২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

এফসিএল : পারিবারিক বন্ধনের ভিন্ন গল্প

এক ফ্রেমে এফসিএল’র চার দলের সদস্যরা - ছবি : আব্দুল্লাহ্ আল বাপ্পী

পরিবারের সদস্যদের বন্ধন অটুট রাখতে ২০০৯ সাল থেকে তারা প্রতি বছর আয়োজন করে ক্রিকেট লিগ। শুধু পরিবারের নিকট আত্মীয়দের অংশগ্রহণ থাকে বিধায় নাম দেয়া হয়েছে, ফ্যামিলি ক্রিকেট লিগ (এফসিএল)। সাতজন করে চার দলে ভাগ হয়ে এই খেলা অনুষ্ঠিত হয় বাড়ির ছাদে। দর্শক হিসেবে শিশু থেকে প্রবীণ, পরিবারের সব বয়সী মানুষ। লিখেছেন আলমগীর কবির। ছবি তুলেছেন আব্দুল্লাহ্ আল বাপ্পী

বাঙালির হাজার বছরের সংস্কৃতির সাথে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে একান্নবর্তী পরিবার। এই একান্নবর্তী পরিবার নিয়ে রচিত হয়েছে হাজারো সাহিত্য, নির্মিত হয়েছে চলচ্চিত্র, নাটক। তবে আজ সমাজের আকাশে যৌথ পরিবার নামক দু-একটা নক্ষত্রের দেখা মিললেও নেই সেখানে প্রাণবন্ত আবেগ আর আবেশ। কালের অতলে হারিয়ে যেতে বসেছে একান্নবর্তী সংসারজীবনের সেই সুমধুর অতীত। একক পরিবারের কালছায়ায় গড়ে উঠছে স্বার্থপর ও হতাশাগ্রস্ত এক সমাজ।

একক পরিবারে ভার্চুয়াল উপকরণে নির্ভর করে বেড়ে উঠছে তরুণসমাজ। দুরন্তময় শৈশবের কোনো উচ্ছলতার স্পর্শ ছাড়া নিঃসঙ্গতায় ভরা দুঃসহ জীবনযাপনই যেন তাদের নিয়তি। শিশুরা স্মার্টফোনে আসক্ত, একা একা সে হয়ে ওঠে এক বিচ্ছিন্ন জগতের বাসিন্দা। ভিডিও, কম্পিউটার গেমও বিনোদনের নামে সে সরে যায় বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য যৌথ পরিবারের বন্ধনের কোনো বিকল্প নেই।

উদাহরণ হিসেবে টেনে আনা যেতে পারে রাজধানীর মিরপুরের কালাম সাহেবের বাড়ির প্রসঙ্গ। পরিবারের সদস্যদের বন্ধন অটুট রাখতে ২০০৯ সাল থেকে তারা প্রতি বছর আয়োজন করে ক্রিকেট লিগ। শুধু পরিবারের নিকট আত্মীয়দের অংশগ্রহণ থাকে বিধায় নাম দেয়া হয়েছে, ফ্যামিলি ক্রিকেট লিগ (এফসিএল)। সাতজন করে চার দলে ভাগ হয়ে এই খেলা অনুষ্ঠিত হয় বাড়ির ছাদে। দর্শক হিসেবে শিশু থেকে প্রবীণ, পরিবারের সব বয়সী মানুষ।

২২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয়েছে এফসিএলের দশম আসর। এতে চারটি দল অংশ নিয়ে ছিল, ফেন্সি গ্ল্যাডিয়েটরস, সানরং বার্নার্স, সুবেসি রাইডার্স, ওয়েসকাল টাইগার্স। চ্যাম্পিয়ান হয়েছে ‘সুবেসি রাইডার্স’। এই দলের অধিনায়ক ইমরান আহমেদ বলেন, শহরে খেলার মাঠের অপ্রতুলতা আর পারিবারিক বন্ধন এই দু’টি বিষয় মাথায় রেখে আমাদের এফসিএলের যাত্রা শুরু হয়েছে ২০০৯ সালে। ধারাবাহিকভাবে পরিবারের সবার সহযোগিতায়, খেলোয়াড়দের আন্তরিক চেষ্টায় ভালোভাবেই সম্পন্ন হয়েছে এর সবগুলো আসর।

