১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শিক্ষাঙ্গনে যৌনসন্ত্রাস

-

গত ১০ ডিসেম্বর পত্রিকার রিপোর্ট ছিলÑ অবশেষে প্রধান শিক্ষক ও বখাটের দ্বারা একাধিকবার ধর্ষণের শিকার সেই পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী (১২) সিজারিয়ানের মাধ্যমে ছেলে সন্তানের মা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার ফরিদপুর ইউনিয়নের ভোজমহল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। আর এভাবে প্রায় সময় দেখা যায়, পত্রিকায় পাতায় আঁতকে উঠার মতো শিরোনাম ‘শিশুর কোলে শিশু’। অর্থাৎ প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষার্থী সন্তান জন্মদান করেছে। এই অনৈতিক কাজটা কে করছে। স্বয়ং তার বাবার সমতুল্য শিক্ষক। কী আশ্চর্যের বিষয়!
নেপোলিয়ান বোনাপাট বলেছেন ‘আমাকে একটা শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাকে শিক্ষিত জাতি উপহার দেবো’ আমাদের ঘুণে ধরা শিক্ষাব্যবস্থায় মানুষ তৈরি হচ্ছে? নাকি নৈতিকতাবর্জিত শিক্ষিত মানুষ তৈরি হচ্ছে! শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। আর শিক্ষকদের বলা হয়ে থাকে মানুষ গড়ার কারিগর।
এমনও দেশ আছে, যে দেশের প্রায় সবাই শিক্ষিত বা প্রকৃত শিক্ষার হার খুবই বেশি। এ ব্যাপারে আমরা শ্রীলঙ্কার উদারহণ টানতে পারি। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যেমনÑ শিক্ষার্থীদের জন্য খুবই উপযোগী তেমনি শিক্ষক-শিক্ষিকা বা পাঠদানকারীরাও শিক্ষার্থীদের খুব আপনজনের মতো। বিশেষ করে মেয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে অভিভাবকদের দুশ্চিন্তা যেন আরো বেশি। কারণ, মাঝে মধ্যেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের ছাত্রী কেলেঙ্কারির খবর প্রকাশ পাচ্ছে গণমাধ্যমে। হঠাৎ করে এ ধরনের ঘটনা ফের বেড়েছে উদ্বেগজনক হারে। শিক্ষকদের দেখাদেখি একশ্রেণীর ছাত্র বা বখাটেরাও একের পর এক এ ধরনের জঘণ্যতম ঘটনা ঘটাচ্ছে।
দেশসেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভিকারুননিসা নূন স্কুলের বসুন্ধরা শাখায় শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রী নিপীড়নের ন্যক্কারজনক খবর ছাপা হয়েছে পত্র-পত্রিকায়। জানা গেছে, ওই শিক্ষক (ভিকারুননিসা নূন স্কুলের) ছাত্রী কেলেঙ্কারির অভিযোগে রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ থেকেও বহিষ্কৃত হন। আরো জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির বসুন্ধরা শাখার আরো কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধেও যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে। ধিক্কার জানায় দেশবাসী ও অভিভাবকরা!
ঈশ্বরদীর একটি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওই স্কুলের এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করতে গেলে তার চিৎকারে এলাকাবাসী দৌড়ে এসে ছাত্রীটিকে উদ্ধার করে এবং প্রধান শিক্ষককে আটকে রেখে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। জানা যায়, আদালত অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষককে চার মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে জেলহাজতে পাঠায়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌর শহরের একটি বিদ্যালয়ের একজন ইংরেজি শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ তাকেও গ্রেফতার করে।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী বা শিশুদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনকে অবৈধ ও সংবিধান পরিপন্থী হিসেবে রায় দেন আদালত। নির্যাতন বন্ধ ও তা নজরদারির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি স্বাধীন কমিশন গঠনেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আদালত নির্যাতনের বিষয়কে অসদাচরণ হিসেবে গণ্য করে তা জেলা প্রশাসকের (ডিসি) নেতৃত্বাধীন জেলা উন্নয়ন কমিটির এখতিয়ারভুক্ত করারও নির্দেশ দেন।
