২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

বুড়িগঙ্গা তীরের বৈধ স্থাপনাও উচ্ছেদের অভিযোগ

-

অবৈধস্থাপনা উচ্ছেদের নামে বুড়িগঙ্গা তীরের বৈধস্থাপনাও ভেঙে ফেলা হচ্ছে। নদীর সীমানা পিলারের বাইরে গিয়েও অনেক স্থাপনা ভেঙে ফেলা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাজউকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বৈধকাগজপত্র নিয়ে গড়ে উঠা ওইসব বহুতল ভবন মালিকেরা অভিযোগ করেছেন, অনৈতিকভাবে অর্থ হাতিয়ে নিতে না পেরে তাদের বৈধস্থাপনা ভেঙে দিয়েছে বিআইডাব্লিউটিএ। এভাবে ১৮টি ভবনের মালিক পাওয়া গেছে যারা নিজেদের স্থাপনাকে বৈধ বলে দাবি করেছেন। তবে বিআইডাব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ দাবি করে আসছে তারা কেবল অবৈধস্থাপনা ভাঙছে।
১৮টি ভবনের মালিক গতকাল শুক্রবার নয়া দিগন্তকে বলেন, তারা এখন রাস্তার ফকির হয়ে গেছেন। যুগের পর যুগ তারা ওই সম্পত্তি ভোগ দখল করে আসছেন। নদীর সীমানা পিলারের অনেক বাইরে তাদের স্থাপনা ছিল। কিন্তু সেগুলোও চোখের সামনে বুলডোজার লাগিয়ে ভেঙে ফেলা হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড, সিটি করপোরেশন, রাজউক, বিআইডাব্লিউটিএ ও জেলা প্রশাসক কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে নদীর সীমানা পিলার স্থাপন করলেও তা আমলে না নিয়ে পাঁচ তলা, তিন তলাসহ প্রায় অর্ধশত পাকা ও আধা পাকা ভবন গুঁড়িয়ে দিয়েছে বিআইডাব্লিউটিএ।
জানা গেছে, গত ২৯ থেকে ৩১ জানুয়ারি খোলামোড়া, জিনজিরা, কামরাঙ্গীরচর ও কালীগঞ্জ এলাকায় প্রায় ৪৪৪টি স্থাপনা উচ্ছেদ করে ঢাকা নৌবন্দর কর্তৃপক্ষ। পরে ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি কামরাঙ্গীরচর এলাকার নবাবচর, কয়লারঘাট, ইসলামবাগ ও পূর্ব ইসলামবাগে আরো ২৬০টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। তারমধ্যে পূর্ব ইসলামবাগ এলাকায় ১৮টি বৈধভবন উচ্ছেদ করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তা ছাড়া, এসব ভবন ভাঙার আগে বিদ্যুৎ কিংবা গ্যাসলাইন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়নি। এমনকি ভবনে বসবাসকারীদের বের হওয়ারও সুযোগ দেয়া হয়নি কোনো কোনো ক্ষেত্রে। এ সময় অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সরেজমিন গতকাল বেলা ১১টায় চকবাজার থানা এলাকার পূর্ব ইসলামবাগে গিয়ে দেখা যায়, বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেলের সন্নিকটে নদীর তীর। এর ১৫-২০ হাত পরে সীমানা দেয়াল। এরপরে ৪০ ফুট রাস্তা। সাথে নদীর সীমানা পিলার। এর ১০ ফুট ও ৫ ফুট পর পর প্রায় ১৫টি ভাঙা ভবন। এসব ভবনের ইট ভাঙছেন লেবাররা। ভবন মালিক কে? জানতে চাওয়া মাত্র শত শত লোক এগিয়ে আসেন। তারা জানান, নিয়মিত খাজনা, এসএ ও সিএস কাগজপত্র ছাড়াও রাজউকের অনুমতি নিয়ে ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া, পানি উন্নয়ন বোর্ড, সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসন ও বিআইডাব্লিউটিএর