২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

যৌতুকের ভয়াবহতা

-

আজকাল পত্রিকা বা ফেসবুক ঘাঁটলেই যে বিষয়টি ব্যাপকভাবে চোখে পড়ে তা হলোÑ যৌতুক প্রথার বলি নারী। যৌতুকের দাবিতে তাদের ভয়াবহ নির্যাতন করা হয় কিংবা কখনো জীবননাশের মতো নির্মম পাশবিকতার খবরও পাওয়া যায়। কেন নারীর প্রতি এ আক্রোশ, কেন এই ভয়াবহ লোভী মানসিকতা? কেন নিজের ঘর-সংসার ছেড়ে পরম বিশ্বস্ততায় যার হাত ধরে স্বপ্নে বিভোর হয়ে থাকে একজন নারী, ভোর হওয়ার আগেই সে স্বপ্নের করুণ সমাপ্তি ঘটে? কেন নারীকে পরিণত করা হয় ক্রয়-বিক্রয়ের পণ্যরূপে? আমাদের পারিবারিক জীবনে, সমাজ জীবনে, এমনকি রাষ্ট্রীয় জীবনেও ভয়াবহ এক অভিশাপ হিসেবে বিরাজ করছে এ যৌতুক প্রথা। যৌতুক এমন এক বিষ, যার ক্রিয়ায় অনেক নিরপরাধ ও অবুঝ প্রাণ অকালে ঝরে গেছে। এটি আমাদের জন্য সত্যিই খুবই লজ্জাজনক ব্যাপার, মানবসভ্যতার এক অন্ধকার অধ্যায়।

যৌতুকের কারণ
মানুষের প্রচণ্ড অর্থ লালসা থেকেই যৌতুক প্রথার সৃষ্টি। দারিদ্র্য ও স্বল্প সময়ে অর্থবিত্তের মালিক হওয়ার কামনাও যৌতুক প্রথা বৃদ্ধি হওয়ার কারণগুলোর একটি অন্যতম বড় কারণ। বেকারত্ব, হতাশা এবং সঠিক নৈতিক শিক্ষার সঙ্কটেও যৌতুকের প্রসার এতটা ভয়াবহতায় পৌঁছাচ্ছে। এ ছাড়া কুসংস্কারে আচ্ছন্নতা ও উচ্চভিলাষী মনমানসিকতাও এর কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।
যৌতুকের বলি হয়ে কত মা-বাবা তার আদরের মেয়েকে হারিয়েছে ইয়ত্তা নেই। সুতরাং যৌতুকের লাগাম এখনই টেনে ধরতে না পারলে ভয়ঙ্কর ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।

যৌতুকের নৃশংসতা
বর্তমান সমাজে যৌতুক হিসেবে মোটা অঙ্কের টাকা ছাড়াও টিভি, ফ্রিজ, ঘরের দামি আসবাবপত্র ইত্যাদিসহ ফ্ল্যাট বাড়ি বা উচ্চমানের গাড়ি দাবি করা হয়। ছেলেকে বিদেশে পাঠানোর খরচ বা চাকরিতে ঢুকিয়ে দেয়ার চুক্তিও করা হয় যৌতুক হিসেবে। এত কিছুর পরও কন্যার বাবা দায়মুক্ত হতে পারেন না। পুনঃপুনঃ নানামুখী চাপ আসতে থাকে শ্বশুরবাড়ি থেকে। যদি মেয়ের অভিভাবক চাহিদা পূরণে পাস মার্ক পায় তাহলে বউ-মা লক্ষ্মীমা। আর যদি মেয়ের অভিভাবক অক্ষম হয় তখনই শুরু হয় নির্যাতন-নিপীড়ন ও অমানবিক অত্যাচার। বউয়ের কথাবার্তা আর যাবতীয় কার্যক্রম যেন তেতো ফলের মতো অস্পৃশ্য। শুরু হয় মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনসহ হত্যার চক্রান্ত, কখনো অসহায় মেয়েটিকে নির্মমভাবে হত্যার শিকারও হতে হয়। হত্যার পর লাশ সিলিংফ্যানে ঝুলিয়ে রাখা হয় আত্মহত্যা প্রমাণে অথবা নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয় কিংবা রাতের অন্ধকারে মাটির নিচে পুঁতে দেয়া হয়; যেন লাশ লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যায়, কাকপক্ষিও টের না পায়। এ হলো যৌতুক প্রথার বিষময় পরিণতি।

