২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ওমরাহ টিকিটের জন্য হাহাকার

মিলছে না দ্বিগুণ টাকায়ও
-

মধ্যপ্রাচ্যগামী কিছু বিমান সংস্থা বাংলাদেশ থেকে তাদের ফ্লাইট কমিয়ে দেয়ায় রমজান মাসে ওমরাহ যাত্রীদের টিকিটের হাহাকার চলছে। অনেক ক্ষেত্রে দ্বিগুণ টাকায়ও মিলছে না নির্ধারিত তারিখের টিকিট। এই অবস্থার সুযোগ নিয়ে বিদ্যমান এয়ারলাইন্সগুলো ইচ্ছেমতো ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে। কিছু ট্রাভেল এজেন্সিও আগে থেকে টিকিট ব্লক করে রেখে এখন চড়াদামে বিক্রি করছে। এই পরিস্থিতিতে অনেক ওমরাহ যাত্রী বাধ্য হয়েই নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি টাকায় টিকিট কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। আবার টিকিট না পাওয়ায় অনেকের ওমরাহ ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে দেশে ছুটি কাটাতে আসা অনেকে টিকিট সঙ্কটের কারণে নির্ধারিত সময়ে ফেরত যেতে পারছেন না। অনেকের ভিসা বাতিলের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
এই অবস্থায় সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারের ফ্লাইট বৃদ্ধি করা, প্রয়োজনে কম দূরত্বের ও কম ভাড়ার রুটের ফ্লাইট কমিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের রুটগুলো চালু করা, ওপেন স্কাই চালু এবং বিভিন্ন চার্জ কমিয়ে হলেও এয়ারলাইন্সগুলোকে বাংলাদেশ থেকে ফ্লাইট পরিচালনায় উদ্বুদ্ধ করার দাবি জানিয়েছে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব)। তারা ইতোমধ্যেই বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে সরকারের প্রতি এই আহ্বান জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, রমজানে বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি ধর্মপ্রাণ মানুষ ওমরাহ পালন করতে যান। সারা বছর যেখানে প্রায় এক লাখ লোক ওমরাহ পালন করে থাকেন সেখানে রমজানেই প্রায় ৪০ হাজার মানুষ ওমরাহ পালন করতে যান। অনেকে মসজিদুল হারামাইনে এতেকাফ করার জন্যও যান। টিকিট সঙ্কটে সবচেয়ে বেকায়দায় পড়েছেন এই ওমরাহ যাত্রীরা। তাদের ৪০-৪৮ হাজার টাকার ভাড়া এখন ৭০ থেকে ৭৫ হাজার টাকা পর্যন্ত গুনতে হচ্ছে। গ্রুপে গেলে এই ভাড়ায় যাওয়া যাচ্ছে। আবার গ্রুপ ছাড়া এই ভাড়ায়ও টিকিট মিলছে না। তখন ৮০ থেকে ৮৫ হাজার টাকা লাগছে। সিস্টেমে আলাদা কোনো টিকিটই পাওয়া যাচ্ছে না।
পুরানা পল্টনের একটি ট্রাভেল এজেন্সির সেলস ম্যানেজার মোহন সরকারের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, মূলত গত বছর থেকে ওমান এয়ার ও ইত্তেহাদ এয়ার বাংলাদেশ থেকে ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়। এ বছর থেকে আমিরাত এয়ারলাইন্স সৌদি আরবে তাদের ফ্লাইট দৈনিক তিনটি থেকে কমিয়ে একটিতে নামিয়ে এনেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দুটি দিচ্ছে। অন্য দিকে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট রয়েছে একটি। তবে সৌদি এয়ারলাইন্স ফ্লাইট বাড়ালেও টিকিট সঙ্কট কাটছে না।
সংশ্লিষ্ট এক এজেন্সি মালিক জানান, এক্ষেত্রে এজেন্সিগুলোর কিছুই করার নেই। বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্সের কোনো টিকিট সিস্টেমে পাওয়াই যাচ্ছে না। সৌদি এয়ারলাইন্স চাহিদার কারণে তিনটির জায়গায় এখন সর্বোচ্চ ছয়টি পর্যন্ত ফ্লাইট পরিচালনা করছে। কিন্তু সুযোগ বুঝে তারাও ভাড়া অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। তিনি জানান, গত এক মাসে ভাড়া বাড়তে বাড়তে এখন নিট ভাড়া ৪৮ থেকে ৬৪ হাজার টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে। এজেন্সিগুলোর অনেকেই গ্রুপভিত্তিক টিকিট কিনে তা আরো বেশি দামে বিক্রির ঘটনাও ঘটছে। হজ ও ওমরাহ এজেন্সি মালিকরা জনিয়েছেন, তারা অনেক যাত্রীকে তাদের প্রতিশ্রুত প্যাকেজমূল্যে ওমরাহ পালনের জন্য পাঠাতে পারছেন না। অনেক যাত্রী বর্ধিত ভাড়া দিয়ে যেতে রাজি হলেও অনেকে এজেন্সিগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন। অতীতে এমন টিকিট সঙ্কটের ঘটনা ঘটেনি বলেও তারা জানান।
এদিকে পরিস্থিতি উত্তরণে সরকারি তরফে এখনো কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ না থাকায় সংশ্লিষ্টরা হতাশা ব্যক্ত করেছেন। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট বৃদ্ধির বিষয়েও এখনো কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে হাবের সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম গতকাল বুধবার নয়া দিগন্তকে বলেন, জরুরি ভিত্তিতে পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে। বিশেষ করে বিমানের ফ্লাইট বৃদ্ধি করে এই মুহূর্তে সমস্যার সমাধান সম্ভব। এজন্য বিমানের যে ফ্লাইট ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি পেয়েছে তা সৌদি আরব বা মধ্যপ্রাচ্যের রুটে পরিচালনা করা উচিত। এছাড়া কম দূরত্ব কম ভাড়ার কম লাভজনক রুটে আপাতত ফ্লাইট স্থগিত রেখে বা কমিয়ে সেগুলো সৌদি আরবের রুটে পরিচালনা করে পরিস্থিতি মোকাবেলা করা যায়। এ ব্যাপারে গতকাল বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের লিখিতভাবে হাবের পক্ষ থেকে তিনি অনুরোধ করেছেন বলে জানান। এর আগে আটাবের সভাপতি এস এন মঞ্জুর মোরশেদ মাহবুবও মন্ত্রণালয়কে মধ্যপ্রাচ্যে ফ্লাইট বৃদ্ধিসহ ওপেন স্কাই চালুর লিখিত আহ্বান জানিয়েছেন।
হাবের পক্ষ থেকে গতকাল বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে দেয়া চিঠিতে এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, বাংলাদেশ থেকে এ বছর ওমরাহ যাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় এয়ার লাইন্সগুলোতে ওমরাহ যাত্রীর আসন সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করেছে। এই সুযোগে এয়ারলাইন্সগুলো বিমান ভাড়া অসহনীয় মাত্রায় বৃদ্ধি করেছে। যেখানে পূর্বে ঢাকা-জেদ্দা-ঢাকা সরাসরি ওমরাহ বিমান ভাড়া ছিল ৫০ হাজার টাকা। সেখানে বর্তমানে ঢাকা-জেদ্দা-ঢাকা ওমরাহ যাত্রীদের বিমান ভাড়া ৮০-৮৫ হাজার টাকা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৯০-৯৫ হাজার টাকাও নেয়া হচ্ছে। এত বেশি ভাড়া দিয়েও ওমরাহ যাত্রীর ফ্লাইটের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। পবিত্র রমজান মাসে ওমরাহ করতে যাবেন এরকম হাজার হাজার ওমরাহ যাত্রীদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে ফ্লাইটের আসন সঙ্কটের কারণে। তাছাড়া মধ্য প্রাচ্যগামী অভিবাসীদের বিমান ভাড়া দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।

