২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

যতেœ থাকুক প্রবীণারা

-

সত্তর ঊর্ধ্ব কানিজ ফাতেমা (ছদ্মনাম), তার তিন সন্তানের সবাই এ শহরে থাকে। কানিজ ফাতিমা অসুস্থ। একা থাকতে পারেন না। আবার তার নিজস্ব কোনো আয় নেই। তাই স্বামীর মৃত্যুর পর সব দিক থেকেই তিনি সন্তানদের ওপর নির্ভরশীল। সন্তানরা ঠিক করেছে মাকে দুই মাস করে এক একজনের বাসায় রাখবে। তাই মাকে গ্রাম থেকে ঢাকায় নিয়ে আসা। সেখানেও সমস্যার শেষ নেই। চার দেয়ালের ইট পাথরের ছোট ফ্ল্যাটে বন্দী হয়ে থাকেন কানিজ ফাতেমা। জানালা দিয়ে খুঁজে ফেরেন আকাশ, এক চিলতে সবুজ মাঠ, গাছ পাখি কিছুই দেখতে পান না। সারাক্ষণ জড়সড় হয়ে নিজের ছোট ঘরটাতেই থাকেন। সেখানেও নানা সমস্যা। কারো বাড়িতে মেহমান আসবে, বন্ধুদের নিয়ে সারা দিন গল্প আড্ডা খাবারের নানা ধরনের আয়োজন। জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী, গেটটুগেদার আর কত কি। মা তো সেখানে বেমানান। কারো আবার শিশুদের পরীক্ষা, কাজের বুয়া নেই। মাকে নিয়ে তারা অস্থির। অথচ এই মাই তার সন্তানদের এক হাতে মানুষ করেছেন। তার কাছে সব সন্তানই সমান ছিল। এখন সব সন্তান মিলে মায়ের দেখাশোনা করতে পারে না।
আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে বেশি সংখ্যক প্রবীণ নারীর বৃদ্ধ বয়সে আর্থিক সক্ষমতা থাকে না। তাদের জীবন ধারণের জন্য নির্ভর করতে হয় সন্তানের ওপর। সন্তানরা মায়ের ব্যয়ভার বহন করে। তবে অনেক ক্ষেত্রে খুশি হয়ে নয়, বাধ্য হয়ে। আর তার প্রভাবও পড়ে তাদের আচরণে। এতে বৃদ্ধ বয়সে অসহায় এসব মায়ের হৃদয়ের রক্তক্ষরণই বাড়ে কিন্তু তাদের করার কিছু থাকে না।
ষাটোর্ধ্ব বয়সী সুফিয়া বেগম (ছদ্মনাম) নিঃসন্তান এক বৃদ্ধা। স্বামীর ভিটায় এক কোণে ভাঙাচোরা ছোট একটা ঘরে থাকেন। জীবনের চাকা সচল রাখতে আজো তাকে কাজ করতে হয়। জীবনে এতটা সঞ্চয় করতে পারেনি যে, এখন আরাম করবেন। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া দুর্বল শরীর নিয়ে রোজগারের চেষ্টা তাকে এখনো করে যেতে হয়। দু’মুঠো অন্ন জোগাড় করাই এখন বড় চেষ্টা। অসুখ বিসুখে চিকিৎসা করাতে পারেন না। কষ্ট করেই জীবনটা প্রায় কেটে গেল। সবার জীবনে বার্ধক্য এক রকম হয় না। কারো জীবনে অবসরের এই সময়টা খুব আনন্দের। পরিবার-পরিজন নিয়ে সুখে শান্তিতে দিন কাটে। অন্য দিকে অনেকে জীবন সায়াহ্নের এ সময় এসে হয়ে পড়েন নিঃসঙ্গ। পরিবার-পরিজন, আত্মীয় স্বজন হয়ে যায় দূরের মানুষ। নিঃসঙ্গতা, অসুস্থতা ও অর্থকষ্টে জীবনে ভর করে বিষণœতা। বার্ধক্য এমন একটা সময়, যখন মানুষের ছুটে চলার গতি স্তিমিত হয়ে যায়, শারীরিক শক্তির সাথে সাথে মানসিক শক্তিও কমে আসে। ধীরে ধীরে হয়ে পড়েন পরনির্ভরশীল। জীবন যাপন করাটাই যেন খুব কষ্টকর, জীবনের এ প্রান্তে এসে মানুষ খোঁজে একটু আরাম, একটু শান্তি ও স্বস্তি। প্রবীণারা তাদের সন্তানদের কাছে শুধু দায়িত্ব পালনই আশা করে না। তারা মর্যাদার সাথে বাঁচাতে চায়। এটা তাদের প্রাপ্য। আমাদের সমাজে দরিদ্র পরিবারের প্রবীণাদের অবস্থা আরো করুণ। কারণ সেখানে সন্তানরা তাদের জীবন ধারণের জন্য নিজেরাই যথেষ্ট আয় করতে পারে না, তাদের নিজেদের চলে না। সেখানে মাকে তারা দেখে না। মায়ের ব্যয়ভার বহন করতে চায় না। এসব বৃদ্ধার সহায়ক কেউ নেই। তাদের পড়তে হয় চরম দুরবস্থায়। এ ছাড়াও আমাদের সমাজে এমন অনেক নারী আছে যারা নিঃসন্তান, অবিবাহিত, স্বামী পরিত্যক্তা, শারীরিক অথবা মানসিক প্রতিবন্ধী। শেষ বয়সে যখন তাদের শক্তি থাকে না কিছু করার এবং কোনো সহায় সম্বল থাকে না।
