২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

নারী চা-শ্রমিকের চালচিত্র

-

সিলেট ‘দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দেশ’ হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশের চা শিল্পের যাত্রা শুরু হয় সিলেট অঞ্চলে চা চাষের মাধ্যমে। আজ থেকে ১৬৫ বছর আগে ১৮৫৪ খ্রিষ্টাব্দে সিলেটের মালনিছড়ায় দেশে সর্বপ্রথম বাণিজ্যিকভাবে চা চাষের মাধ্যমে মূল্যবান এ শিল্পের যাত্রা শুরু হয়। ব্রিটিশ শাসনামলে যখন এ দেশে চা বাগান স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়, সে সময় চা চাষের জন্য প্রচুর শ্রমিকের প্রয়োজন অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে। সে লক্ষ্যে ব্রিটিশ কোম্পানিগুলোর তত্ত্বাবধানে অবিভক্ত ভারতের বিহার, উড়িষ্যা, অন্ধ্রপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপ্রদেশসহ বিভিন্ন স্থান থেকে প্রচুর শ্রমিকের আগমন ঘটে এ দেশে। এরপর ক্রমান্বয়ে দেশের চা শিল্প সম্প্রসারণের সাথে সাথে চা-শ্রমিকরা ছড়িয়ে পড়েন বিভিন্ন এলাকায়। বাড়তে থাকে চা চাষ সম্প্রসারণ এলাকা, বাড়তে থাকে শ্রমিকের সংখ্যাও।
চা শিল্পের সাথে নারী চা-শ্রমিকদের নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান। নারী শ্রমিকরাই চা গাছের ‘দুটি পাতা একটি কুঁড়ি’ চয়ন করে থাকেন। চা শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টদের ধারণা, চা গাছ থেকে দু’টি পাতা একটি কুঁড়ি উত্তোলনে বা চা চয়নে পুরুষ শ্রমিকদের থেকে নারী শ্রমিকরা অধিক দক্ষ। চা গাছ থেকে কুঁড়ি উত্তোলনে নারী শ্রমিকদের হাতের আঙুল পুরুষ শ্রমিকদের তুলনায় অনেক বেশি সক্রিয় থাকে। তাই তো নারী শ্রমিকরা চা শিল্পের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রায় অনেক বেশি কার্যকর ভূমিকা পালন করে চলেছেন। পুরুষ চা-শ্রমিকরা চা বাগানের আগাছা পরিষ্কার করা, চায়ের চারা রোপণ, নার্সারিতে চারা উৎপন্ন করা, ছায়াবৃক্ষ বা ‘শেড ট্রি’ রোপণ, বাগান পাহারা, ফ্যাক্টরিতে চা উৎপাদনে সহায়তা করাসহ বাগানের অনান্য কাজ করে থাকেন।
বাংলাদেশে মূল বাগান এবং ফাঁড়ি বাগান মিলিয়ে মোট ২৫১টি চা বাগানে মোট জনসংখ্যা সাত লক্ষাধিক। ২৫১টি চা বাগানের মধ্যে ১৬৩টি মূল বাগান ও ৮৮টি ফাঁড়ি বাগান। যেসব চা বাগানে চা প্রক্রিয়াজাতকরণ ফ্যাক্টরি রয়েছে, সেসব বাগানকে মূল বাগান এবং ফ্যাক্টরিবিহীন চা বাগানগুলোকে ফাঁড়ি বাগান হিসেবে অভিহিত করা হয়। চা বাগানের সাত লক্ষাধিক জনসংখ্যার মধ্যে স্থায়ী শ্রমিক রয়েছে দেড় লক্ষাধিক। এর মধ্যে শুধু নারী শ্রমিক রয়েছে প্রায় অর্ধলাখ। অস্থায়ী ও স্থায়ী শ্রমিক মিলিয়ে চা শিল্পাঞ্চলে কর্মরত রয়েছেন কমপক্ষে আড়াই লক্ষাধিক। এর মধ্যে স্থায়ী ও অস্থায়ী নারী শ্রমিক রয়েছেন লক্ষাধিক। এ নারী শ্রমিকদের মধ্যে আবার রয়েছে ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’ ক্যাটাগরির শ্রমিক। তাদের দৈনিক হাজিরা (বেতন) ক্যাটাগরি ভিত্তিতে পরিশোধ হয়। ‘এ’ ক্যাটাগরির একজন শ্রমিক দৈনিক ১০২ টাকা হাজিরাপ্রাপ্ত হন। সপ্তাহের রোববার বাগানের কাজকর্ম বন্ধ থাকে। এ হিসাবে একজন চা শ্রমিকের সাপ্তাহিক হাজিরা মাত্র ৬১২ টাকা। মাস হিসাবে দাঁড়ায় দুই হাজার ৪৪৮ টাকা। এত অল্প বেতন নিয়ে চা-শ্রমিকদের সংসার পালন অত্যন্ত কষ্টকর হলেও তারা নিজেদের সব কিছু জলাঞ্জলি দিয়ে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে চা-শিল্পের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রায় অবদান রেখে চলেছেন।
