১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪২৯, ০৮ রমজান ১৪৪৫
`
বসেমুবিপ্রবি’র ভিসি পদত্যাগের আন্দোলন ৫ম দিন

তোর আব্বারে ভিসি বানিয়ে দেই, শিক্ষার্থীদের  ভিসি

তোর আব্বারে ভিসি বানিয়ে দেই, শিক্ষার্থীদের  ভিসি - ছবি : সংগৃহীত

এই তোর আব্বা কি করে? তোর আব্বারে ভিসি বানায় দি (বানিয়ে দেই)। দেখি তোর বাবা বিশ্ববিদ্যালয় কেমন চালায়। কি আগুন জ্বালাবি এ জানায়োর। এ কি আগুন জ্বালাবি, কেন জ্বালাবি, কোন কোন জায়গা জ্বালায় আইছিস (এসেছিস)। তোরে তো এখন লাথি দিয়ে বের করে দিতে (দিতে) ইচ্ছা করতিছে (করছে)। এ কোনডারে (কোনটাকে) ছাড়বেন। এর একটা থেকে আরএকটা বেশি। এদের কথা শুনলি (শুনলে) মরা মানুষ তাঁজা হয়ে যাবে। কয়েকজন শিক্ষার্থীকে রুমে ডেকে এমনভাবে গালমন্দ করছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিন। পাশে বসে কোন শিক্ষার্থী ফেসবুকে কি স্টাটাস দিয়ে তা পড়ে শুনাচ্ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোঃ আশিকুজ্জামান ভূইয়া। শুধু ওইসব শিক্ষার্থীদেরই নয়। তাদের বাবা মাকে ডেকে এনেও শুনানো হয়েছে কটু কথা। করা হয়েছে অপমান। এমন এক অডিও ক্লিপস গতকাল থেকে ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

প্রোক্টর এক শিক্ষার্থীর ফেসবুক স্ট্যাটাস পড়ছিলেন, স্যার ও লিখেছে প্রতিবাদ করলে বহিস্কার করবে তো? করুক, কয়জনকে বহিস্কার করবে। আমরা তো অন্যায় কিছু করিনি। এ কথা শুনে ভিসি বল্লেন, তয় তুরা (তোরা) চালা আইসা (এসে) ইনভারসিটি (ইউনিভারসিটি)। তোর বাপরা (বাবারা) আইসা, মা’রা আইসা চালাক। আমরা ছাইড়া (ছেড়ে) দি। এ যা বাইর (বের হ)। যা বের হয়। এসময় শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা বার বার ক্ষমা চাইছিলেন। তাতেও থামছেন না ভিসি। তোর আব্বারে আইনা (এনে) চালা। তোর আব্বা বানাইছে বিল্ডিং? ১০৩ রুম কারে দেব, তোর কাছে শোনব? তোর কাছে শোনব না তোর মা’র কাছে শোনব। ১০৩ নম্বর নিয়ে তোর এত হেডেক ক্যান। ওই রুমডা (রুমটা) কি তোর আব্বার? এরই মধ্যে শোনা যাচ্ছিল এক শিক্ষার্থীর মায়ের কান্না জড়িত কন্ঠে সন্তানকে ক্ষমা করে দেয়ার আকুতি।
আবার ভিসি বলছেন- এ আপনার ছেলে কোনডা (কোনটা)? কি করেন আপনি? ও শিক্ষক আপনি? আপনার ছেলে লেখছে (লিখেছে) কিন্ডারগার্টেন এটা। কিন্ডারগার্টেনে আপনার ছেলেকে ভর্তি করছেন কেন? এ কিসের জন্য কিন্ডার গার্টেন লেখছিস। লাথি দিয়ে তোরে ফেলে দেব এই যায়গা থেকে। এ জানোয়ার। তোর তোর চৌদ্দ পুরুষের সাধ্য ছেল বিশ্ববিদ্যারয়ে ভর্তি হওয়ার। তুই তো জীবনেও চানস পাতি না। আমি এ বিভাগ খুলছিলাম (খুলেছিলাম) বলে তুই চানস পাইছিলি (পেয়েছিলে)। কোন বিশ্ববিদ্যাল থেকে এ যায়গায় কি কি খারাপ তুই ক। তোর শাস্তি অবেই (হবেই)। সবাই যদি কয় কেজিতি পড়ি। তলিতো আমি ভিসি থাকি না। আমি তো হেড মাস্টার হইয়া যাই।

বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের এ ক্ষোভ এক দিনের নয়। ভিসি স্যার বিশ্ববিদ্যালটিকে টর্চার সেলে পরিণত করেছেন। কোনো শিক্ষার্থী ভিসি স্যারের অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে তিনি তাদের এবং অভিভাকদের ডেকে গালিগালাজসহ মানষিক টর্চার করেন। এ থেকে বাদ যায় না শিক্ষকরারও। ওনার এসব কর্মকান্ডের সাথে প্রোক্টর আশিকুজ্জামান ভূইয়াসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা থাকেন।

এদিকে রোববার ৫ম দিনের মত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভিসি পদত্যাগের এক দফা এক দাবীর অনশন কর্মসূচী আরো জোরদার হতে দেখা গেছে। দুপুরে আন্দোলনকারীদের সাথে দেখা করেন গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্র লীগের সভাপতি আব্দুল হামিদ। এসময় তিনি বলেন, শনিবার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর যে হামলা হয়েছে আমরা জেলা ছাত্র লীগের পক্ষ থেকে তার তীব্র নিন্দা জানিয়েছি। গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্র লীগ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সকল যৌক্তিক আন্দোলনের সাথে থাকবে। পরে গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামীল লীগের সভাপতি চৌধূরী এমদাদুল হক, সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলী খানসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতারা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আল্টিমেটাম দিয়ে আন্দোলন বন্ধ করার প্রস্তাব দেন। কিন্তু তা শিক্ষার্থীরা মেনে না নিয়ে তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যতক্ষণ আমাদের আস্বস্ত না করবেন, ততক্ষণ আমার এ আন্দোলন চালিয়ে যাব।


আরো সংবাদ



premium cement