২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ঢাবি ছাত্রী ধর্ষণে উত্তাল ক্যাম্পাস

ট্রমা ও শ্বাসকষ্টে ভুগছে নির্যাতিতা ঘটনাস্থল থেকে ব্যাগ, হাতঘড়ি, কলম ও প্যান্ট উদ্ধার জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
ঢাবি শিক্ষার্থী ধর্ষণের বিচার দাবিতে ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ : নয়া দিগন্ত -

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় তোলপাড় চলছে। উত্তাল হয়ে উঠেছে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাস। এমন এক পাশবিক ঘটনা মেনে নিতে পারছেন না কেউ। প্রশাসন এই ঘটনায় দোষীকে গ্রেফতারপূর্বক শাস্তি প্রদানের আশ^াস দিলেও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাবি এই ঘটনা নিয়ে তারা কোনো প্রহসন চান না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ছাত্রী ধর্ষণের সাথে জড়িতদের দ্রæত আইনের আওতায় আনা হবে। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের প্রোভিসি বলেছেন, বিষয়টি খুবই লজ্জার। আর ডাকসু এই ঘটনায় প্রশাসনকে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়েছে। ভিপি নুর বলেছেন, প্রশাসন এর দায় এড়াতে পারে না।
গত রোববার বিকেলে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ওই শিক্ষার্থী তার বান্ধবীর বাসায় যাওয়ার জন্য বিশ^বিদ্যালয়ের গাড়িতে ওঠেন। সন্ধ্যা ৭টার দিকে গাড়ি থেকে তিনি কুর্মিটোলায় নেমে যান। তার যে স্টপেজে নামার কথা ছিল ভুলে তিনি অন্যত্র নেমে পড়েন। এরপর ফুটপাথ ধরে হাঁটছিলেন। হঠাৎ পেছন থেকে কেউ তার ঘাড় চেপে ধরে। তিনি ওই লোকটিকে একনজর দেখেন। কিন্তু তারপর কী হয়েছে তা মনে নেই তার। পরে তিনি নিজেকে আবিষ্কার করেন একটি নির্জন স্থানে। আশপাশে গাছগাছালি। রাত ১০টার দিকে সেখান থেকে বের হয়ে তিনি রিকশা নিয়ে ওই বান্ধবীর বাসায় যান। মামলার এজাহারের বরাত দিয়ে পুলিশ এ তথ্য জানিয়েছে।
রাত ১২টার দিকে ওই শিক্ষার্থীকে সহপাঠীরা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। ধর্ষণের শিকার হয়ে ঢাবি শিক্ষার্থী ভর্তির খবরে রাতেই অনেকে ছুটে যান হাসপাতালে। সেখান থেকে বের হয়ে অনেকেই গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে ওই শিক্ষার্থীর জীবনে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক কাহিনী তুলে ধরেন। ডাকসু সদস্য তিলোত্তমা সিকদার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভিকটিমকে দেখার পর রাত ৩টার দিকে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের জানান, ঘটনার শিকার ছাত্রী এখন কথাবার্তা বলার মতো সুস্থ। তার কাছে ঘটনার বর্ণনাও দিয়েছেন। ওই ছাত্রীর জবানিতে তিলোত্তমা জানান, মেয়েটি সাড়ে ৫টার দিকে ইউনিভার্সিটির বাসে ওঠে। গন্তব্য রাজধানীর শেওড়া। কিন্তু ভুলক্রমে বা অন্য কোনো কারণে আগের স্টপেজ কুর্মিটোলায় নেমে পড়েন তিনি। তখন সময় সন্ধ্যা ৭টা। বাস থেকে নেমে আনুমানিক ১৫ কদম যাওয়ার পর পেছন থেকে এসে তার ঘাড় চেপে ধরে একটি লোক। চেহারা ও বেশভ‚ষা থেকে বোঝা যাচ্ছিল, লোকটি নিম্নশ্রেণীর। সে মেয়েটির ঘাড়ের নার্ভসেন্টারে এমনভাবে চাপ দিয়ে ধরেছিল যে তার পক্ষে একটুও নড়াচড়া করা সম্ভব ছিল না। ঘাড় ধরেই ছাত্রীটিকে নির্জন স্থানে নিয়ে যায় ওই দুর্র্বৃত্ত। ধর্ষণের আগে তাকে বেশ মারধরও করে। একপর্যায়ে জ্ঞান হারায় মেয়েটি। জ্ঞান ফেরার পর একটি সিএনজি নিয়ে বাসায় ফিরেন তিনি। তার অবস্থা দেখে ও ঘটনা জেনে পরিবারের সদস্যরা তাকে দ্রæত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম গোলাম রাব্বানী, সামাজিক অনুষদের ডিন সাদেকা হালিম এবং আরো বেশ ক’জন শিক্ষক হাসপাতালে যান। মেয়েটির সঙ্গে কথা বলেন, তার সার্বিক অবস্থার খবর নেন। ছুটে যান বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরাও।
মামলা দায়ের : এই ঘটনায় রোববার রাতেই মেয়েটির বাবা বাদি হয়ে ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি মামলা করেন। থানার ওসি গত রাতে বলেন, মামলায় একজনকে আসামি করা হয়েছে। এজাহারে মেয়েটি তার বান্ধবীর বাসায় যাচ্ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। গত সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত এই ঘটনায় পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি বলে ওসি জানান।