চা শিল্পাঞ্চলে নিয়োজিত নারী চা-শ্রমিকরা প্রাত্যহিক কাজে বের হন সকাল ৯টার মধ্যে। চা বাগানের শ্রমিক কলোনির জীর্ণ কুটির থেকে চা পাতা চয়নের উদ্দেশে সকাল ৯টার আগে বের হয়ে চা বাগানের বিভিন্ন সেকশনে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চা পাতা চয়ন করে থাকেন তারা। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঝড়-বৃষ্টি কোনো কিছুই তাদের কাজের মাঝে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে না। সব প্রাকৃতিক দুর্যোগ উপেক্ষা করে তারা প্রাত্যহিক কাজ করে থাকেন। প্রায় ৭ ঘণ্টা চা পাতা চয়নের মাঝে দুপুরে খাবারের জন্য ৩০ মিনিট ছুটি দেয়া হয়। এ সময় চা বাগানের ছায়াদানকারী বৃক্ষের নিচে বসে সেরে নেন দুপুরের নাশতা বা হালকা খাবার। তাদের দুপুরের খাবারের তালিকায় বেশির ভাগ সময় থাকে আটা দিয়ে তৈরি শুকনো রুটি। এ ছাড়া কচি চা পাতা, কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ, লবণ দিয়ে তারা এক ধরনের ভর্তা-জাতীয় খাবার তৈরি করে খেয়ে থাকেন। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চা সেকশনে চায়ের কচি পাতা উত্তোলন বা পাতা চয়নের পর চা পাতাগুলো মাপার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় সেকশনের পাতিঘরে। চা পাতা মাপা শেষ হলে নারী চা-শ্রমিকরা টিলা বাবুর কাছে হিসাব বুঝিয়ে দিয়ে ঘরে ফিরে আসেন। নারী চা-শ্রমিকরা চা চয়নের সময় সাধারণত শুধু ব্লাউজ ও পেটিকোট পরিধান করে থাকেন। তবে অল্পবয়সী তরুণীরা সালোয়ার-কামিজ পরেন।
নারী চা-শ্রমিকদের কথা বলতে গিয়ে ফিনলে টি কোম্পানির বুড়বুড়িয়া চা বাগানের নারী শ্রমিক শ্রীমতি হাজরা বলেন, ‘পুরুষ চা-শ্রমিকদের তুলনায় নারী চা-শ্রমিকরা চারগুণ বেশি পরিশ্রম করেন। কিন্তু তাদের হাজিরা (বেতন) পুরুষ চা-শ্রমিকদের সমান। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুরুষদের থেকে কম হাজিরাও পেয়ে থাকেন। চা-বাগানের সবচেয়ে কষ্টকর কাজ কচি চা পাতা চয়ন। আর এ কাজটি করে থাকেন নারী চা-শ্রমিকরাই। চা শিল্পের উন্নয়নে নারী চা-শ্রমিকদের অবদান সবচেয়ে বেশি হলেও তাদের পরিশ্রমের মূল্যায়ন হয় না বললেই চলে।’
বাংলাদেশ চা বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের চা শিল্পে প্রায় এক লাখ ১৭ হাজারের অধিক স্থায়ী চা-শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ৪৫ হাজার হচ্ছেন নারী চা-শ্রমিক।


আরো সংবাদ



premium cement
জাতিসঙ্ঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থাকে আবার অর্থায়ন শুরু করবে জাপান শেখ হাসিনার অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি বিএনপিকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে : ওবায়দুল কাদের রাশিয়া সমুদ্র তীরবর্তী রিসোর্টে ১৬.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে সিরিয়ায় ইসরাইলি হামলায় নিহত ৩৬ সেনা সদস্য দৌলতদিয়া ঘাটে পন্টুন থেকে নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু অ্যানেসথেসিয়ার পুরনো ওষুধ বাতিল করে কেন নতুনের জন্য বিজ্ঞপ্তি! বাইডেনের মেয়াদে রুশ-মার্কিন সম্পর্কের উন্নতির কোনো আশা নেই : রুশ রাষ্ট্রদূত ডিএমপির অভিযানে গ্রেফতার ৪০ নিউইয়র্কে মঙ্গোলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ফ্ল্যাট জব্দ করবে যুক্তরাষ্ট্র! টাঙ্গাইলে লরি-কাভার্ডভ্যান সংঘর্ষে নিহত ১ জিম্বাবুয়ে সিরিজে অনিশ্চিত সৌম্য

সকল