১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ষষ্ঠ শ্রেণীতে ১৪ পাঠ্যবই!

-

ষষ্ঠ শ্রেণীতে সরকারিভাবেই বর্তমানে পাঠ্যবইয়ের সংখ্যা ১৪টি। এর বাইরে বিভিন্ন স্কুল থেকে আলাদা করে বাংলা ও ইংরেজি গ্রামার বই পাঠ্য করা হয়। এ ছাড়া সব বিষয়ে শিক্ষার্থীদের কিনতে হচ্ছে গাইড। সব মিলিয়ে দুই ডজনেরও ওপর বিশাল বইয়ের বোঝা ষষ্ঠ শ্রেণীর শিশু শিক্ষার্থীদের মাথায়। বইয়ে বোঝা আর পড়ার চাপে পিষ্ট হচ্ছে শিশুরা। এত পড়া নিয়ে অতিষ্ট শিক্ষক আর অভিভাবকেরাও। অনেক শিক্ষক সরকারিভাবে এত বই চাপিয়ে দেয়ার তীব্র বিরোধিতা করে বলেন, বেশি বইয়ের কারণে আসলে কোনো বই-ই তাদের ভালো করে পড়ানো যাচ্ছে না। বেশি শেখাতে গিয়ে উল্টো ক্ষতিই হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
সরকারিভাবে তথা জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তব বোর্ড (এনসিটিবি) কর্তৃক ষষ্ঠ শ্রেণীতে ১৫টি পাঠ্যবই রয়েছে। এগুলো হলো বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়, ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা, বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি, ইংলিশ গ্রামার অ্যান্ড কম্পোজিশন, আনন্দ পাঠ, চারু ও কারুকলা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা, শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য, কৃষি ও গার্হস্থ্য বিজ্ঞান।
এর মধ্যে কৃষি অথবা গার্হস্থ্য বিজ্ঞানের মধ্যে যেকোনো একটি নেয়ার সুযোগ আছে। সব মিলিয়ে সরকারিভাবে ১৪টি পাঠ্যবই পড়তে হচ্ছে ষষ্ঠ শ্রেণীর শিশুদের। এর মধ্যে কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা, শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য এবং চারু ও কারুকলা বিষয়ে পরীক্ষা নেয়ার নিয়ম নেই। শুধু ক্লাসে পড়াতে হবে। বাকি ১০টি বিষয়ে পরীক্ষায় কমপক্ষে সাত থেকে প্রায় আট শ’ নম্বরের নির্ধারণ করা হয়েছে স্কুল ভেদে।
যেমন রাজধানীর কাকরাইলে অবস্থিত একটি স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীর অভিভাবক ইসরাত ফেরদৌস জানান, ১৪টি বিষয়ের মধ্যে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সমাজ, ধর্ম, বিজ্ঞান ও কৃষি বিষয়ে ১০০ করে মোট ৭০০ নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে ৫০, চারুকারুতে ২০ নির্ধারণ করা হয়েছে স্কুল থেকে। এ ছাড়া আরো দুই-একটি বিষয়ে পরে স্কুল থেকে নম্বর জানানো হবে বলে জানান তিনি।
অনেক স্কুলে ৭০০ থেকে ৭৫০ নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে সব স্কুলেই বাংলা, বাংলা গ্রামার ও আনন্দ পাঠ তিনটি বই মিলিয়ে ১০০ নম্বর নির্ধারিত। এভাবে ইংরেজি এবং ইংরেজি গ্রামার মিলিয়ে ১০০ নম্বর নির্ধারিত।
ইসরাত ফেরদৌস জানান, সরকারিভাবে দুইটি গ্রামার বইতো রয়েছেই। এর বাইরে স্কুল থেকে আরো দুইটি গ্রামার বই কিনতে বলা হয়েছে বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ে। এ ছাড়া সব বইয়ের গাইড কেনা হয়েছে। তিনি জানান, একটি কোম্পানির গাইড কিনতে বলা হয় কিন্তু তারা আলাদা করে কোনো একটি বা দুইটি বিষয়ে গাইড বিক্রি করে না। সব বিষয় মিলিয়ে পুরো সেট কিনতে বাধ্য করা হয়। ফলে যে বিষয়ে দরকার নেই সে বিষয়েও গাইড কিনতে হয়। সব মিলিয়ে তার ছেলের জন্য দুই ডজনের ওপর বই পড়তে হচ্ছে বলে জানান তিনি।
অনেক অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তাদের সময় ষষ্ঠ শ্রেণীতে সরকারিভাবে মাত্র বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সমাজ, বিজ্ঞান, ধর্ম এ ছয়টি বই পাঠ্য ছিল। এর বাইরে শিশতোষ একটি বাংলা গল্পের বই পড়ানো হতো। অন্য বইতো দূরের কথা বাংলা ও ইংরেজি গ্রামার নামেও কোনো বই পড়ানো হতো না ষষ্ঠ শ্রেণীতে। সপ্তম শ্রেণী থেকে গ্রামার পড়ানো শুরু হতো।
আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের মুগদা দিবা শাখার সাবেক সহকারী প্রধান শিক্ষক ও বর্তমানে কেরানীগঞ্জে অবস্থিত নুরুল আলম স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রিন্সিপাল দেওয়ান বাকিউল্লাহ নয়া দিগন্তকে বলেন, এত বেশি বই পাঠ্য করায় মূল বিষয় পড়ালেখায় ক্ষতি হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এত ছোট শিশুদের এত বেশি পড়ালেখার চাপে রাখার দরকার ছিল না। এত বেশি বই হলে কোনোটাই ভালো করে শেখা হয় না। অল্প অল্প করে প্রতি ক্লাসে বাড়ানো যেত কিন্তু তা করা হয়নি। তৃতীয় শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত শিশুদের সরকারিভাবে ছয়টি বই পাঠ্য রয়েছে। কিন্তু পঞ্চম শ্রেণী থেকে ষষ্ঠ শ্রেণীতে এক ধাপে দ্বিগুণেরও বেশি বই পাঠ্য করা হয়েছে। এটা ঠিক হয়নি। একবারে অনেক বেশি চাপে ফেলে দেয়া হয়েছে শিশুদের। শুধু শিশুদের নয়, শিক্ষকদেরও এতে অনেক বেশি বিড়ম্বনার মুখে পড়তে হচ্ছে। বাড়তি অনেক ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে।
দেওয়ান বাকিউল্লাহ জানান, তিনটি বিষয়ে পরীক্ষা নেয়ার নিয়ম না থাকলেও এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের বিষয়ে মূল্যায়ন পাঠাতে হয় বোর্ডে।
কয়েকজন অভিভাবক জানান, প্রতিটি বিষয়ে একটি করে হোমওয়ার্ক ও ক্লাসওয়ার্ক খাতা কিনতে হয়েছে। সব মিলিয়ে শুধু খাতাই কিনতে হয়েছে অনেককে এক হাজার টাকা থেকে ১৪ শ’ টাকার। প্রতিদিন কমপক্ষে ছয়টি বিষয়ে ক্লাস হয়। প্রতিদিন অনেক হোমওয়ার্ক থাকে। আর পড়ার তীব্র চাপ সামলাতে স্কুলের পাশাপাশি অনেক শিক্ষার্থীকে কোচিং-প্রাইভেটেও সময় কাটাতে হয়। এত বেশি বই থাকার কারণে শিশুরা পড়া ছাড়া আর কোনো কিছু করার কোনো সুযোগ পায় না। অথচ তাদের খেলাধুলা, বেড়ানোসহ প্রতিদিন আলাদা করে কিছু সময় ব্যয় করা দরকার। কিন্তু অতিরিক্ত পড়ার কারণে সে সুযোগ পায় না তারা।
ষষ্ঠ শ্রেণীতে সরকারিভাবে ১৪টি বই পাঠ্য করা বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক শাহ্ শামীম আহমেদ বলেন, এটাকে ওভার বারডেন বললেও কম বলা হবে। তার ওপর আবার স্কুল থেকে অতিরিক্ত বই ও গাইড চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে।
শাহ্ শামীম আহমেদ বলেন, কেন জানি না, গত কয়েক বছর ধরে সরকারের শিক্ষাবিষয়ক নীতি দেখে মনে হচ্ছে তারা শিশুদের সব ক্লাসেই সব কিছু পড়িয়ে ফেলতে চায়। কিন্তু এত ছোট শিশুদের এত কিছু ধারণ করার ক্ষমতা আছে কি না সেটা তারা বিবেচনায় নিচ্ছে না। কত বেশি তাদের শেখানো যায় এই প্রবণতায় পেয়ে বসেছে আমাদের নীতিনির্ধারকদের।


আরো সংবাদ



premium cement
ফরিদপুরের গণপিটুনিতে নিহত ২ নির্মাণশ্রমিক জাতিসঙ্ঘে ফিলিস্তিনি সদস্যপদ লাভের প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো তীব্র তাপপ্রবাহে বাড়ছে ডায়রিয়া হিটস্ট্রোক মাছ-ডাল-ভাতের অভাব নেই, মানুষের চাহিদা এখন মাংস : প্রধানমন্ত্রী মৌসুমের শুরুতেই আলু নিয়ে হুলস্থূল মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে মূল্যস্ফীতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না এত শক্তি প্রয়োগের বিষয়টি বুঝতে পারেনি ইসরাইল রাখাইনে তুমুল যুদ্ধ : মর্টার শেলে প্রকম্পিত সীমান্ত বিএনপির কৌশল বুঝতে চায় ব্রিটেন ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট আজ নিষেধাজ্ঞার কারণে মিয়ানমারের সাথে সম্পৃক্ততায় ঝুঁকি রয়েছে : সেনাপ্রধান

সকল