১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`
আমিও বলতে চাই

নারী শিক্ষা

-

আমি আর শ্যামা একই ক্লাসে পড়ি। আমরা যমজ ভাইবোন। আজ আমাদের পরীক্ষার রেজাল্ট বের হয়েছে। আমরা ভাইবোন ভালোভাবে পাস করেছি। মার্কে শ্যামা আমার থেকে বরাবরই এগিয়ে। এগিয়ে তো থাকবেই। শ্যামা যে লেখাপড়ায় বেশ পটু। মেধা ভালো। সব পরীক্ষায় অবাক করা পাস করে। ওর এই অবাক করা পাস নিয়ে আব্বার কোনো মাথাব্যথা নেই। মেয়ের ভালো রেজাল্টের কারণে আব্বার যতখানি সন্তুষ্ট থাকার কথা, তিনি ততটুকু সন্তুষ্ট নন। কারণ আব্বা চান না শ্যামা আর লেখাপড়া করুক। আব্বার ধারণা, কন্যাসন্তানকে লেখাপড়া শেখানো এতটা জরুরি নয়। লিখতে পারলে বা পড়তে পারলেই যথেষ্ট। এক কঠোর সিদ্ধান্ত নিলেন আব্বা। শ্যামাকে আর লেখাপড়া করাবেন না। কাল বাদে পরশু ওর বিয়ে হয়ে গেলে স্বামীর ঘরে হাঁড়িপাতিল মাজবে আর স্বামীর সেবায় রাতদিন পার করবে। শুধু শুধু অযথা লেখাপড়া করিয়ে পয়সা খরচের দরকার নেই। আব্বার কথায় শ্যামা প্রতিবাদী হয়। সে আরো লেখাপড়া করবে। জানতে চায় মহাজগৎ, দেখতে চায় সুশিক্ষার আভিজাত্য, অনুভব করতে চায় স্বশিক্ষার অস্তিত্ব।
কিন্তু শ্যামা বিফলে যায়। চিরদিনের এক কথার মানুষ আমাদের আব্বার অটুট সিদ্ধান্তের কাছে হেরে যায় সে। আব্বার শেষ কথা ছিলÑ ‘আজ থেকে তোর পড়ালেখা বন্ধ। ব্যস। আমি পাত্র খুঁজছি।’ শ্যামার চোখে পানি আসে। সে পানিতে ভেসে যায় মনের একরাশ ক্রোধ।
২.
এখনো আমি বইয়ের ব্যাগ নিয়ে ক্লাসে যাই। শ্যামা আর আমার সঙ্গী হয় না। আব্বা ওর শিক্ষাজীবনের ইতি টেনেছেন। আমি যখন রোজ ক্লাসে যাই, শ্যামা মন খারাপ করে বারান্দায় বসে থাকে। সে দৃশ্য করুণ বটে।
আমি ক্লাসে যেতে যেতে ভাবি, এই সমাজ থেকে আমার আব্বার মতো মানুষদের কে বোঝাবে যে, নারীদেরও শিক্ষার দরকার আছে। পড়ালেখা করে তাদের লাভ নেই বা পরের ঘরে গিয়ে কেবল হাঁড়িপাতিল মেজেই জীবন পার করে দেবে, এই আনকোরা মানসিকতা থেকে তারা কবে যে বের হবে!
জোবায়ের রাজু
আমিশাপাড়া, নোয়াখালী


আরো সংবাদ



premium cement