২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

পেঁয়াজের পর চালের দাম কেন বেড়ে চলেছে?

-

বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম নিয়ে বাজারে হুলস্থুল কাণ্ড চলার মধ্যেই সব ধরনের চালের দামের ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে।
আড়তদার, মিলমালিক কিংবা খুচরো বিক্রেতাÑ সবাই একবাক্যে বলছেন এ সময়ে এভাবে চালের দাম বাড়ার যৌক্তিক কোনো কারণ নেই।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন মজুমদার নিজেও বলেছেন যে, দেশে চালের পর্যাপ্ত মজুত আছে এবং সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই।
এমনকি সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের সময়ে যাতে করে কোনো সঙ্কট তৈরি না হয় সে জন্য অগ্রিম সতর্ক অবস্থান নিয়েছিল মন্ত্রণালয়।
বাজারে দামের হেরফের : টিসিবির হিসাবে গতকাল চিকন চাল বিক্রি হয়েছে ৪৮ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত আর নাজির/মিনিকেট সাধারণ মান ৪৮ থেকে ৫৩ টাকা; আর উত্তম মানের চাল ৫৩ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত। আর মোটা চাল অর্থাৎ স্বর্ণা/চায়না/ইরি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে। অথচ এক সপ্তাহ আগে ১১ নভেম্বর এই মোটা চাল বিক্রি হয়েছে ২৮ থেকে ৪০ টাকা দরে। এমনকি সরু বা চিকন চাল ছিল ৪৫ থেকে ৫৬ টাকার মধ্যে। তবে গত বছর নভেম্বরের এই সময়েও চালের দাম হুট করে বেড়ে গিয়েছিল। তারও আগে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরেও চালের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে তুমুল শোরগোল শুরু হলে তখনকার বাণিজ্যমন্ত্রী দু’জন চালকল নেতার বিরুদ্ধে মজুতদারির অভিযোগ এনে তাদের গ্রেফতারের হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন।
দাম বাড়ছে কেন : তবে এবার পেঁয়াজ নিয়ে যখন তুমুল আলোচনার ঝড় চলছে, তার মধ্যে চালের দাম বাড়ছে কেন তা নিয়ে চলছে আলোচনা।
এমন প্রশ্নের জবাবে রাজধানীর বাবুবাজারের শিল্পী রাইস এজেন্সির মালিক কাওসার হোসেন বলেছেন, যে দামে এখন চাল বিক্রি হচ্ছে সেটি বছরের এ সময়ে সাধারণত যে দামে চাল বিক্রি হয় তার চেয়ে কেজি-প্রতি গড়ে চার-পাঁচ টাকা করে বেশি। তিনি আরো বলেন, ‘দাম এখন একটু বাড়তির দিকে। এক সপ্তাহ আগেও যে দামে চাল বিক্রি করেছি, এখন তার চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। কারণ মিল থেকে আমাদের কেজি-প্রতি চার-পাঁচ টাকা বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।’ তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী মোটা চালের দাম দুই-এক টাকা বাড়লেও নাজিরশাইল চালের দাম খুব একটা বাড়েনি। তবে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মধ্যবিত্ত বা নি¤œমধ্যবিত্তরা যে চাল বেশি কেনেন সেই মিনিকেট চালের দাম। মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের বরিশাল রাইস এজেন্সির ব্যবস্থাপক মহিউদ্দিন রাজা বলছেন যে, মিলমালিকরা দাম বাড়ানোর যুক্তি হিসেবে বেশি দামে ধান কেনার কথা বলছেন। বাজার এখন চড়া। সাধারণত চিকন চাল ও মিনিকেটের দাম এ সময় কম থাকে; কিন্তু এখন বাজারে সেটি দেখা যাচ্ছে না। মিলাররা বলছেন তাদের বেশি দাম দিয়ে নতুন ধান কিনতে হচ্ছে।
মহিউদ্দিন রাজা বলছেন, আগামী বৈশাখ মাসের আগে চালের দাম কমে আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ বলেই মনে হচ্ছে তার কাছে। পাইকারিপর্যায়ে বিক্রেতারা মিলমালিকদের দায়ী করলেও বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাস্কিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কে এম লায়েক আলী বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ধানের দাম একটু বেড়েছে বলে মিনিকেট চালের দাম সামান্য বেড়েছে। যে ধানটা আমরা ২০-২২ দিন আগেও ৮৫০ টাকায় কিনেছি সেটি এখন ১০২০ টাকা ধরে কিনছি। এ কারণে সামান্য বেড়েছে যা খুব একটা প্রভাব পড়ার কথা নয়।
তিনি বলেন, চিকন (মিনিকেট) চালটা আগে অল্প লোক কিনত; কিন্তু দাম কম থাকায় সাম্প্রতিক সময়ে অনেকেই খাওয়া শুরু করেছে। যদিও যে ধান থেকে চালটা হয় সেটি বছরে মাত্র একবার উৎপাদন হয়। অন্য দিকে পরিবহন সেক্টরেও কিছুটা অস্থিরতা আছে। ট্রাক নিয়ে রাস্তায় নামতে পারছে না; কিন্তু মিনিকেটে দুই-এক টাকার ব্যবধান ছাড়া খুচরাপর্যায়ে অন্য কোনো চালের দাম বাড়ার সুযোগই নেই। যারা বাড়াচ্ছেন দায়টা তাদের।
ঢাকায় ভোক্তাপর্যায়ে ‘কোনো অদৃশ্য শক্তি’ দাম বাড়ানো সেটি তাদের জানা নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, দেড় মাস আগেও চালের খুব একটা বেচাকেনা ছিল না; কিন্তু এখন হঠাৎ করেই বেচাকেনা বেশি হচ্ছে।
‘দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই’ : এ দিকে চালের দাম নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করছেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মোছাম্মৎ নাজমানার খানম বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ‘আমরা মিলমালিকদের সাথে বৈঠক করেছি। নিশ্চিত করে বলতে চাই যে, এক টাকাও দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই।’
তিনি বলেন, মিলমালিকরা বলছেন তারা দাম বাড়াননি এখন ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে কিছু করলে তার জন্য আইন আছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সেটি দেখবে। আমাদের উৎপাদন সর্বোচ্চ। মজুতও যথেষ্ট। যদিও মিলমালিকরা বলছেন সড়ক আইনের কারণে পরিবহন নিয়ে একটু সঙ্কট চলছে; কিন্তু তাতেও খুব একটা হেরফের হওয়ার কথা নয়।


আরো সংবাদ



premium cement