ইমরান বলেন, ‘মাঠের অভাবেই আমাদের ছাদে খেলা শুরু। প্রায়ই ছাদে খেলা হয় নিজেরা নিজেরাই। হুট করে মাথায় আসে এক অন্য চিন্তা। শহুরে জীবনে ব্যস্ততা কারো থেকেই কারো কম নয়। আত্মীয়-স্বজন সবাই ব্যস্ত। কোনো অনুষ্ঠান ছাড়া কারো সাথে দেখা-সাক্ষাৎ হয় না। আমাদের চিন্তা ছিল, খেলাটাকে যদি পিকনিকের মতো কোনো অনুষ্ঠানে রূপ দেয়া যায় তবে পরিবারের আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে একটা গেট টুগেদার হলো। পরিবারের মুরব্বিদের সাথে আলাপ-আলোচনা হয় বিষয়টি নিয়ে। মুরব্বিরা সাদরে প্রস্তাব গ্রহণ করেন। তাদের সহযোগিতায় শুরু হয় এএফসিএল ২০০৯ সালে। বাংলাদেশে বিপিএল শুরু হওয়ার আগেই যাত্রা হয় আমাদের এএফসিএল অনেকটা আইপিএলের এর আদলে।

এফসিএসের খেলোয়ার এবং খেলার নিয়ম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এফসিএল এক দিনের একটি টুর্নামেন্ট। খেলা হয় চারটি দলে বিভক্ত হয়ে, প্রতি দলে থাকে সাতজন করে মোট ২৮ জন খেলোয়াড়। আত্মীয়ের বাইরে কাউকেই নির্বাচন করা হয় না। মামা-ভাগিনা, চাচা-ভাতিজা, খালাতো-মামাতো-চাচাতো-ফুফাতো ভাইদের মধ্য থেকে বাছাই করতে হয়। চারটি দল লিগ সিস্টেমে সবাই সবার সাথে খেলে। সেখান থেকে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষ দুই দল খেলে ফাইনাল। চারটি দলের থাকে চার রকমের রঙ্গিন জার্সি। পরিবারের আত্মীয়স্বজন সবার উপস্থিত থাকেন উৎসাহ দেয়ার জন্য। দলের মালিকদের পরিবারের সদস্যরা সাপোর্ট করে যার যার দল, উৎসাহ দেয় নিজেদের দলের খেলোয়াড়দের। মাঠে থাকে টানটান উত্তেজনা।

দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এই পরিবারের আত্মীয়রা ‘এফসিএল’ কেন্দ্র করে একত্রিত হয়। এবার যেমন ইটালি ও অস্ট্রেলিয়া থেকে এসেছেন একাধিক দলের সদস্য।

এফসিএলের দলের মালিক হচ্ছেন পরিবারের মুরব্বিরা। মুরব্বিরা নিজেরা আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিয়ে চারটি ভাগে বিভক্ত হন। তারপর শুরু হয় দল নির্বাচন। বলা যায়, খেলয়াড়দের জন্য দল নির্বাচনের দিনটি আরেকটি উৎসব। দল নির্বাচন হয় খেলার এক সপ্তাহ আগে। ২৮ জন খেলোয়াড় মোট সাতটি ক্যাটাগরিতে বিভক্ত হয় খেলার মানের বিবেচনায়। তারপর হয় খেলোয়াড় কেনাবেচা। চারটি দলের মালিকরা আইপিএলের’র নিলামের মতো করে নিজেদের দলের জন্য খেলোয়াড় কেনেন। আইপিএলের মতো খেলোয়াড়দের দাম ছয়-সাত কোটি হয় না, সংখ্যাটা হাজারেই সীমাবদ্ধ থাকে। যদিও এই টাকা খেলোয়াড়রা পায় না, খেলোয়াড় কেনাবেচার মোট টাকা দিয়েই এফসিএল আয়োজন করা হয়।

