১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪২৯, ০৮ রমজান ১৪৪৫
`

চাঁদা ছাড়া ব্যবসা করা যায় না ফার্মগেট-কাওরানবাজারে

-

চাঁদা না দিয়ে কোনো কাজ করতে পারে না রাজধানীর ফার্মগেট ও কাওরানবাজারের ব্যবসায়ীরা। ছোট-বড় প্রত্যেক ব্যবসায়ীকে দৈনিক সাপ্তাহিক বা মাসিক হারে গুনতে হয় মোটা অঙ্কের চাঁদা। এ টাকা না দেয়ায় একাধিক ব্যবসায়ীর হাত-পা ভেঙে দেয়া হলেও ভয়ে মুখ খোলেনি কেউ। এমনকি পুলিশের কাছে অভিযোগ দেয়ার সাহসটুকুও হয় না তাদের।

ফার্মগেট থেকে কাওরানবাজার, পান্থপথসহ আশপাশের এলাকার ফুটপাথ থেকে শুরু করে কাঁচাবাজার, বিভিন্ন রুটের টেম্পো স্ট্যান্ড, লেগুনা স্ট্যান্ড, বড় ব্যবসায়ী কেউ চাঁদার আওতার বাইরে নয়। এমনকি সরকারি গাড়ি পার্কিং থেকেও চাঁদা তোলার অভিযোগ রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক সময় ফার্মগেট ও কাওরানবাজার এলাকায় অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণ করত শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম ও পিচ্চি হান্নান। র্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় পিচ্চি হান্নান। অন্য দিকে গ্রেফতার করা হয় সুইডেন আসলামকে। বর্তমানে সে কারাগারে আছে। পিচ্চি হান্নান নিহত ও সুইডেন আসলাম গ্রেফতারের পর তাদের সহযোগীরাই আদায় করছে এসব চাঁদা। অভিযোগ রয়েছে এসব সন্ত্রাসী নিয়ন্ত্রণ করছে যুবলীগ নেতা সাব্বির আলম লিটু এবং পিচ্চি হান্নানের বন্ধু আনোয়ার পাশা লিটন। তাদের ছত্রছায়ায় থেকে দখলদারিত্ব, চাঁদাবাজি, ছিনতাই ও মাদক কারবারসহ নানা ধরনের অপকর্ম করে যাচ্ছে দুর্বৃত্তরা। ফুটপাথ, লেগুনা, সিএনজিসহ বিভিন্ন পরিবহন থেকে তারা প্রতিদিন তুলছে লাখ লাখ টাকার চাঁদা। প্রশাসনের নাকের ডগায় এ ধরনের অপকর্ম চললেও রহস্যজনক কারণে তারা নীরব ভূমিকা পালন করে আসছে বলে অভিযোগ করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগীরা।

সূত্র জানায়, কাওরানবাজারের কাঁচামাল ব্যবসায়ী মো: জসিম উদ্দিন খানের কাছে মাসিক ৩০ হাজার টাকা এবং এককালীন দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে সন্ত্রাসীরা। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে জসিম উদ্দিন খানকে তুলে নিয়ে গিয়ে তার দুই পা ভেঙে দেয়া হয়। জানিয়ে দেয়া হয়, ব্যবসা করতে হলে চাঁদা দিতে হবে। একই এলাকার আলু মার্কেটের দোতলায় রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী মো: জাহাঙ্গীরের কাছে মাসিক ২০ হাজার এবং এককালীন দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। কিন্তু চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় তাকেও রাতের আঁধারে তুলে নিয়ে হাত-পা ভেঙে দিয়ে রাস্তায় ফেলে রাখা হয়। কাওরানবাজারে (কিচেন মার্কেট, বাপেক্স, পরিবারপরিকল্পনা ভবন ও পেট্রোবাংলার সামনে) পিকআপ স্ট্যান্ড থেকে পিকআপ প্রতি এক হাজার টাকা করে ৩৫০টি পিকআপ থেকে প্রতি মাসে সাড়ে তিন লাখ টাকা চাঁদা আদায় করা হয়।

ভুক্তভোগী ড্রাইভার রবিউল ও রাসেল জানান, চাঁদা না দিলে চলে নির্যাতন। এমনকি ওই এলাকায় গাড়ি চালানোই সম্ভব হয় না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফার্মগেট আনন্দ সিনেমা হলের সামনে থেকে নিউমার্কেট-আজিমপুরগামী টেম্পো থেকে প্রতিদিন ৪০০ টাকা করে চাঁদা আদায় করে চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের সদস্যরা। ফার্মগেটের সেজান পয়েন্ট থেকে কুতুববাগ পর্যন্ত ফুটপাথের দোকান, আনন্দ সিনেমা হল থেকে আরএস টাওয়ার, আরএস টাওয়ার থেকে পান্থপথ সব এলাকা আলাদা করে চাঁদা আদায় করা হয়ে থাকে।

এ ব্যাপারে যুবলীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের সহসভাপতি সাব্বির আলম লিটু মোবাইলে নয়া দিগন্তকে বলেন, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী নিজেদের অসৎ স্বার্থ হাসিলের জন্য অপপ্রচার চালিয়ে আমাকে হেয় করার চেষ্টা করছে।


আরো সংবাদ



premium cement