১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মুখে ছত্রাক সংক্রমণ : কেন হয়, কী করণীয়

মুখে ছত্রাক সংক্রমণ - ছবি : সংগৃহীত

ওরাল থ্রাশ হলো মুখের ফাঙ্গাস সংক্রমণ। ওরাল থ্রাশ ইস্ট ফাঙ্গাস, ক্যানডিডা অ্যালবিকানস দ্বারা মুখের মিউকাস মেমব্রেনে সংক্রমণ সৃষ্টি করে থাকে। যখন ফাঙ্গাস ক্যানডিডা অ্যালবিকানস মুখের মিউকাস মেমব্রেনে জমা হয় তখন ওরাল থ্রাশের সৃষ্টি হয়।

আক্রান্ত স্থান : ওরাল থ্রাশ ক্রিমি হোয়াইট বা ক্রিম রঙযুক্ত সাদা সংক্রমণ সৃষ্টি করে যা সাধারণত জিহ্বা অথবা চিবুকের অভ্যন্তরে দেখা যায়। এ ধরনের সংক্রমণ ব্যথাযুক্ত হতে পারে আবার সংক্রমণ স্থল থেকে ব্রাশ করার সময় মৃদু রক্ত বের হতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে ওরাল থ্রাশ ক্ষণস্থায়ী ক্যানডিডা সংক্রমণ। যা হোক- ক্যানডিডা সংক্রমণ তালু, মাড়ি, টনসিল এমনকি গলা পর্যন্ত বিস্তৃত লাভ করতে পারে, যা ক্যানডিডায়াসিস বা মনিলিয়াসিস নামে পরিচিত।
ওরাল থ্রাশ কাদের হয়?

নবজাতক, কৃত্রিম দাঁত ব্যবহারকারী ডায়াবেটিক রোগী, অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসাধীন রোগী, কেমোথেরাপি চিকিৎসাধীন রোগী, নেশাগ্রস্ত মানুষ, অপুষ্টিতে ভোগা দরিদ্র জনগোষ্ঠী এবং রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ত্রুটিজনিত জনগোষ্ঠী।

ওরাল থ্রাশের লক্ষণ : ওরাল থ্রাশের সাদা ক্রিম অথবা হলুদাভ দাগ মুখের অভ্যন্তরে দেখা যায়। এ সব দাগযুক্ত স্থান সামান্য একটু উঁচু থাকে। সাধারণত এ স্পটগুলোর নিচে কোনো ব্যথা থাকে না। টুথব্রাশের সময় যদি আঘাত লাগে, তা হলে এ স্পটগুলো থেকে সামান্য রক্তপাত হতে পারে। বয়স্কদের থ্রাশের কারণে মুখের জ্বালাপোড়া ভাব অনুভব হতে পারে এবং গলায়ও একই সমস্যা হতে পারে। যদিও ওরাল থ্রাশে সবাই আক্রান্ত হতে পারেন, তবুও এটি বেশি হয় শিশুদের ক্ষেত্রে। তা ছাড়া কম্প্রোমাইজড ইমমিউন সিস্টেমযুক্ত মানুষের ক্ষেত্রে দেখা যেতে পারে। যাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল তাদের ক্ষেত্রে ওরাল থ্রাশ নিরাময় করা অনেক সময় কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের মুখগহ্বরে ক্যানডিডা বিদ্যমান থাকে। যারা কৃত্রিম দাঁত পরিধান করে থাকেন, তাদের সবারই ক্যানডিডা থাকবেই। কিন্তু সাধারণত কোনো খারাপ প্রতিক্রিয়া থাকে না। ক্যানডিডা সাধারণত মুখে কোনো সমস্যা সৃষ্টি করে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না মুখের রাসায়নিক পরিবর্তনের কারণে তা অন্যান্য জীবাণুর সাথে ক্যানডিডাকে সংক্রমণে সাহায্য করে থাকে।

মুখের অভ্যন্তরে এ পরিবর্তন হতে পারে অ্যান্টিবায়োটিকের পার্শ্বপ্রতিক্রয়ার কারণে অথবা কেমোথেরাপির কারণে। তা ছাড়া ডায়াবেটিস, নেশা করলে অথবা অপুষ্টিতে এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়াও রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কমে গেলে যেকোনো রোগের কারণে অথবা বার্ধক্যের কারণে ওরাল থ্রাশ হতে পারে। যাদের কৃত্রিম দাঁত ঠিকভাবে লাগানো হয় না, তাদের ক্ষেত্রে মিউকাস মেমব্রেন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যা ক্যানডিডা সংক্রমণে সাহায্য করে ওরাল থ্রাশের সৃষ্টি করতে পারে।

ওরাল থ্রাশের চিকিৎসা : যেসব কারণে ওরাল থ্রাশের সৃষ্টি হয়েছে তা নির্ণয় করে সেটির অপসারণ করতে হবে। অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ ব্যবহার করতে হবে। নিস্টাটিন ওরাল সাসপেনশন, অস্ফোটেরিসন ও মাইকোনাজল এসব ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। তা ছাড়া খাবার ওষুধও প্রয়োজন হতে পারে। তবে ওরাল থ্রাশের চিকিৎসায় অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ ওরাল থ্রাশের চিকিৎসায় ব্যবহৃত কিছু ওষুধ অনেক সময় রোগীর দেহে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। যাদের কিডনি রোগ রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবস্থায় চিকিৎসা দিতে হবে। মুখের ফাঙ্গাল সংক্রমণে চিকিৎসা দেয়ার আগে রোগীর কোনো যৌনরোগ আছে কিনা তা-ও খতিয়ে দেখতে হবে। অহেতুক মুখস্থ ওষুধ প্রয়োগ বা সেবন না করাই উত্তম।

লেখক : ওরাল অ্যান্ড ডেন্টাল সার্জন
ফোন : ০১৮১৭৫২১৮৯৭

 


আরো সংবাদ



premium cement