শিক্ষকের নির্যাতন বা যৌন নির্যাতনের ভয়ে অনেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়া থেকে বিরত থাকে। সামান্য শাস্তি দেয়ার নামেও অনেক সময় ছাত্রীদের গায়ে শিক্ষকের হাত পড়ে। গ্রামে স্কুলের বড় বড় ছাত্রীর গায়ে অনেক শিক্ষক হাত দেন। বেশির ভাগ ছাত্রীর সরলতার সুযোগ নিয়েই শিক্ষকরা এসব করে থাকেন।
শিক্ষকরা এখন ছাত্রীদের ওপর চড়াও হওয়ার নানা সুযোগ ও কৌশল খুঁজে বেড়াচ্ছেন। তবে ভালো শিক্ষক যে নেই তা বলা যাবে না। শিক্ষার্থীর ওপর শিক্ষকের নির্যাতন মৃত্যুর মতো ঘটনাও ঘটাতে পারে। মনোবিজ্ঞানীরা বলেছেন, নির্যাতনের কারণে অনেকে মানসিক ভারসাম্যও হারিয়ে ফেলতে পারে। অকালে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার পেছনে এটিও কারণ বলে জানা গেছে। অনেকে শাস্তির ভয়ে স্কুলে না গিয়ে নানা অসামাজিক কাজে লিপ্ত হয় অল্প বয়সেও।
আমাদের দেশের সরকার শিক্ষার হার বাড়ানোর ব্যাপারে বেশি উদ্যোগী। কিন্তু আগে বাড়ানো উচিত শিক্ষার মান। শিক্ষার মান বাড়ানোর প্রশ্ন উঠলে অবশ্য শিক্ষকদের উন্নত মানসিকতার প্রশ্ন এমনিতেই চলে আসে। এ দেশে শিক্ষকদের মেধা বৃদ্ধি, চরিত্র গঠন প্রভৃতি সম্বন্ধে সরকারি নজরদারির খুবই অভাব। দুর্নীতি বা নানা প্রভাব খাটিয়ে অনেকে শিক্ষকতায় ঢুকে বলেও অভিযোগের কথা শোনা যায়।
দেশের কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মান এতটাই নিচে নেমে গেছে যে, ছাত্রীদের পাশাপাশি শিক্ষিকাকেও যৌন হয়রানির শিকার হতে হয়। এসব সংক্রান্ত সব খবর মিডিয়ায় আসে না। না হলে শিক্ষাঙ্গনে যৌন সন্ত্রাসের খবর আরো বেশি করে প্রচার হতো।
আমরা চাই না শিক্ষাঙ্গন অরক্ষিত হয়ে পড়ুক। আমরা চাই, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়ালেখা করার স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসুক। এ জন্য সরকারের পাশাপাশি শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। দেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়েও কমছে না যৌনসন্ত্রাস। সেখানেও মাঝে মধ্যে ঘটছে নানা অপ্রীতিকর ঘটনা। অনেকে বলছেন, শিক্ষাঙ্গনে বর্তমানের মতো এত বেশি যৌন সন্ত্রাস আগে কখনো লক্ষ করিনি। এ কলঙ্ক সহজে ঘোচার মতোও নয়।
শুধু শিক্ষিত নয়, সুশিক্ষিত জাতি গঠন করতে আমাদের পাঠ্যপুস্তকে নৈতিকতার শিক্ষা ও ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করলে আগামী প্রজন্ম শিক্ষাঙ্গনের মতো পূত পবিত্র স্থানে যৌন সন্ত্রাসের মতো একশ্রেণীর বিকৃত মস্তিষ্কের ন্যক্কারজনক কার্যক্রম বন্ধ হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
নেতানিয়াহুসহ ইসরাইলি মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করবে আইসিসি! ঢাকায় কাতারের আমিরের নামে সড়ক ও পার্ক তেহরানের প্রধান বিমানবন্দরে পুনরায় ফ্লাইট চালু হামলায় কোনো ক্ষতি হয়নি : ইরানি কমান্ডার ইরানের পরমাণু কর্মসূচির ‘কেন্দ্র’ ইস্ফাহান : সাবেক মার্কিন কর্মকর্তা মিয়ানমারের বিজিপির আরো ১৩ সদস্য বাংলাদেশে রুমায় অপহৃত সোনালী ব্যাংকের সেই ম্যানেজারকে চট্টগ্রামে বদলি দুবাইয়ে বন্যা অব্য়াহত, বিমানবন্দর আংশিক খোলা ভারতে লোকসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু শুক্রবার সকালে ঢাকার বাতাস ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ শুক্রবার সকালে ঢাকার বাতাস ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’

সকল