২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

পৃথিবীর আদি ইবাদতগৃহ মসজিদ আল হারাম

-

পৃথিবীর আদি ইবাদতগৃহ মসজিদ আল হারাম। অবস্থান সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে। বর্তমানে যেটি কাবাঘর নামে পরিচিত সে ঘরটিকেই কুরআনে মসজিদ আল হারাম নামে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে পরবর্তীতে কাবাঘরের চারপাশে নতুন নির্মিত বা সম্প্রসারিত মসজিদ বর্তমানে মসজিদ আল হারাম নামে পরিচিত। ইসলামের সবচেয়ে পবিত্র স্থান বর্তমানে মসজিদ আল হারাম বা কাবাঘর এবং এর সংলগ্ন চত্বর। জমজম কূপ, সাফা ও মারওয়া পাহাড়, হাজরে আসওয়াদ, মাকামে ইবরাহীমের মতো আরো অনেক নিদর্শন এখনো বিদ্যমান রয়েছে মসজিদ আল হারামের চত্বরে। স্থাপত্যশৈলী, বাহ্যিক সৌন্দর্য নয় বরং এ মসজিদের প্রতি মানুষের আকর্ষণ ঐশ্বরিক এবং অন্তর্গত বিষয়। এর প্রতি মানুষের আকর্ষণ আল্লাহপ্রেমের প্রকাশ।
এ মসজিদ চত্বরে প্রবেশের সাথে সাথে মানুষের মনে ভেসে আসতে থাকে হজরত ইবরাহীম, হজরত ইসমাঈল, হজরত মুহাম্মদ সা:এর স্মৃতিসহ কুরআনে বর্ণিত আরো অনেক ঘটনার স্মৃতি যা মানুষের মনকে ভীষণভাবে আন্দোলিত করে।
বর্তমানে সারা বিশ্বের মুসলমানরা এ কাবাঘর বা মসজিদ আল হারামের দিকে মুখ করে সালাত আদায় করে এবং এটি কুরআনের নির্দেশ। এ ছাড়া এ ঘর পর্যন্ত পৌঁছানো যার সামর্থ্য রয়েছে তার জন্য হজ করাও অবশ্য কর্তব্য করা হয়েছে কুরআনে। সে কারণে এটি সারা বিশ্বের মুসলমানদের মিলনকেন্দ্র। পৃথিবীতে মানুষের সবচেয়ে বড় সমাগম স্থল। মানুষে মানুষে ভেদাভেদহীনতা আর ভ্রাতৃত্ববোধের প্রতীক। সাদা কালো পার্থক্য নয়, রক্তের সম্পর্কও মুখ্য বিষয় নয় বরং মানুষে মানুষে বন্ধনের সূত্র এক আল্লাহতে বিশ্বাস। এ পরিচিতিই প্রতিনিয়ত ঘোষণা করছে মসজিদ আল হারাম। কুরআনে মসজিদ আল হারামের কথা উল্লেখ রয়েছে। সূরা বনী ইসরাঈলের শুরুতেই আল্লাহ বলেছেন, পবিত্র ও মহিমাময় তিনি যিনি তাঁর বান্দাকে রজনীযোগে ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদ আল হারাম থেকে মসজিদ আল আকসা পর্যন্ত।
কুরআনে বলা হয়েছে পৃথিবীর প্রথম ঘর অবস্থিত বাক্কায় (মক্কা)। বর্তমানে যে কাবাঘর তা হজরত ইবরাহীম এবং তার পুত্র হজরত ইসমাঈল কর্তৃক নির্মাণের কথা বলা হয়েছে কুরআনে। সে হিসেবে এটিই পৃথিবীর আদিমতম ইবাদতগৃহ। তবে তাদের নির্মিত সেই কাবাঘর পরবর্তীতে অনেকবার পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। তবে কাবাঘরের দেয়ালে স্থাপিত হাজরে আসওয়াদ বা কালো পাথর একমাত্র আদি বস্তু, যা হজরত ইবরাহীমের সময় থেকে টিকে আছে বলে বিভিন্ন লেখায় উল্লেখ করা হয়েছে।
পবিত্র আল কুরআন-এর বর্ণনা অনুযায়ী হজরত ইসমাঈলকে শিশু অবস্থায় বর্তমান কাবার পাশে রেখে যান পিতা হজরত ইবরাহীম এবং পরবর্তীতে তিনি রসূল হন। কাবাঘর আল্লাহর ইবাদতগৃহ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও এর আগে হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ আল্লাহর একত্ববাদ ভুলে পৌত্তলিকতায় লিপ্ত হয়। ফলে মক্কা বিজয়ের আগে কাবায় স্থান পায় ৩৬০টি মূর্তি।
শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ সা: কর্তৃক মক্কা বিজয়ের পর ভেঙে ফেলা হয় কাবার মূর্তি। এরপর সময়ের পরিক্রমায় কাবাঘরে মানবসমাগম বৃদ্ধির কারণে বিভিন্ন সময় ধাপে ধাপে মসজিদ আল হারামের চারপাশ ঘিরে নির্মাণ এবং সম্প্রসারণ করা হয় নতুন মসজিদ অবকাঠামো, যা বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মসজিদে পরিণত হয়েছে।
তবে ৬৯২ সালের আগ পর্যন্ত কাবাঘরের পাশে ছোট খোলা একটি জায়গা মসজিদ হিসেবে ব্যবহার হতো। ৬৯২ সালে সর্বপ্রথম কাবার চার দিকে ঘর নির্মাণ করা হয় মসজিদ হিসেবে এবং এর মাধ্যমে ছাদসহ দেয়াল দিয়ে ঘেরা হয় কাবা। এর প্রায় ১০০ বছর পর সম্প্রসারিত মসজিদের কাঠের খুঁটি সরিয়ে মার্বেল খুঁটি স্থাপন করা হয়। নির্মাণ করা হয় মিনার এবং বাড়ানো হয় সালাতের স্থান।