কলম হাতঘড়ি ও ব্যাগ উদ্ধার : ধর্ষণের ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ব্যাগ, হাতঘড়ি, কলম ও একটি প্যান্ট। এ ছাড়া পাওয়া গেছে ওই ছাত্রীর ব্যবহৃত বই ও ইনহেলার। গতকাল সোমবার সকালে কুর্মিটোলায় ঝোপঝাড়ের মধ্য থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্যরা এসব উদ্ধার করেন। পুলিশ বলেছে, বিষয়টি তারা অবগত হওয়ার পর গতকাল সকালেই ঘটনাস্থলে যায়। ছাত্রীর দেয়া বর্ণনা অনুযায়ী তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে ওইসব আলামত উদ্ধার করে। র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এবং পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) একটি টিমও ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণ করেছে।
উত্তাল ঢাবি : ধর্ষণের ঘটনার খবর ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে রোববার রাত থেকে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে। রাতেই কোনো কোনো স্থানে এ নিয়ে বিক্ষোভ হয়। অনেকে অপেক্ষা করছিলেন ভোর হওয়ার। রাত পৌনে ৪টার দিকে সংগঠনের সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে মিছিল বের করে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। মিছিলটি রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এসে শেষ হয়। সেখানে সংগঠনের নেতাকর্মীরা সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। আখতার হোসেন বলেন, এ ঘটনায় যাদের অবহেলা আছে, তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে যে বর্বরতম আচরণ করা হয়েছে, তা বাংলাদেশের বিচারহীনতার কারণেই ঘটেছে। ধর্ষকদের বারবার ছাড় দেয়া হয়। এমন ঘটনা আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে মেনে নিতে পারি না।
গতকাল সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে বিক্ষোভসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হয়। অনেকে ব্যক্তি উদ্যোগেও অনশনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন। বেলা সাড়ে ১১টায় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে প্রতিবাদী মানববন্ধন করে ছাত্রলীগ। পরে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। হাজার হাজার শিক্ষার্থী সেই বিক্ষোভে অংশ নেন। মিছিলটি রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে। এর আগে কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে ডাকসুর এজিএস ও ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন ফেসবুকে লিখেছিলেন, ‘ধর্ষণ কিংবা নারীর ওপর যেকোনো নিপীড়নের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই জারি রয়েছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সাথে যা হয়েছে তার বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিরোধ, সব নারীর ওপর পুরুষতান্ত্রিক নিষ্পেষণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধেরই অংশ। আজকের ঘটনার বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জেগে থাকবেÑ এ আমাদের দৃঢ় অঙ্গীকার।
ছাত্রদলের বিক্ষোভ : বান্ধবীর বাসায় যাওয়ার পথে রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর কুর্মিটোলা এলাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্রী ধর্ষণের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। গতকাল সোমবার সকালে ঢাবির মধুর ক্যান্টিন থেকে শুরু হয়ে একটি মিছিল ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়। ঢাবি ছাত্রদলের আহŸায়ক রাকিবুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমানুল্লাহ আমানের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি রওনকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল, যুগ্ম সম্পাদক আমিনুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক মো: জুয়েল হাওলাদার প্রমুখ। এ সময় ঢাবি ছাত্রদলের আক্তার হোসেন, খোরশেদ হোসেন সোহেল, জহির হোসেন, আশরাফুল ইসলাম আনিক, তরিকুল ইসলাম, মিনহাজুল ইসলাম প্রিন্স, গাজী সাদ্দাম হোসেন, রাজু আহমেদসহ তিন শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। মিছিলে নেতাকর্মীরা ‘ধর্ষকের সরকার, আর নাই দরকার’, ‘আমার বোন ধর্ষিতা কেন, প্রশাসন জবাব দে’ প্রভৃতি ¯েøাগান দিতে থাকেন।
