২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

শীতেও সবজির দাম চড়া কমছে পেঁয়াজের ঝাঁজ

-

শীতে কাবু দেশ। জড়সড় দেশের মানুষ। টানা বেশ কিছু দিন ঠাণ্ডা বিরাজ করার ক্ষেত্রেও অনেকটা রেকর্ড হয়েছে এবার; কিন্তু স্বস্তি ফিরছে না শীতকালীন সবজির দামে। ভরা মৌসুমেও অধিকাংশ সবজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে। সবজির পাশাপাশি বাড়তি দাম বিরাজ করছে চাল, ডাল, তেল, চিনির ক্ষেত্রেও। আদা-রসুনের দাম আগে থেকেই বাড়তি। তবে পেঁয়াজের ওপর থেকে ভারত সরকার কর্তৃক রফতানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ইঙ্গিত দেয়ার সাথে সাথেই স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে পেঁয়াজের দামে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৩০ থেকে ৫০ টাকা কমেছে পেঁয়াজের দাম। গতকাল রাজধানী ঢাকার কয়েকটি বাজার ঘুরে দ্রব্যমূল্যের এ চিত্র পাওয়া গেছে।
শীতকালীন সবজি মুলা, শিম ও গাজরের দাম এখনো প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা। প্রতিটি ফুলকপি ও বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৫০ টাকায়। দেশী পাকা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে। পেঁপের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা। শালগম বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে। শসার দাম ১০ টাকা বেড়ে ৪০ থেকে ৬০ টাকা হয়েছে। বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা। নতুন গোল আলু ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের দাবি, অন্যান্য বছর এ সময় সবজির দাম সবচেয়ে কম থাকে। বর্তমানে অধিকাংশ সবজি স্বাভাবিক দামের চেয়ে দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তারা।
দ্রব্যমূল্য পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে নিয়োজিত সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদরের তালিকা অনুযায়ী, এক সপ্তাহের ব্যবধানে চালের দাম কেজিতে পাঁচ টাকা বাড়তি। এক সপ্তাহ আগে সরু চালের কেজি ৪৫ থেকে ৬০ টাকা ছিল, এখন সেটি ৫০ থেকে ৬০ টাকা। অন্য দিকে মাঝারি চাল প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা ছিল, যা এখন ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। পাইকারি বাজারে এখন সরু মিনিকেট চাল ৪৪ থেকে ৪৭ টাকা, মাঝারি বিআর-২৮ জাতীয় চাল ৩৩ থেকে ৩৭ টাকা ও মোটা চাল ২৮ থেকে ৩২ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। মোটা চাল কিছু দিন আগে প্রতি কেজি ২৬ টাকায় নেমেছিল, সেটি এখন দুই টাকা বেড়ে ২৮ টাকা হয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
এ দিকে ভারত সরকার রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার ইঙ্গিতেই দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোতে পেঁয়াজের দাম কেজিতে কমেছে ৩০ থেকে ৫০ টাকা। ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজ। গত বছরের শেষের দিকে ভারত রফতানি বন্ধ করায় পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। রেকর্ড ২৮০ টাকায় পৌঁছে যায় পেঁয়াজের কেজি। তবে নতুন দেশী পেঁয়াজ বাজারে আসার পর দাম কিছুটা কমে। নতুন দেশী পেঁয়াজের কেজি ১০০ টাকার মধ্যে চলে আসে। কিন্তু দুই সপ্তাহ আগে হঠাৎ করেই নতুন দেশী পেঁয়াজের কেজি ১৮০ টাকায় উঠে যায়। গত সপ্তাহেও বাজার ভেদে নতুন দেশী পেঁয়াজ ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি বিক্রি হয়। এ পরিস্থিতিতে ভারত থেকে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার ইঙ্গিত আসে। এতে দেশের বাজারেও কমতে শুরু করে পেঁয়াজের দাম। তবে ক্রেতারা বলছেন, বাজারে এখনো পেঁয়াজের দাম অনেক বেশি।
বাজারে এক সপ্তাহে আরো বেড়েছে খোলা সয়াবিন তেলের দাম। খুচরা বাজারে এক লিটার খোলা সয়াবিন তেল ৯৫ থেকে ৯৬ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, যা এক মাসে ১০ টাকার মতো বাড়তি। পাম তেল প্রতি লিটার ৮০ থেকে ৮৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। দুই মাসে এই তেলের দাম বেড়েছে লিটারে ২০ টাকার মতো। খুচরা বাজারে চীনা রসুনের কেজি এখন ১৫০ টাকা, দেশী রসুন ২০০ টাকা। আদা পাওয়া যাচ্ছে ১২০ থেকে ১৫০ টাকায়। চিনির দাম কেজি-প্রতি পাঁচ থেকে সাত টাকা বেড়ে খোলা চিনি ৬৫ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনি ৭২ টাকায় উঠেছে। একইভাবে মোটা দানার মসুর ডালের দাম প্রতি কেজি ৬৫ থেকে ৭০ টাকায় উঠেছে, যা আগের চেয়ে কেজিতে ১০ টাকা বাড়তি। অ্যাংকর ডাল বিক্রেতারা ৪৫ টাকার আশপাশের দামে বিক্রি করছেন। এটা তিন থেকে পাঁচ টাকা বাড়তি বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।
এ দিকে খুচরা বাজারে চালের দাম কেজি-প্রতি দুই টাকার মতো বেড়েছে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল ৪৮ থেকে ৫৪ টাকা, মাঝারি বিআর-২৮ জাতীয় চাল মানভেদে ৩৮ থেকে ৪৪ টাকা ও মোটা চাল মানভেদে ৩২ থেকে ৩৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে মানভেদে নাজিরশাইল চাল ৪৮ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। তারা জানান, এর আগে গত নভেম্বর মাসের শেষ দিকে চালের দাম কেজিতে মানভেদে দুই থেকে সাত টাকা বেড়ে গিয়েছিল। তখন প্রতি কেজি ৪৩ থেকে ৪৪ টাকার সরু মিনিকেট চালের দাম ৫০ টাকার আশপাশে উঠে যায়। আর বিআর-২৮ জাতের চালের দাম ওঠে ৩৬ থেকে ৪০ টাকায়। আর মোটা চাল ৩২ থেকে ৩৪ টাকায় বিক্রি হয় খুচরা বাজারে। এরপর ডিসেম্বরের শেষ দিকে মোটা চাল ও মাঝারি চালের দাম কিছুটা কমে গিয়েছিল। 

 


আরো সংবাদ



premium cement