এর দীর্ঘকাল পরে তুরস্ককেন্দ্রিক উসমানীয় সাম্রাজ্যের সুলতান দ্বিতীয় সেলিম প্রধান রাজকীয় স্থপতি মিমার সিনানকে কাবাঘরের চারপাশের মসজিদ পুনর্নির্মাণের আদেশ দেন। এ সময় সমতল ছাদের পরিবর্তে ক্যালিওগ্রাফি সংবলিত গম্বুজ ও নতুন স্তম্ভ স্থাপন করা হয়। এগুলো বর্তমান মসজিদের সবচেয়ে পুরনো প্রতœ স্থাপনা হিসেবে পরিচিত। ১৬২১ ও ১৬২৯ সালের বন্যায় কাবা ও চারপাশের মসজিদের দেয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১৬২৯ সালে চতুর্থ সুলতান মুরাদের সময় এ মসজিদ সংস্কার করা হয়। এ সময় মসজিদে পাথরের নতুন খিলান ও তিনটি নতুন মিনার নির্মাণ করা হয়। মসজিদের মেঝেতে মার্বেলের নতুন আচ্ছাদন স্থাপন করা হয়। এরপর ৩০০ বছর পর্যন্ত আর কোনো সংস্কার প্রয়োজন হয়নি মসজিদ আল হারামে।
বর্তমানে সৌদি রাজপরিবারের শাসন শুরুর পর ১৯৫৫ থেকে ১৯৭৩ সালের মধ্যে মসজিদ আল হারামে বড় ধরনের সংস্কার করা হয়। এ সময় আরো চারটি মিনার সংযুক্ত করা হয়। ছাদ এবং মেঝেতেও সংস্কার করা হয়। মেঝেতে কৃত্রিম পাথর এবং মার্বেল বসানো হয়। মসজিদকে আরো বেশি সম্প্রসারণের মাধ্যমে সাফা এবং মারওয়া পাহাড়কে মসজিদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
বাদশা ফাহাদের সময় ১৯৮২ থেকে ১৯৮৮ সালের মধ্যে বাদশাহ ফাহাদ গেটের মাধ্যমে নতুন নামাজের স্থান নির্মাণ করা হয়। এ ছাড়া মসজিদের বাইরের আরো জায়গা নামাজের জন্য নির্ধারণ করা হয়। ২০০৫ সাল পর্যন্ত আরো ১৮টি গেট, তিনটি গম্বুজ এবং ৫০০ মার্বেল খুঁটি নির্মাণ করা হয়। এ ছাড়া তাপ নিয়ন্ত্রিত মেঝে, এয়ার কন্ডিশন, চলন্ত সিঁড়ি এবং পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা করা হয়।
২০০৮ সালে সৌদি বাদশা আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল আজিজ ১০ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের মসজিদ সম্প্রসারণ কর্মসূচি ঘোষণা করে। এরপর বর্তমান বাদশা সালমান পুনরায় সম্প্রসারণ কর্মসূচি ঘোষণা করেন, যা শেষ হলে মসজিদে মুসল্লি ধারণক্ষমতা দাঁড়াবে ২৫ লাখ। মোট মিনার হবে ১১টি। বর্তমানে মসজিদে ৮১টি গেট রয়েছে। মোট নামাজের স্থান ৩ লাখ ৫৬ হাজার বর্গমিটার।
এ মসজিদে প্রবেশ, এখানে অবস্থান করে ইবাদত যেমন মানুষের অন্তরে প্রশান্তির বন্যা বয়ে আনে তেমনি এ মসজিদের বিশালত্ব, ইসলামী স্থাপনা এবং সার্বিক সৌন্দর্যও মুগ্ধ করে মানুষকে। মসজিদের অদূরে এখনো বিদ্যমান বিশাল পাহাড় পর্বত মানুষকে আকৃষ্ট করে।
তবে কাবার চারদিকে ব্যাপকভাবে ভবন নির্মাণের ফলে এখানকার অনেক নিদর্শন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া বিষয়ে অনেকে উদ্বিগ্ন।


আরো সংবাদ



premium cement
‘প্রত্যেককে কোরআনের অনুশাসন যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে’ মতলব উত্তরে পানিতে ডুবে ভাই-বোনের মৃত্যু প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের শেষ ধাপের পরীক্ষা শুক্রবার লম্বা ঈদের ছুটিতে কতজন ঢাকা ছাড়তে চান, কতজন পারবেন? সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করলেন ভুটানের রাজা জাতীয় দলে যোগ দিয়েছেন সাকিব, বললেন কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই কারওয়ান বাজার থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে ডিএনসিসির আঞ্চলিক কার্যালয় এলডিসি থেকে উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন : প্রধানমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি আহসান উল্লাহ ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার বিষয়ে ইউনূস সেন্টারের বিবৃতি আনোয়ারায় বর্তমান স্বামীর হাতে সাবেক স্বামী খুন, গ্রেফতার ৩

সকল