২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দক্ষিণ চট্টগ্রামে অর্গানিক দুধ উৎপাদনে ব্যাপক সাড়া

দক্ষিণ চট্টগ্রামে অর্গানিক দুধ উৎপাদনে ব্যাপক সাড়া - ছবি : সংগৃহীত

মাদরাসা অধ্যাপক ও হোমিও চিকিৎক অধ্যাপক ফখরুল ইসলামের অর্গানিক মুরগী ও ডিম উৎপাদন করে আর্ন্তজাতিক স্বীকৃতির লাভের পরে এবার দক্ষিণ চট্টগ্রামে দুই ব্যক্তিগত উদ্যোক্তা সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যসম্মত(অর্গানিক) গরুর দুধ উৎপাদন করে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে সাতকানিয়ার পুরানগড় শীল পাড়ায় আশা ডেইরী ফার্ম ও একই উপজেলার মাদার্শা গ্রামের সিয়াম ডেইরী ফার্ম । নিরাপদ স্বাস্থ্যসম্মত দুধ নিয়ে যে মুহূর্তে আলোচনার ঝর বইছে ঠিক সেই সময়ে দুই সফল উদ্যোক্তার অর্গানিক গরুর দুধ বেশ সাড়া জাগিয়েছে।

নিরাপদ স্বাসম্মত অর্গানিক দুধ উৎপাদনে শতভাগ সফল হয়েছেন শীলঘাটা বড়ুয়া পাড়ার বাসিন্দা পুলিশ পরিদর্শক(ডিবিতে কর্মরত) বাবু রঞ্জিত বড়ুয়া ও মাদার্শা গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা তৌহিদুল ইসলাম।

মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর উপাদন এন্টিবায়োটিক, সিনথেটিক ভিটামিন,মেটালিক পয়জন(ধাতব পদার্থ), হ্যাবী মেটাল বা শীশা, ক্রোমিয়াম, এ্যাস্ট্রয়েড(কৃত্রিম হরমোন) প্রয়োগ ছাড়া ও আর্সেনিক, পেস্টিসাইড ও রাসায়নিক সার মুক্ত কাঁচা ঘাস ও খড় খাওয়ানোর মধ্যদিয়ে সম্পূর্ন ভাবে স্থাস্থ্যসম্মত ডেইরী ফার্ম গড়ে তোলেন তারা। সেই রাসায়নিক সার পেষ্টিসাইট মুক্ত খাবার ও সম্পূর্ণ র্হাবাল ও ভেষজ ও বিকল্প ঔষধ গ্রয়োগ করেই অর্গানিক বা সর্ম্পূণ স্বাথ্যসম্মত ভাবেই দুধ উৎপাদন করা হয় এই ডেইরী ফার্ম দুটোতেই।এ কারণে এই অর্গানিক দুধ দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ পুরো দেশে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

এর আগে প্রায় ১০ বছর পূর্বে একই উপজেলার আরেক সফল উদ্যোক্তা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে অর্গানিক মুরগী ডিম উৎপাদন করে।

অধ্যাপক ফখরুল ইসলাম চট্টগ্রাম সাতকানিয়ায় একটি মাদ্রাসায় অধ্যাপনার পাশাপাশি দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে হোমিও ও হার্বাল মেডিসিন এবং জৈব বালাই নাশক ও খাদ্য (স্বাস্থ্যসম্মত) প্রয়োগ করে তিনি আর্ন্তজাতিক এ স্বীকৃতি পেলেন। সাথে সাথে বিশ্বে উদ্ভাবিত বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের পেটেন্টের পাশে ফখরুলের স্বাস্থসম্মত ডিম ও মুরগির পের্টান ও স্থান করে নিয়েছে।

বাংলাদেশ পেটার্ন ডিজাইন ও ট্রেড মার্ক অধিদপ্তর কর্তৃক ১০০৫৬০১ নং স্বারকমূলে বিশ্বে প্রথমবারের মতো তার অর্গানিক (স্বাস্থ্যসম্মত) মুরগি ও মুরগির ডিম উৎপাদনের পেটার্ন অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্ব খাদ্য ঘাটতি মোকাবেলায় অধিকহারে খাদ্য উৎপাদনের প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত কেমিক্যাল ও এন্টিবায়োটিক, রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করে খাদ্য উৎপাদন করা হচ্ছে এর ফলে বিশ্বে খাদ্য ব্যবস্থা মানবদেহের জন্য যখন হুমকি হয়ে দাড়িয়েছে যখন পুরো বিশ্ব নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থা নিয়ে উদগ্রিব।

পাশাপাশি এন্টিবায়োটিক ও বিষাক্ত কেমিক্যালমুক্ত স্বাস্থ্যসম্মত (অর্গানিক) নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য বিষাক্ত কীটনাশক ও কেমিক্যাল সহনিয় পর্যায়ে এনে স্বাস্থ্যসম্মত নিরাপদ বালাই নাশক ও জৈব সার উৎপাদনের দিকে ঝুকছে ঠিক সেই মুহুর্তে ফখরুলের হারবাল ও হোমিও মেডিসিন জৈব বালাইনাশক ও সার ব্যবহার করে পরিবেশবান্ধব উপায়ে স্বাস্থ্যসম্মত (অর্গানিক) নিরাপদ মুরগি ও ডিম উৎপাদন করে রীতিমতো বিশ্বে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। তেমনি ভাইে একই পদ্ধতি অনুস্মরণ করে সফল দুই উদ্যোক্তা অর্গানিক দুধ উৎপাদন করে বেশ আলোড়ন সৃস্টির সাথে দেশ ব্যাপী নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে উদাহরণ হয়ে থাকবে।

