান আরো উন্নত করা হবে। আমদানি-রফতানিযোগ্য পণ্য নিরাপদে বড় জাহাজ আনা-নেয়া, পণ্যগুলো প্রত্যাশিত স্তরে আপগ্রেডসহ পরিবহন ও ব্যবসায় ব্যয় কমানোই অন্যতম লক্ষ্য। এই টার্মিনাল নির্মাণের ফলে বন্দর খাতে বাংলাদেশের অবস্থান সারা বিশ্বে আরো উন্নত হবে। চলতি অর্থবছর থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর মেয়াদেই এই টার্মিনাল নির্মাণ করবে পায়রাবন্দর কর্তৃপক্ষ।
প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, প্রকল্পের আওতায় ১২০০ মিটার প্রয়োজনীয় সুবিধাসহ ব্যাক-আপ জেটি নির্মাণ করা হবে। ৪.৮০ লাখ বর্গমিটার ব্যাক-আপ ইয়ার্ড নির্মাণ, ১০ কিলোমিটার স্লো প্রটেকশন কাজ, ৩৩ কেভি প্রধান বৈদ্যুতিক লাইন নির্মাণ, ১০ কিলোমিটার অবটিক্যাল ফাইবার লাইন, বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ প্ল্যান্ট, গ্যান্ট্রি ক্রেনের জন্য ২.৪ কিলোমিটার রেলাইন নির্মাণ, ৫ কিলোমিটার মহাসড়ক, মাঝারি সেতু নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পে প্রতি ঘনমিটার ড্রেজিং ৩৯০ টাকা, নাব্যতা সংরক্ষণে ১০০ কোটি টাকা, ৪০০ কোটি টাকায় সাইলো নির্মাণ, ১২ কোটি টাকায় ওয়াটার রিজার্খার, সাড়ে ১৭ কোটি টাকায় মেডিক্যাল সেন্টার করা হবে।
প্রকল্পটি জিওবি অর্থায়নে বাস্তবায়নের সুপারিশ করে পরিকল্পনা কমিশন বলছে, পায়রাবন্দরের জন্য মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন কাজ প্রক্রিয়াধীন আছে। মাস্টারপ্ল্যানে প্রণয়নের আগে প্রস্তাবিত প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। বলা হয়, গত ২০১৮ সালের ৮ জুলাই পিইসিতে জিওবি অর্থায়নে পায়রাবন্দরে প্রথম টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তাব অনুমোদন হয়। আবার এখন একটি মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তাব করা হচ্ছে। দুটিই পাশাপাশি অবস্থিত হবে। একই রাস্তা দ্বারা মূল মহাসড়কে যুক্ত হবে। তাই প্রকল্পটিও জিওবিতে বাস্তবায়ন করা উচিত হবে। তবে এই মুহূর্তে দুটি টার্মিনাল একই সাথে ব্যবহার করা হবে কি না সেটিও ভাবতে হবে। অন্যদিকে ১০০ মিটারের বেশি দৈর্ঘ্যরে সেতু নির্মাণ ও নদীর তীর সংরক্ষণের ক্ষেত্রে হাইড্রোলজিক্যাল, মরফোলজিক্যাল ও নেভিগেশনাল সমীক্ষার সুপারিশ করেছে কমিশন।

 


আরো সংবাদ



premium cement