২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

২০১৯ সালে গুম ৩৪: বিচারবহির্ভূত হত্যা ৩৯১ জন

-

২০১৯ সালে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে ৩৯১ জন। এর মধ্যে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ ও ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত হয়েছে ৩৭৬ জন। এই সময়ে গুমের শিকার হয়েছে ৩৪ জন; যাদের মধ্যে ৯ জনের কোনো হদিস নেই। মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’-এর বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। অধিকার গতকাল শনিবার এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জানুয়ারি মাসে ২৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ২৮ জন, মার্চে ৩২ জন, এপ্রিলে ৩১ জন, মে মাসে ৪৭ জন, জুনে ৩৮ জন, জুলাইয়ে ৩৩ জন, আগস্টে ৩৭ জন, সেপ্টেম্বরে ৩৭ জন, অক্টোবরে ৩০ জন, নভেম্বরে ১৬ জন এবং ডিসেম্বরে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে ২১ জন। এর বাইরে ছয়জন পুলিশের নির্যাতনে মারা গেছেন। এ ছাড়া আটজন গুলিতে ও একজন পুলিশের পিটুনিতে নিহত হয়েছেন।
অধিকার বলেছে, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের আরেকটি ধরন হলো গুরুত্বপূর্ণ অপরাধমূলক ঘটনাগুলোর সাথে সংশ্লিষ্ট অভিযুক্তদের ‘বন্দুকযুদ্ধ’ বা ‘ক্রসফায়ারের’ নামে হত্যা করা। ঘটনার সাথে যুক্ত মূল অপরাধীকে আড়াল করার জন্য এই ঘটনাগুলো ঘটছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে প্রকৃত সত্য জানার সুযোগ হারিয়ে যাচ্ছে। এমনকি আত্মসমর্পণের পরেও আটক ব্যক্তি ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন।
অধিকার তার প্রতিবেদনে বলেছে, গত বছর গুমের শিকার হয়েছে ৩৪ জন। এর মধ্যে লাশ পাওয়া গেছে আটজনের জীবিত ফেরত এসেছে ১৭ জন। আর এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি ৯ জনকে। অধিকার বলেছে, জানুয়ারিতে ছয়জন, ফেব্রুয়ারিতে দু’জন, মার্চে দু’জন, এপ্রিলে ছয়জন, মে মাসে চারজন, জুনে চারজন, জুলাইয়ে একজন, আগস্টে একজন, সেপ্টেম্বরে তিনজন, অক্টোবরে তিনজন এবং নভেম্বরে দু’জন গুম হয়েছেন। এর মধ্যে জানুয়ারিতে নিখোঁজ হওয়ার পর চারজন, সেপ্টেম্বরে তিনজন ও অক্টোবরে একজনের লাশ পাওয়া যায়।
অধিকার-এর প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ২০১৯ সালে রাজনৈতিক সহিংসতায় মোট ৭০ জন নিহত এবং তিন হাজার ৪৬৭ জন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া এই সময়ে আওয়ামী লীগের ২৩৪টি, বিএনপির ছয়টি এবং জাতীয় পার্টির তিনটি অভ্যন্তরীণ সঙ্ঘাতের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ সঙ্ঘাতে ৩৯ জন নিহত ও দুই হাজার ৮২৬ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। অন্য দিকে বিএনপির অভ্যন্তরীণ সঙ্ঘাতে একজন নিহত ও ৬২ জন আহত এবং জাতীয় পার্টির অভ্যন্তরীণ সঙ্ঘাতে ২৩ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
অধিকার জানায়, সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনামূলক মন্তব্য করার কারণে ২০১৯ সালে ভিন্নমতাবলম্বী ব্যক্তি ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীনদলের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতা’সহ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেছে এবং তাদের বাড়িঘরে হামলা চালিয়েছে। কোনো একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীনদলের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দিয়ে ভিন্নমতাবলম্বী ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জায়গায় একাধিক হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করা একটি প্রবণতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া ভারত সরকারের কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের ব্যাপারে নাগরিকদের মতপ্রকাশ করার ক্ষেত্রে সতর্ক করে দিয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দিয়েছেন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
এ দিকে ২০১৯ সালে ১০৫ জন সাংবাদিক হামলা, মামলা, গ্রেফতার ও নাজেহাল হয়েছেন। এর মধ্যে হামলায় আহত হয়েছেন ৪৫ জন, লাঞ্ছিত হয়েছেন পাঁচজন, আক্রমণের শিকার হয়েছেন পাঁচজন, গ্রেফতার হয়েছেন চারজন, হুমকির শিকার হয়েছেন ১২ জন, নির্যাতনের শিকার হয়েছেন একজন এবং মামলার শিকার হয়েছেন ৩৩ জন সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মী।


আরো সংবাদ



premium cement