বৃহস্পতিবার অধ্যাপক ফখরুল বলেন, বাজারে প্রাপ্ত ডিম ও মাংসের মুরগিতে মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর এন্টিবায়োটিক, ক্রোমিয়াম, অতিরিক্ত কোলেস্টরল, সীসা, ক্লোরামফেনিকল, ষ্টরয়েড রয়েছে। যা মানবস্বাস্থ্যের জন্য খুব মারাত্মক হুমকি স্বরূপ। এর ফলে আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছি। এসব খেয়ে আমাদের শরীরে এখন টকসিন, রিউমেটিক ফিভার, পঁচন, ডায়াবেটিস, চর্ম, হৃদরোগ সৃষ্টি হচ্ছে। তাছাড়া কোলেস্টরল বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি বলেন বাজারে দু’ধরনের কেমিক্যাল পাওয়া যায়। একটি হচ্ছে সিনথেটিক অপরটি প্রাকৃতিক বা জৈব কেমিক্যাল। জৈব কেমিক্যাল মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ। যার কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। অপরদিকে সিনথেটিক কেমিক্যালস মানবদেহে ৯৫ ভাগ শোষিত হয়না।

তিনি বলেন তার ফার্মে বয়লার ও লেয়ার মুরগিকে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে উৎপাদিত হারবাল খাবার ও হোমিও মেডিসিন ব্যবহার করা হয়। এর ফলে ডিম ও মুরগি সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যসম্মত হিসেবে রুপান্তরিত হয়।

ফখরুল বলেন, ‘১৮ বছর আগে অর্গানিক ভাবে ডিম ও মুরগি উৎপাদনে মনোযোগী হই। আর ২০১০ সালের দিকে প্রথম সাফলতা পাই। তখন নিজের উদ্যোগে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হই যে আমার খামারে উৎপাদিত ডিম ও মুরগি অ্যান্টিবায়োটিকমুক্ত। পরবর্তীতে সরকারি পরীক্ষাগার তথা খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ শিল্প ও বিজ্ঞান গবেষণাগার এবং চট্টগ্রামে ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। সরকারি পরীক্ষাগারেও অভিন্ন ফল আসায় শতভাগ নিশ্চিত হই যে সত্যিকারভাবেই আমি অ্যান্টিবায়োটিকমুক্ত ডিম ও মুরগি উৎ্পাদন করতে সক্ষম হয়েছি।

তিনি আরো বলেন, ‘সরকারি পর্যায়ে পরীক্ষায় ইতিবাচক ফল পাওয়ার পর কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা ও নিকটজন পরামর্শ দেন এই উদ্ভাবনীর পেটেন্ট করাতে। তারপর ২০১২ সালের শেষের দিকে শিল্প মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ শুরু করেন তিনি। অবশেষে প্যারিস কনভেনশন অনুযায়ী বাংলাদেশ পেটার্ন ডিজাইন ও ট্রেড মার্ক অধিদপ্তর কর্তৃক ১০০৫৬০১ নং স্বারকমূলে বিশ্বে প্রথমবারের মতো তার অর্গানিক (স্বাস্থ্যসম্মত) মুরগি ও মুরগির ডিম উৎপাদনের পেটার্ন অনুমোদন পায়।

একই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সফল উদ্ধোগে উদ্মোগে পুলিশ পরিদর্শক রঞ্জিত বড়ুয়া ও তৌহিদুল ইসলাল অর্গানিক ডেইরী ফার্ম গড়ে তুলেছেন। পুলিশ পরিদর্শক রঞ্জিত বড়ুয়া বলেন, তার স্ত্রীর নামে এই ডেইরী ফার্ম গড়ে তুলেছেন, তিনি জানান, ২৫টি বিদেশী গাভি রয়েছে এর মধ্যে ২০ গাভি বর্তামাণে দুধ দেয় । প্রতিদিন গড়ে ২০০ লিটার দুধপান। সকালে একবার ও বিকালে আরেক বার এভাবে প্রতিদিন দুইবার দুধ সংগ্রহ করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেন।

খামাড়ি তৌহিদুল ইসলাম বলেন, তার ফার্মে গাভী রয়েছে ২৭ টি প্রতিনি দিন তিনিও দুই বেলা দুধ সংগ্রহ করে ২২২৫ লিটার দুধ সংগ্রহ করে স্থানীয় বাজারেই তা বিক্রি করেন। তারা উভয়ই বলেন, উৎপাদিত দুধ বিক্রিতে না না বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। সরকারী ভাবে উৎপাদিত দুধ ক্রয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতো তাহলে এলাকায় আরো অনেকই এধরণের অর্গানিক ডেইরী ফার্ম গড়ে তুলবেন আশা প্রকাশ করেন।


আরো সংবাদ



premium cement