ছাত্রদলের নেতারা সমাবেশে বলেন, দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন না থাকায় আজকে প্রকাশ্যে ঢাবির ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছে নরপিশাচরা। সত্যিকার অর্থে বিশেষ একটি গোষ্ঠী ছাড়া দেশে আজ কারো নিরাপত্তা নেই। ক্ষমতাসীন সরকার ও তাদের পেটোয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শুধু বিএনপি তথা বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের দমনে ব্যস্ত। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার দিকে তাদের কোনো নজর নেই। আজ সারা দেশে যেন ধর্ষণের উৎসব চলছে। কুমিল্লায় তনু হত্যা, ফেনীতে নুসরাত হত্যাসহ অসংখ্য নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে বর্তমান অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। কিন্তু কোনোটিরই সুষ্ঠু ও ন্যায়বিচার হয়নি। ফলে নারী ধর্ষণের মতো জঘন্য ঘটনা আজো ঘটছে। যার সর্বশেষ শিকার ঢাবির ছাত্রী। আমরা অবিলম্বে দুষ্কৃতকারীদের দমনে গ্রেফতার করে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করছি।
বেলা ১১টায় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেন শামসুন্নাহার হলের ভিপি শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি। ফেসবুকে একটি ইভেন্টের মাধ্যমে তিনি এ ডাক দেন। ইমির ডাকা এ প্রতিবাদী কর্মসূচিতে অংশ নেয় বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।
মহিলা পরিষদ ধর্ষকের গ্রেফতার ও শাস্তি দাবিতে ক্যাম্পাসে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। ছাত্রদল এই ঘটনার প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে কর্মসূচি পালন করে।
কুর্মিটোলায় সড়ক অবরোধ : গতকাল বিকেল পৌনে ৪টার দিকে কুর্মিটোলা এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা ধর্ষকের বিচার দাবিতে বিক্ষোভ করেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা রাস্তা অবরোধ করে রাখে। এ সময় ওই এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
ঢাবি প্রশাসনের বক্তব্য : ধর্ষণের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে অভিভাবক হিসেবে যাবতীয় পদক্ষেপ নেবেন বলে জানিয়েছেন ঢাবি ভিসি অধ্যাপক ড. মো: আখতারুজ্জামান। গতকাল হাসপাতালে ছাত্রীকে দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আমরা মর্মাহত। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার ছাত্রীটির পাশে আছি। ঢাবি তার অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেছে। তাকে মানসিকভাবে শক্ত ও সমর্থ করে তোলাই আমাদের প্রধান কাজ। ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যা যা প্রয়োজন তাই করবে। তাকে মনে রাখতে হবেÑ সে আমাদের মেয়ে, আশা রাখি তার মনোবল শক্ত থাকবে।
জড়িতদের দ্রæত আইনের আওতায় আনা হবে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
ছাত্রী ধর্ষণে জড়িতদের দ্রæত আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। গতকাল বিকেলে রাজারবাগ পুলিশ লাইন মাঠে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ঘটনার তদন্ত চলছে, সত্যতা যাচাই করা হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সবগুলো সংস্থা ঘটনাটি তদন্ত করছে।
নিন্দা জানানোর ভাষা নেই : প্রোভিসি
প্রোভিসি অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক, নিন্দা জানানোর ভাষা নেই। আমাদের লজ্জার শেষ নেই। মেয়েটিকে প্রথমে পেটানো হয়েছে, পরে তাকে অপমান করেছে দুর্বৃত্তরা। আমরা সরকারের কাছে এ ঘটনায় জড়িতদের কঠোর শাস্তির দাবি জানাই। গতকাল সকালে ওই শিক্ষার্থীকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে দেখতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তার সাথে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী। প্রোভিসি বলেন, মেয়েটি শারীরিকভাবে ভালো আছে। তবে তার মানসিক ক্ষত নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। তার চিকিৎসার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলেছি।
বিচার দাবিতে শিক্ষার্থীর অনশন : গতকাল সকাল ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অনশনে বসেছেন সিফাতুল ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থী। সিফাতুল ঢাবি দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী বলে জানা যায়। একটি প্ল্যাকার্ড লাগিয়ে তাকে অনশনে বসতে দেখা গেছে। সিফাতুল ইসলাম জানান, ধর্ষককে অবিলম্ব গ্রেফতার করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। ধর্ষকের মৃত্যুদণ্ড দাবি করেন সিফাতুল।