যৌথ সভায় বৈধ ঘোষণার পরেও তাদের বহুকষ্টে অর্জিত টাকা দিয়ে নির্মাণ করা ভবন গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। কোটি কোটি টাকার সম্পদ কোনো নোটিশ ছাড়া নিমিষের মধ্যে গুঁড়িয়ে দিয়েছে ঢাকা নৌবন্দর কর্তৃপক্ষ। ভাঙার আগে গ্যাস ও বিদ্যুৎসংযোগ পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন করা হয়নি। প্রাণনাশের ভয়ে হুড়োহুড়ি করতে গিয়ে অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। আবার যারা নগদ টাকা দিতে পেরেছেন তাদের কোনো ক্ষতি হয়নি। এমন দেখা গেছে, একই সীমানার মধ্যে একটি ভবন ভাঙা, অথচ পাশের ভবন অক্ষত।
ঢাকা ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার লাল মিয়া খান জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড, ঢাকা নৌ বন্দর, সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসকের সমন্বয়ে নদীর সীমানা নির্ধারণ ও পিলার স্থাপন করা হয়। তাদের কথামতো ভবন নির্মাণে আর কোনো বাধা থাকল না। তাই সীমানা পিলারের ৭ ফুট দূরে ভবন নির্মাণ করেছি। তা ছাড়া, সিটি জরিপ, খাজনা পরিশোধ ও ডিআইটি অনুমোদন থাকা সত্ত্বেও তার ভবন ভাঙা হয়। এমনকি বিদ্যুৎ বিল, গ্যাসবিল ও পানির বিলও নিয়মিত পরিশোধ করা হচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেন, ভবন ভাঙার সময় গ্যাস ও বিদ্যুৎলাইন সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করায় বিদ্যুৎ ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণে তার স্ত্রী, মেয়ে ও এক সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। তিনি এর বিচার দাবি করেন।
তিনি আরো বলেন, যদি রাস্তার জন্য তাদের ভবন ভাঙবে, তাহলে তো নোটিশ দেবে। তিনি অভিযোগ করেন, ভবন ভাঙার আগ মুহূর্তে কয়েকজন লোক ঢাকা নৌবন্দর যুগ্ম পরিচালক আরিফ হোসেনের নামে টাকা চাইলে তিনি দিতে অসম্মতি জানান। ঠিক তার ১০ মিনিট পরে ভাঙার কাজ শুরু হয়।
পূর্ব ইসলামবাগের বাসিন্দা শিপন জানান, তার পাঁচ তলা ভবনের ১০ ফুট সামনে নদীর সীমানা পিলার স্থাপন করা হয়েছে। এর পরে পাকা রাস্তা ও নদীর দেয়াল। তার পরেও ভেঙে দেয়া হয়েছে ভবন। বাধা দেয়া হলে মামলা ও হামলার ভয় দেখানো হয়। তিনি বলেন, তার চাচা মাদু হাজির ভবন আরো ভেতরে। তা ছাড়া, রাজউকের নকশা মোতাবেক ভবন নির্মাণ করা হয়। তাও ভেঙে ফেলা হয়েছে। এমনকি ভবনের নিচে সিমেন্টের দোকান। ওইসব মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নেয়ারও সুযোগ দেয়া হয়নি। ভবনের ইট পাথরের সাথে সিমেন্টের শত শত বস্তা একাকার হয়ে আছে। ভাঙার আগে মোটা অঙ্কের টাকা চাইলে তা দিতে রাজি না হওয়ায় সাথে সাথে ভাঙার কাজ শুরু করে ঢাকা নৌবন্দর কর্তৃপক্ষ। পূর্ব ইসলামবাগের ভবন মালিক আবুল হোসেন, তোফাজ্জল, হাবিব তালুকদার, শাহ আলম, রওশন আরা হোসেন শহিদ ও নুর মোহাম্মদ জানান, তাদের ভবন ভাঙা হয়েছে। কিন্তু পাশেই যেসব ভবন রয়েছে তাতো ভাঙা হয়নি! এটা হলো কেনো, তা জানতে চেয়েছেন তারা।


আরো সংবাদ



premium cement