২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

করোনাকালে ই-কমার্সে বেড়েছে নারী উদ্যোক্তা

-

বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস সমগ্র পৃথিবীকে লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে। পৃথিবীতে এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে পরেনি করোনার প্রভাব। এ মহামারির কারণে মানুষের জীবনযাত্রা থমকে যাওয়ার পাশাপাশি কিছু কিছু ক্ষেত্রে ঘটেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। বিশেষ করে তথ্য প্রযুক্তির (আইটি) ক্ষেত্রে। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে অনেকেই এখন নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করছেন ভিন্নভাবে। বিশেষ করে ব্যবসা-চাকুরির ক্ষেত্র হয়ে গেছে আইটি নির্ভর। আর এ কারণেই ব্যবসায় বেড়েছে নারীর অংশ গ্রহণ। বেড়েছে নারী উদ্যক্তা। সব মিলিয়ে এখন একটা কম্পিউটার আর ইন্টারনেট থাকলে বাসায় বসেই করা যায় ব্যবসা। অর্থাৎ ই- কমার্সের ঘটেছে ব্যপক প্রসার। দেশে ই-কমার্সের সাথে যুক্ত হচ্ছেন নারীরা। যে কারণে আইটি ক্ষেত্রে বাড়ছে নারীর আগ্রহ। তাদেরই একজন সামিয়া জাহান। এইচএসসি পাশ করার পর একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্স এ ভর্তি হয়। ইচ্ছে ছিল কোনো একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে। শুরু থেকেই তার ‘কম্পিউটার’ সাবজেক্টের প্রতি এক ধরনের দুর্বলতা ছিল। কিন্তু কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ না পাওয়ায়, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ২০১৮ সালে পাশ করে বের হন। বের হওয়ার পরপরই একটি সফটওয়্যার ডেভেলপ কোম্পানীতে চাকরীর সুযোগ হয় সামিয়ার।

চাকরীজীবন ভালোই উপভোগ করছিলেন। কিন্তু করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পরেই কিছুটা ছেদ পড়ে কাজে। দু’এক মাস পর বাসা থেকেই আবার শুরু করেন সামিয়া। তবে এবার আর চাকরীজীবি হিসেবে নয়, নিজে উদ্যোক্তা হয়ে কাজ শুরু করেন তিনি। কেবলমাত্র সামিয়া একাই নন। এই সময়ে চাকুরি হারিয়ে অনেক নারীই এখন হয়েছেন উদ্যেক্তা। যার মধ্যে অনেকেই যুক্ত হয়েছেন ই-কমার্সের সাথে। পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলেই যার প্রমাণ পাওয়া যায়।

চলমান মহামারি করোনাকালীন সময়ে ই-কর্মাসে নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ওমেনস অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই)-এর তথ্য মতে, তাদের প্রায় ১১ লাখ ২১ হাজার সদস্যের মধ্যে চার লাখই নারী উদ্যোক্তা। আর এসব নারী উদ্যোক্তাদের অধিকাংশই আত্মপ্রকাশ করেছে করোনাকালীন সময়ে। মূলত লকডাউনের সময় ঘরে বসে ইন্টারনেট ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর ভর করে উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন এসব নারীরা।

সরকারি ও বেসরকারি গবেষণার বিভিন্ন তথ্য মতে, দেশে প্রায় তিন দশক আগে তথ্যপ্রযুক্তির যাত্রা শুরু হলেও আইটি পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে শীর্ষপর্যায়ে নারীর অবস্থান এক শতাংশের নিচে। তবে করোনার কারণে এ ক্ষেত্রে ঘটেছে বিপ্লব।

সরকারি হিসাবমতে, কর্মক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তিতে ১২ শতাংশ নারী কাজ করছেন। তার মধ্যে অধিকাংশই প্রাথমিক বা মধ্যম পর্যায়ের কাজ করেন।

সূত্র মতে, ‘বিজনেস প্রসেস আউটসোর্স-বিপিও’ শিল্পে দেশে ৪০ শতাংশ নারী কাজ করছেন। বিশ্বব্যাপী বিপিও শিল্পের আট লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকার বাজারে বাংলাদেশের দখলে তিন হাজার ৪০০ কোটি টাকা।

‘কল সেন্টার ও আউটসোর্সিং’-এর সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ হোসেন বলেন, দেশের ১৭০টি শীর্ষ আইটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১০টির বেশি হবে না, যেখানে নারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ পর্যায়ে বা নেতৃত্বে রয়েছেন। এ ক্ষেত্রে নারী নেতৃত্বের সংখ্যা আরো বাড়াতে হবে।

বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক (বিডিওএসএন)-এর গবেষণা মতে, পড়াশোনা করে মাত্র এক শতাংশ নারী শিক্ষার্থী ভবিষ্যতে প্রোগ্রামিং পেশায় আগ্রহ দেখান।

১৯৮৬ সালে কম্পিউটার বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হওয়া বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েটে প্রথম ব্যাচে ২০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে তিন জন নারী ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ওই বিষয়ে ১৯৯২ সালে স্নাতকোত্তর এবং ১৯৯৪ সালে স্নাতক সম্মান চালু হয়।

আইটি বিশেষজ্ঞ মনোয়ার হক বলেন, বর্তমানে অনেক নারীই তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে পড়ালেখা করছেন। কিন্তু অনেকে এখান থেকে পাশ করে চলে যাচ্ছেন অন্য পেশায়। এটা সত্যিই খুব দুঃখজনক। তবে আশার কথা হচ্ছে, অনেকে এ পেশাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিচ্ছেন।

তিনি অনলাইনে কাজ করার জন্য প্রশিক্ষণের উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, তাদের জন্য যদি পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যায়, তবে তাদের দক্ষতা আরো বাড়বে। এতে করে তারা আরো দ্রুত সময়ে অনেক বেশী কাজ করতে পারবে এবং তাদের আয়ও বেড়ে যাবে কয়েক গুণ।

সূত্র : বাসস


আরো সংবাদ



premium cement