শ্বাসকষ্টে ভুগছেন ধর্ষিতা : হাসপাতাল সূত্র জানায়, ট্রমা ও শ্বাসকষ্টে ভুগছেন ধর্ষণের শিকার ছাত্রীটি। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, শিক্ষার্থীকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা তাকে চিকিৎসা দিচ্ছেন। এই অবস্থায় তার সাথে দেখা করা, কথা বলা তার জন্য অস্বস্তিকর। কেউ যেন আমরা তার কাছে না যাই। ধর্ষণের আলামতের বিষয়ে তিনি বলেন, ধর্ষণের বিষয়টি ঢামেকের ফরেনসিক বিভাগ দেখছে। পাশাপাশি তাকে ঢামেকের নাক কান গলা বিভাগ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। তার যেহেতু শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, সে জন্য রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগসহ আরো কিছু বিভাগের ডাক্তারদের নিয়ে একটি বোর্ড গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। হাসপাতাল সূত্র জানায়, ঢামেকের গাইনি বিভাগের প্রধান সালমা রউফকে প্রধান করে সাত সদস্যের একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।
বিচারের আওতায় আনতে হবে : ভিপি নুর
আইওয়াশমূলক কর্মকাণ্ড না করে ছাত্রীর ধর্ষণকারীকে দ্রæত বিচারের আওতায় আনতে সরকারের প্রতি আহŸান জানিয়েছেন ডাকসু ভিপি নুরুল হক। গতকাল দুপুরে শাহবাগ অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। সেখানে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে নুর এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ডাকসুতে হামলার ব্যাপারে সরকার যেমন আইওয়াশ করেছে, এই ঘটনায় যেন তা না করে। অবিলম্বে ধর্ষককে বিচারের আওতায় আনতে হবে। না হলে ছাত্র-জনতা কাউকেই ছেড়ে দেবে না। এ ঘটনায় সরকার ও পুলিশকে দায়ী করে ভিপি নুর বলেন, সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঢাবি ছাত্রীর ধর্ষণের দায় এড়াতে পারে না। তারা নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। সমাবেশে ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন, সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহŸায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খান, ফারুক হোসেন, শামসুন্নাহার হল ছাত্র সংসদের ভিপি এস কে তাসনিম আফরোজ ইমি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ন্যায়বিচার নিশ্চিতের দাবি ঢাবি শিক্ষক সমিতির : ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় ধিক্কার ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাবি শিক্ষক সমিতি। সংগঠনটির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো: নিজামুল হক ভ‚ইয়া গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ নিন্দা জানান। ঢাবি শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শৈথিল্য, বিচারের দীর্ঘসূত্রতা এবং কখনো কখনো সঠিক তদন্তে অভাবে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় সমাজে ধর্ষণ-ব্যাধির বিস্তার ঘটে চলেছে। এ ধরণের ঘৃণ্য কাজের অবসানকল্পে সমাজের শ্রেণী-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহŸান জানাই।
প্রভোস্ট কমিটির সভা : এ দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রভোস্ট কমিটির এক সভা গতকাল সন্ধ্যায় ভিসি অধ্যাপক ড. মো: আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রীর ওপর পাশবিক নির্যাতনের ঘটনার তীব্র নিন্দা, দোষী ব্যক্তিদের দ্রæত গ্রেফতার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের জন্য জোর দাবি জানানো হয়।
বিএনপির প্রতিনিধিদল : অগণতান্ত্রিক সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতার কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন নারী শিশু অধিকার ফোরামের সদস্য সচিব ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী। গতকাল সোমবার বিকেলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়াান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে তিনি ওই শিক্ষার্থীর সাথে সাক্ষাৎ শেষে এ মন্তব্য করেন।
এ সময় নারী শিশু অধিকার ফোরামের সদস্য সচিব ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরীর নেতৃত্বে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, সহ স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা: মো: রফিকুল ইসলাম, ক্রীড়া সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য ফরিদা ইয়াসমিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহŸায়ক রাকিবুল ইসলাম রাকিব প্রমুখ।


আরো সংবাদ



premium cement