আত্মীয় স্বজন ও পরিবারের সদস্যরা তাদের ছেড়ে দূরে সরে যায় তখন বৃদ্ধ এই সব নারীর অবস্থা হয় আরো বেশি করুণ। তারা নিজেদের ব্যয়ভার বহন করতে সক্ষম থাকে না। তাদের জীবন ধারণ হয়ে ওঠে কষ্টকর। পুষ্টিকর খাবারের অভাব অযতœ অবহেলায় পড়ে বিনা চিকিৎসায় মানবেতর জীবনযাপন করে। মৃত্যুর সময়েও পায় না কাছের মানুষের সান্নিধ্য। অভিমান আর অভিযোগ নিয়ে পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেয়। আমাদের দেশে এই সব বৃদ্ধা নারীর দেখার জন্য নেই তেমন কোনো প্রতিষ্ঠান। কিছু কিছু ব্যক্তিপর্যায়ে ও সরকারের অধীনে নিবাস তৈরি করা হয়েছে কিন্তু তা এখনো অপ্রতুল। সমাজ বিজ্ঞানীরা মনে করেন মায়ের দায়িত্ব নেয়ার জন্য যেমন সন্তানদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে তেমনি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসতে হবে। বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে যদি এগিয়ে আসা যায় তাহলে এই সমস্যা কমে যাবে।
সমাজ বিজ্ঞানীরা মনে করেন জীবনের জটিলতায় আজ ভেঙে পড়েছে পারিবারিক বন্ধন। মানুষ এখন আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে ক্রমেই। নিজেকে ছাড়া অন্য কাউকে নিয়ে ভাবনার সময় নেই। তাই প্রবীণ অনেকের ঠাঁই হচ্ছে না সন্তান কিংবা স্বজনদের কাছে। অথচ প্রবীণদের প্রতি আমাদের কিছু দায়িত্ব রয়েছে। এটা শুধু পরিবারের মধ্যে নয়, সামাজিকভাবেও এ দায়িত্ব পালন করতে হবে। এক সময় এ প্রবীণারাই রচনা করেছেন আগামীর সোপান। তাদের শ্রম মেধা চেষ্টায় এগিয়ে গেছে সমাজ সংসার। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে মনে রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে পরিবারের দায়িত্ব অনেক বেশি। বয়স্ক সদস্যদের সম্মান করা ও সেবা করার শিক্ষা থাকা প্রয়োজন।
শুধু পরিবারের মধ্যে নয়, বাইরের বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রতি আমাদের সম্মান দেখানো প্রয়োজন। তাদের সহযোগিতা করা উচিত। পথে ঘাটে যত প্রবীণ আমাদের চারপাশে থাকেন যতটা সম্ভব তাদের সাহায্য করতে হবে। তাদের সীমাবদ্ধতাকে অনুভব করা যায় তাহলে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারব।
আর কিছু সুবিধা যেমন বৃদ্ধ ভাতা এলাকাভিত্তিক জরিপ করে তৈরি করা দরকার। প্রবীণাদের জন্য রেশন কার্ডের ব্যবস্থা চালু করা প্রয়েজন। বাস, ট্রেন, লঞ্চে বৃদ্ধদের জন্য পৃথক বসার আসন রাখা। একই সাথে তাদের ভাড়ায় ছাড় দেয়া যেতে পারে। হাসপাতালে আর্থিক সক্ষমতার পরিপ্রেক্ষিতে ছাড় রাখার ব্যবস্থা করা যায়। বার্ধক্য যেন কারো কাছে অসহায়ত্বে পরিণত না হয় সেই চেষ্টা করা উচিত। সমাজের সিনিয়র সিটিজেনদের নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিশ্চিত রাষ্ট্রকে করতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement
ঢাকার পয়োবর্জ্য-গ্যাস লাইন পরীক্ষায় কমিটি গঠনের নির্দেশ হাইকোর্টের জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রয়োজন ৫৩৪ বিলিয়ন ডলার : পরিবেশমন্ত্রী সাকিবকে ডিপিএলে চান বিসিবি প্রধান নির্বাচক কাতারের সাথে যৌথ বাণিজ্য কাউন্সিল গঠনে এফবিসিসিআইয়ের চুক্তি টি-২০ খেলতে সিলেটে পৌঁছেছে ভারতীয় নারী ক্রিকেট দল খুলনায় হিটস্ট্রোকে এক ব্যক্তির মৃত্যু ভারতের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কী বলল যুক্তরাষ্ট্র? জিম্বাবুয়ে সিরিজের জন্য বাংলাদেশের প্রাথমিক দল ঘোষণা বৃষ্টির জন্য রাজশাহীতে ইসতিসকার নামাজ আদায় গাজীপুরে মহাসড়কের পাশ থেকে মৃত হাতি উদ্ধার প্রচণ্ড গরমের মধ্যে লোডশেডিং ১০০০ মেগাওয়াট ছাড়িয়েছে

সকল