এফসিএলের দিন ওই বাড়িতে প্রায় ২০০ আত্মীয়ের সমাগম হয়। ফলে আয়োজনও শুরু হয় প্রায় মাস খানেক আগে থেকেই। দাওয়াত কার্ড ছাপানো, জার্সি বানানো, বাবুর্চি ঠিক করা, ডেকোরেটর ঠিক করা, ছাদ পরিষ্কার করা, ছাদ সাজানো, বাজার করা, খেলার সরঞ্জাম কেনা আরো অনেক কাজ। এইসব কাজে থাকে কম বেশি সব খেলোয়াড়ের সহযোগিতা। পুরষ্কার বিতরণ শেষে সবাই একসাথে খাওয়া দাওয়া করা এফসিএলের সবচেয়ে আনন্দঘন এক মুহূর্ত।

এই পরিবারের মুরব্বি হাজী সুলতান শেখের মৃত্যুর পর ছাদের এফসিএল মাঠের নামকরণ করা হয়েছে ‘হাজী সুলতান গ্রাউন্ড’। বাড়ির সবচেয়ে মুরব্বির নামে মাঠ হওয়ায় সবার আন্তরিকতা যেন আরো একটু বেড়েছে।

এফসিএলকে কেন্দ্র করে একসাথে হয়ে ছিলেন পরিবারের সব সদস্যরা

আমাদের সবার নাগরিক ব্যস্ততার মধ্যে পারিবারিক বন্ধন অটুট রাখার ক্ষেত্রে এই পরিবারের উদ্যোগ অনুকরণীয় হতে পারে। কারণ বছরে অনন্ত একবার সাবার সাথে দেখা হলেও আন্তরিকতা ও সম্পর্কের বন্ধন দৃঢ় হয়। ছোট ছোট মনোমালিন্য দূর হয়, মনোমালিন্যের জন্যই অনেক যৌথ পরিবার ভেঙে যাচ্ছে। কিন্তু এফসিএলের মতো এমন চমৎকার পারিবারিক আয়োজন সত্যি প্রশসার দাবিদার। শহুরে জীবনে খেলার মাঠের চরম সঙ্কটের বিপরীতে বুচিতিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কালাম সাহেরে বাড়ির ছাদ। যা এখন হাজী সুলতান গ্র্যাউন্ড নামে পরিচিত এলাকাবাসীর কাছে। প্রতিদিনই কিশোর-তরুণরা এই ছাদে খেলাধুলায় মেতে উঠছে। যা শিশু-কিশোর তরুণদের মেধা ও মননের সুস্থ বিকাশের ভূমিকা রাখছে দারুণভাবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে বিশ্বকে চমকে দিলো ভানুয়াতু বিতর্কিত ক্যাচের ছবির ক্যাপশনে মুশফিক লিখেছেন ‘মাশা আল্লাহ’ উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় ৭৩ জনকে বহিষ্কার করলো বিএনপি মিরসরাইয়ে অবৈধ সেগুনকাঠসহ কাভার্ডভ্যান জব্দ মানিকগঞ্জে আগুনে পুড়ে যাওয়া মলিরানীর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে বিশ্বরেকর্ড ইন্দোনেশিয়ার নারী ক্রিকেটার রোহমালিয়ার ‘এখন আমি কী নিয়ে বাঁচব’ যদি বন্ধু হও, সীমান্তে অহরহ গুলি কেন : ভারতকে ফারুক সাহারা মরুভূমির গরমের মতো অনুভূত হচ্ছে : সরকারকে দায়ী করে রিজভী মধুখালীর পঞ্চপল্লীতে ২ ভাইকে হত্যার প্রতিবাদে সমাবেশ শ্রীলঙ্কাভিত্তিক এয়ারলাইন্স ফিটসএয়ারের ঢাকা-কলম্বো সরাসরি ফ্লাইট চালু

সকল