যৌতুক প্রথা রোধে আমাদের করণীয়
কোনো নারীকে যেন গৃহহীন হতে না হয়, কোনো মা-বাবা যেন মেয়ে হারানোর শোকে পাথর না হয়ে যায়Ñ এটা নিশ্চিত করতে সমাজ থেকে যৌতুক প্রথা বিলুপ্ত করা প্রয়োজন। সরকার ও জনসাধারণ উভয়েরই এগিয়ে আসতে হবে, নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ। আইনের কঠোরতার পাশাপাশি তার বাস্তবায়নও জরুরি। সর্বস্তরে শপথ গ্রহণ করতে হবে কেউ যৌতুক নেবে না, কাউকে যৌতুক দেবেও না। দেশে প্রচলিত যৌতুকবিরোধী আইনও যথেষ্ট কঠিন ও ফলপ্রসূ।
সুতরাং কোথাও কখনো যৌতুক লেনদেনের খবর পেলে বা যৌতুক দিতে বরপক্ষ থেকে চাপ এলে আইনের আশ্রয় নিতে হবে।
এর পাশাপাশি সমাজ থেকে কুশিক্ষা, অজ্ঞানতা, মূর্খতা, ভ্রষ্টতা, ও পশ্চাৎপদতা দূর করে শিক্ষার আলো
ছড়িয়ে দিতে হবে। ঘরে ঘরে সর্বস্তরে সুশিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
ইসলামে সুদ, ঘুষকে যেমন হারাম ঘোষণা করা হয়েছে তেমনিভাবে যৌতুককেও হারাম বলে সাবধান করা হয়েছে। নারী মায়ের জাতি, অসামান্য সম্মানের দাবিদার। নারী কোনো সস্তা পণ্য নয় যে, তাকে নিয়ে দরদাম করা হবে, নিলামে তোলা হবে।
কিছু কিছু মেয়ের বাবা-মা অবশ্য ভাবেন, বিয়ের সময় মেয়েকে মোটা দাগের উপহার দিলে শ্বশুরবাড়িতে মেয়ের একটা সম্মান থাকবে, সংসার সুখের হবে। মূলত এসবই মেয়েটার গুণাবলি আর যোগ্যতাকে ম্লান করে দিচ্ছে, তাকে হীনম্মন্য করে তুলছে।
বাবা-মায়ের আদরে লালিত প্রত্যেক মেয়েরই নিজগুণে অনন্যা। যৌতুকের পাল্লায় তাকে মাপাটাই বোকামি ও অপরাধ।
বলা হয়Ñ ‘ যে বিয়েতে খরচ কম হয়, সে বিয়ে তত বরকতময়।’
আমাদের মনে রাখতে হবে
যৌতুক নামক মরণব্যাধি দূর করতে না পারলে নারীরা কখনো মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হতে পারবে না।
আসুন, আমরা যৌতুকবিরোধী মনোভাব গড়ে তোলার জন্য সচেতনতামূলক প্রচারণা শুরু করি সমাজ থেকে এ ঘৃণ্য প্রথাকে চিরতরে নির্মূল করার দীপ্ত শপথ গ্রহণ করি।


আরো সংবাদ



premium cement
রাত পোহাতেই রুদ্ধদ্বার অনুশীলন শুরু বাংলাদেশের সাটুরিয়ায় প্রশান্তির বৃষ্টি চেয়ে সালাতুল ইসতিসকা আদায় ইরান নিয়ে মার্কিন হুঁশিয়ারি পাকিস্তানকে গাজায় গণকবরের বিষয়ে ইসরাইলের কাছে ‘জবাব’ চেয়েছে হোয়াইট হাউস দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান বাস্তবায়ন করা হলে হামাস অস্ত্র ছাড়তে রাজি শনিবার থেকে শুরু গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা, প্রস্তত জবি ক্যাম্পাসগুলোতে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সমর্থন করেন বাইডেন: মুখপাত্র নোয়াখালীতে ইসতিসকার নামাজ আদায় জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব থাকবে বান্দরবানে বৃষ্টির চেয়ে চোখের পানি ফেলে বিশেষ নামাজ চকরিয়ায় যুবককে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা, গ্রেফতার ৭

সকল