২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভারতে সিএএ আইনের প্রয়োজন ছিল না

গালফ নিউজকে শেখ হাসিনা
-

প্রতিবেশী ভারতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (সিএএ) কোনো প্রয়োজন ছিল না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরে গালফ নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এমনটা বলেছেন তিনি। তবে বিষয়টি ভারতের অভ্যন্তরীণ বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। গত শনিবার প্রকাশিত ওই সাক্ষাৎকারে সিএএ-সহ রোহিঙ্গা ইস্যু, ভারত থেকে পাল্টা অভিবাসন, কয়লার ব্যবহার বৃদ্ধি ও পলিথিন নিষিদ্ধ নিয়েও কথা বলেছেন তিনি।
সিএএ নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা বুঝলাম না তারা (ভারত সরকার) এটা কেন করল। এটার কোনো প্রয়োজন ছিল না।’ উল্লেখ্য, গত ১১ ডিসেম্বরে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাস করে দেশটির পার্লামেন্ট। আইন অনুসারে, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ভারতে যাওয়া ছয়টি সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সদস্যদের নাগরিকত্ব দেয়া হবে। এই তিন দেশ থেকে হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন, পারসি ও খ্রিষ্টান ধর্মালম্বীরা যদি ভারতে ২০১৫ সালের আগে গিয়ে থাকে তাহলে তাদের নাগরিকত্ব দেয়া যাবে।
আইনটিতে মুসলিমদের বাদ দেয়ায় তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। সিএএ ও জাতীয় নাগরিকপঞ্জির বিরুদ্ধে ভারতজুড়ে বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে। বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, এতে ভারত থেকে মুসলিমরা নিপীড়নের ভয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসবে।
এ দিকে ভারত থেকে পাল্টা অভিবাসন হওয়ার ব্যাপারে শেখ হাসিনাকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, না, নাগরিকপঞ্জি প্রকাশের পর ভারতে পাড়ি দেয়া কেউ বাংলাদেশে ফিরে এসেছে এমন রেকর্ড নেই। কিন্তু ভারতের ভেতরে এটা নিয়ে মানুষ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছে। পুরো বিষয়টিকে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে জানিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সরকার বরাবরই সিএএ ও এনআরসিকে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবেই দেখে আসছে। বাংলাদেশে এক কোটি ৬০ লাখ হিন্দু (মোট জনসংখ্যার ১০.৭ শতাংশ) থাকার তথ্য তুলে ধরে শেখ হাসিনা ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশীদের ভারতে পাড়ি দেয়ার বিষয়টি নাকচ করেন। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ভারত সরকার তাদের দিক থেকে বলেছে যে, এনআরসি তাদের নিজস্ব ব্যাপার। এ ছাড়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত অক্টোবরে আমার নয়াদিল্লি সফরে ব্যক্তিগতভাবে আমাকে এ ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিয়েছেন।
রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধান করতে হবে : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতে, ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক এখন সবচেয়ে ভালো অবস্থায় আছে। বিস্তৃত খাতে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা বজায় রয়েছে। তবে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ১২ লাখ রোহিঙ্গাদের নিয়ে তিনি কিছুটা উদ্বেগ প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট উদ্ভূত হয়েছিল মিয়ানমারে। তাই এর সমাধানও তাদের ওপরই নির্ভরশীল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে মিয়ানমার নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে রোহিঙ্গাদের প্রধান উদ্বেগগুলো নিয়ে কোনো অর্থবহ উদ্যোগ নিচ্ছে না। দু’টি প্রত্যাবাসন উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে, কারণ একজন রোহিঙ্গাও স্বেচ্ছায় ফেরত যেতে চায় না। এতে প্রমাণ হয় যে, মিয়ানমার প্রত্যাবাসনের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে ব্যর্থ হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী সাক্ষাৎকারে আরো বলেন, এই সঙ্কটের বোঝা বাংলাদেশকে একাই বইতে হচ্ছে। এই সমস্যা যদি চলতে থাকে তাহলে এতে এ অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা গুরুতরভাবে আক্রান্ত হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত এ সঙ্কটের সমাধান না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে জড়িত থাকা।
কয়লা শক্তির ব্যবহার বাড়ানো প্রসঙ্গ : বাংলাদেশ সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লার ব্যবহার বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে। এ ঘোষণায় পরিবেশবাদীদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিলেও প্রধানমন্ত্রী নিশ্চিত করেছেন যে, এতে বিস্তৃত পরিমাণে পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে মাত্র ২.৫ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লা ব্যবহার করে। ভবিষ্যতে এ পরিমাণ ২৫ শতাংশে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে কার্বন নিঃসরণের হার খুবই কম। আমাদের উন্নয়ন এজেন্ডা পূরণে ‘কার্বন স্পেস’ যৌক্তিক পরিমাণে বাড়াতে দেয়া উচিত।


আরো সংবাদ



premium cement