২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

লাকসামে নওয়াব ফয়জুন্নেছার বাড়িতে উন্মুক্ত জাদুঘর

অনন্য স্থাপত্য
-

উপমহাদেশের একমাত্র নারী নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানীর স্মৃতিবিজড়িত বাড়িতে উন্মুক্ত জাদুঘর নির্মাণ ও আধুনিকায়ন করে আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্রে রূপান্তরিত করা হবে। তার মালিকানাধীন ৪ একর ৫৩ শতক জায়গা রণা-বেণের দায়িত্ব পেয়েছে বাংলাদেশ প্রতœতাত্ত্বিক অধিদফতর।
নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী এ উপমহাদেশে নারী জগতের উজ্জ্বল নত্র। কুমিল্লার লাকসামের পশ্চিমগাঁও এলাকায় ১৮৩৪ সালে নওয়াব ফয়জুন্নেছা জন্মগ্রহণ করেন। নারী মুক্তি আন্দোলনের অগ্রপথিক নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী নারীদের জন্য উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন। নওয়াব ফয়জুন্নেছা ছিলেন জমিদার আহমদ আলী চৌধুরী ও আরফান্নেছা চৌধুরানীর প্রথম মেয়ে। ফয়জুন্নেছা চৌধুরানীর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিা না থাকলেও তিনি বাংলা, আরবি, ফার্সি ও সংস্কৃত ভাষায় বেশ পারদর্শী ছিলেন।
বেগম রোকেয়ার জন্মের সাত বছর আগে ১৮৭৩ সালে কুমিল্লা শহরে প্রতিষ্ঠা করেন ফয়জুন্নেছা উচ্চ ইংরেজি বালিকা বিদ্যালয়, যা বর্তমানে ফয়জুন্নেছা বালিকা উচ্চবিদ্যালয় নামে পরিচিত। ১৯০১ সালে লাকসামে ফয়জুন্নেছা ডিগ্রি কলেজ ও বিএন হাইস্কুলও প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। নারী স্বাস্থ্যসেবায় তিনি ১৮৯৩ সালে নওয়াব ফয়জুন্নেছা মহিলা ওয়ার্ড প্রতিষ্ঠা করেন, যা বর্তমানে কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালের সাথে সম্পৃক্ত।
নওয়াব ফয়জুন্নেছা ১৮৯৯ সালের দেশের ঐতিহ্যবাহী কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের নির্মাণকাজে তৎকালীন সময়ে ১০ হাজার টাকা অনুদান দেন। এ ছাড়া দাতব্য চিকিৎসাকেন্দ্র, পুল, ব্রিজ, কালভার্ট ও মসজিদ নির্মাণ করেন।
নওয়াব ফয়জুন্নেছা ছিলেন একজন সাহিত্যনুরাগী। তার রচিত ‘রূপজালাল’ কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয় ১৮৭৬ সালে। এ কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও ফয়জুন্নেছার ‘সঙ্গীতসার’ ও ‘সঙ্গীত লহরী’ নামে দু’টি কবিতার বই প্রকাশিত হয়। রানী ভিক্টোরিয়া ১৮৮৯ সালে ফয়জুন্নেছাকে ‘নওয়াব’ উপাধি দেন। ২০০৪ সালে ফয়জুন্নেছাকে যৌথভাবে একুশে পদক দেয়া হয়।
কুমিল্লার লাকসাম শহর থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পশ্চিমগাঁওয়ে ডাকাতিয়া নদীর তীর ঘেঁষে নওয়াব ফয়জুন্নেছার ঐতিহাসিক নবাব বাড়ির অবস্থান। কিন্তু ঐতিহ্যমণ্ডিত বাড়িটির যথাযথ রণা-বেণ না হওয়ায় তা বিলীনের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। ফয়জুন্নেছা চৌধুরানীর মালিকানাধীন বিশাল এ সম্পত্তির বড় অংশ একটি মহল নিজেদের দখলে নিয়েছে। অবশেষে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ফয়জুন্নেছা চৌধুরানীর মালিকানাধীন সর্বমোট ৪ একর ৫৩ শতক সম্পত্তি বাংলাদেশ প্রতœতাত্ত্বিক অধিদফতরকে সংরণের দায়িত্ব অর্পণ করে।
‘নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী’ গ্রন্থের লেখক গবেষক অ্যাডভোকেট গোলাম ফারুক বলেন, ফয়জুন্নেছা চৌধুরানীর স্মৃতি রায় দীর্ঘদিনের দাবির কারণে বাড়িটি প্রতœতাত্ত্বিক অধিদফতরের অধীনে গেছে। এতে আমরা আনন্দিত। আশা করি এটি অন্যতম পর্যটনকেন্দ্রে রূপান্তরিত হবে।
প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কুমিল্লাস্থ কার্যালয়ের আঞ্চলিক পরিচালক ড. মো: আতাউর রহমান বলেন, নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী বাংলাদেশের নারী সমাজের বিস্ময়। তিনি একজন সমাজ হিতৈষী এবং সাহিত্যিক ছিলেন। আমরা বাড়িটি সংস্কার ও আধুনিকায়নের মাধ্যমে একটি উন্মুক্ত জাদুঘর চালু করব। এজন্য আবেদন জানানো হয়েছে। অনুমতি পেলে কাজ শুরু করব।

 


আরো সংবাদ



premium cement