২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

সুই-সুতার শিল্পীরা

-

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে আকর্ষণীয় ও মনোরম ডিজাইনের পুঁতি ও সুতা দিয়ে শাড়িতে বাহারি রঙের নকশার কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম-গঞ্জের দরিদ্র নারী ও শিশু শাড়ি শিল্পীরা। অর্থ উপার্জনের জন্য তারা রাত-দিন একটানা শাড়িতে নকশার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে। দেখে মনে হয় যেন দম ফেলার সময় নেই তাদের।
উপজেলার শাহেদল, কুড়িমারা, রহিমপুর, আশুতিয়া, দ্বীপেশ্বরসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি বাড়িতে এখন পুরোদমে শাড়িতে পুঁতি ও সুতা দিয়ে বাহারি রঙের শাড়িতে বিভিন্ন নকশার কাজে ব্যস্ত রয়েছে নারীরা। এ শাড়িগুলো ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ী ও মহাজনদের কাছ থেকে বিভিন্ন ডিজাইন আঁকা নামমাত্র মজুরির চুক্তিতে আবদ্ধ হয় নারী শিল্পীরা। এরপর শাড়িতে দরিদ্র পরিবারের নারী ও শিশু শিল্পীরা মিলে শাড়ির ডিজাইন মতো সুতা ও পুঁতি দিয়ে নকশা প্রস্তুত করে থাকে। যেসব শাড়িতে ডিজাইন বেশি থাকে, সেসব শাড়ি নকশা তৈরিতে দুই থেকে তিন দিন সময় লাগে। একেকটা শাড়ির ডিজাইন ও প্যাটার্ন ভিত্তিক মজুরি ভিন্ন হয়ে থাকে। বেশি ডিজাইনকৃত শাড়িতে নকশার মজুরি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা ব্যবসায়ীরা শাড়ি শিল্পীদের দিয়ে থাকে। ওই সব শাড়ি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন নামীদামি মার্কেটের দোকানগুলোতে বিক্রি হয়ে থাকে।
ওই শাড়িগুলো খুচরা বিক্রেতারা আট থেকে ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে থাকে। কথা হয় উপজেলার দ্বীপেশ্বর গ্রামের নকশা কারিগর রহিমা খাতুনের সাথে। তিনি বলেন, সংসারের দিনমজুর স্বামীর পক্ষে ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ ও খাবার জোগাড় করা কষ্টসাধ্য ছিল। ফলে বাড়তি কিছু উপার্জনের জন্য শাড়ির নকশাতে কাজ করছি। এইসব শাড়ির কাজে যে মজুরি পাই তা অতি সামান্য। শাড়ির ব্যবসায়ী ও মহাজনরা শাড়িগুলো অনেক বেশি দামে বিক্রি করে অথচ আমরা ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত। শাহেদল গ্রামের শাড়িতে নকশাকর্মী সালেহা বলেন, পারিবারিক অস্বচ্ছলতার দরুন শাড়িতে কাজ করি। শাড়িতে কাজ করে যা পাই তা দিয়ে কোনোমতে সংসার চালাতে পারছি। কুড়িমারা গ্রামের নকশাকর্মী বিলকিস বলেন, অভাবের তাড়নায় শাড়ির কাজ করি। তবে মহাজনরা যদি আরো বেশি মজুরি দিত, তাহলে ভালোভাবেই সংসার চালাতে পারতাম। উপজেলার রহিমপুর গ্রামের হাজেরা বেগম জানান, কাঠের ফ্রেমের শাড়ির কাপড় লাগিয়ে তাদের চুন দিয়ে অঙ্কিত ডিজাইনের চুমকি, পুঁতি ও পাথরের গায়ে লাগিয়ে শাড়িকে আকর্ষণীয় ও দৃষ্টিনন্দন করি। দু-তিনদিন একটি সারিতে চুমকি ও পাতলা কোনো কাজ শেষ করা যায়। আগে শাড়ি প্রথম ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা করে দেয়া হতো যাতে তার কিছু টাকা সঞ্চয় করা যেত। বর্তমানে বাজারে চুমকি লাগানো শাড়ির চাহিদা থাকলেও দাম কিছুটা কমানো যায়। শাড়ি প্রতি মজুরি পাচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। এ জন্য তারা সুঁই-সুতার কারিগরদের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিতের দাবি জানায়।
সূত্র মতে, হোসেনপুরে শাড়িতে পুঁতির কাজ করে কয়েক হাজার নারী স্বাবলম্বী হয়েছে। সংসারের অভাব দূর করে তাদের অনেকেই ছেলেমেয়েকে শহরে রেখে লেখাপড়া করাতে পারছে। উপজেলার নি¤œ-মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র সহস্রাধিক নারী শাড়িতে পুঁতি চুমকি ও পাথর বসানোর কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্র্ধ্বগতির অতিষ্ঠ হয়ে কাজের অভাবে এবং একবেলা খেয়ে দুবেলা উপোস থাকে এমন সব পরিবারের মেয়ে ও বধূরা শাড়িতে হাতের কাজ করে তিনবেলা খাবারের সুব্যবস্থার পাশাপাশি সংসারের অভাব মোচন করে স্বাবলম্বী হতে চলেছে।
এ ব্যাপারে ঢাকার শাড়ির ব্যবসায়ী আবদুল কালামসহ অনেকে জানান, পুঁতি-সুতার মূল্য বেশি, পরিবহন খরচ ও আনুষঙ্গিক ব্যয়ে তাদের খুব বেশি লাভ থাকে না। তাই সুঁই-সুতার কারিগরদের পারিশ্রমিক বাড়ানো আপাতত সম্ভব নয়। তবে তিনি এ খাতে আরো বেশি সরকারি পৃষ্টপোষকতার দাবি জানান।

 


আরো সংবাদ



premium cement
পরিবেশ দূষণে বাংলাদেশে বছরে ২ লাখ ৭২ হাজার মানুষের মৃত্যু : বিশ্বব্যাংক নোয়াখালীতে ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত ‘আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ল’ ইয়ার্স কাউন্সিল কাজ করে যাচ্ছে’ পুকুরে পাওয়া গেল ১০০ ইলিশ অবন্তিকার আত্মহত্যা : জবির সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামের জামিন আবারো নামঞ্জুর পাথরঘাটায় বদর দিবস পালনে দেড় হাজার মানুষের ইফতারি আদমদীঘিতে ৭২ হাজার টাকার জাল নোটসহ যুবক গ্রেফতার সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান মির্জা ফখরুলের জলবায়ু সহনশীল মৎস্যচাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পদক্ষেপ নেয়া হবে : মন্ত্রী গাজীপুরে গাঁজার বড় চালানসহ আটক ২ দুই ঘণ্টায় বিক্রি হয়ে গেল ২৫০০ তরমুজ

সকল