সরকারের অভিবাসন ব্যয় কমানো নীতিমালা থাকলেও বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যগামী অভিবাসীদের বিমান ভাড়া বৃদ্ধির কারণে অভিবাসন ব্যয় অনেক বৃদ্ধি পাচ্ছে। অসহায় গরিব অভিবাসন প্রার্থীরা বর্ধিত ব্যয় বহন করতে না পারায় অনেকের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে বা ভিসা বাতিল হচ্ছে। তা ছাড়াও ছুটিতে আসা অনেক অভিবাসী বিমানের আসন সঙ্কট ও ভাড়া বৃদ্ধির কারণে গন্তব্যে ফিরতে পারছেন না। বর্তমানে ঢাকা-জেদ্দা-ঢাকা অভিবাসীদের বিমান ভাড়া ৬০-৬৫ হাজার টাকা যেখানে পূর্বে ছিল ২২-২৪ হাজার টাকা। অতিরিক্ত বিমানভাড়ার টাকা বৈদেশিক মুদ্রা আকারে নিয়ে যাচ্ছে বিদেশী এয়ারলাইন্সগুলো। হাব সভাপতি তার চিঠিতে উদ্ভূত সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কয়েকটি প্রস্তাবনা পেশ করেন। তার মধ্যে রয়েছে, তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা হিসেবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের যেসব রুটে যাত্রী সংখ্যা কম ও অলাভজনক সেসব রুটে ফ্লাইটের সংখ্যা কমিয়ে ঢাকা-জেদ্দা-ঢাকা, ঢাকা-রিয়াদ-ঢাকাসহ মধ্যপ্রাচ্যগামী অন্যান্য গন্তব্যে ফ্লাইটের সংখ্যা বৃদ্ধি করা। এতে বিমান বাংলাদেশ এয়ালাইন্স লাভবান হবে এবং ওমরাহ যাত্রীসহ সব মধ্যপ্রাচ্যগামী অভিবাসীও উপকৃত হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এছাড়া বিদেশী এয়ার লাইন্সগুলোকে বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনার সুযোগ সহজ করে দেয়ার জন্য ওপেন স্কাই করা এবং তাদের উৎসাহ প্রদানের জন্য হ্যান্ডলিং ল্যান্ডিং ও পার্কিংসহ অন্যান্য চার্জ কমানো বা মওকুফ করা যেতে পারে বলেও প্রস্তাব করা হয়েছে। চিঠির অনুলিপি ধর্ম মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং বিমান অফিসে পাঠানো হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement