১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

‘জেনোসাইড জো’ বিক্ষোভের জেরে হারতে চলেছেন বাইডেন!

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো-বাইডেন - সংগৃহীত

‘জেনোসাইড জো, গাজায় কত শিশু হত্যা করেছো?’ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো-বাইডেন ভার্জিনিয়া রাজ্যে নির্বাচনি প্রচারণা অনুষ্ঠানে ভাষণ দেয়ার সময় ফিলিস্তিনপন্থী এক বিক্ষোভকারী চিৎকার তার ভাষণকে ব্যহত করে।

মাত্র কয়েক সেকেন্ড এমনটা হতে দেখা যায়, কারণ সাথে সাথেই দলীয় কর্মীরা প্রেসিডেন্টকে মঞ্চে নিয়ে যাওয়ার সময় ‘আরো চার বছর, আরো চার বছর’ স্লোগান দিতে শুরু করে। এতে বিক্ষোভকারীর স্লোগান চাপা পড়ে যায়।

এটি ছিল ২৩ জানুয়ারির ঘটনা। যখন বাইডেন, নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী হয়েছেন, কিন্তু প্রাইমারি নির্বাচনে তখনো প্রয়োজনীয় সংখ্যক ডেলিগেট পাননি।

তবে ততদিনে, জো-বাইডেনের পুনরায় প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হওয়ার পথে গাজায় ইসরাইল এবং হামাসের যুদ্ধ মোকাবেলা করা একটি কঠিন সমস্যা হিসাবে আবির্ভূত হয়।

যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে এক শ’রও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে যুদ্ধ-বিরোধী বিক্ষোভের জোয়ারে, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বাইডেন আগের চেয়ে আরো বেশি বাধার মুখে পড়ছেন বলে মনে হচ্ছে। এই বিক্ষোভে দুই হাজারেরও বেশি বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ইসরাইলে সশস্ত্র হামলা চালানোর পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘জেনোসাইড জো’ নামটি ছড়িয়ে পড়ে। হামাসের এই হামলায় ১২ শ’ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয় এবং আরো প্রায় আড়াই শ’ জনকে বন্দী করে নিয়ে যায় তারা, যার ফলে এখন যুদ্ধ চলছে।

২৮ অক্টোবর মধ্যে ডেট্রয়েটে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে যারা অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে এটি বহুল উচ্চারিত একটি স্লোগান হয়ে দাঁড়ায়।

যুদ্ধের প্রথম মাসগুলোয়, বাইডেন যখন ইসরাইল সরকারের প্রতি দৃঢ় সমর্থন দেয়ার কথা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের আরব-মুসলিম জনগোষ্ঠী এবং বাম-গণতান্ত্রিক ভোটারদের মধ্যে অসন্তোষ ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

তখন এটি স্পষ্ট ছিল না যে- গাজায় যুদ্ধ এত দীর্ঘ মাস ধরে চলবে এবং অনেক মানুষ হতাহত হবে।

গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মতে, এ পর্যন্ত ইসরাইলি হামলায় প্রায় ৩৪ হাজার ফিলিস্তিনি মারা গেছেন। যা তরুণ শিক্ষার্থীদের মাঝে অসন্তোষের ঝড় বইয়ে দিয়েছে যারা গত কয়েক সপ্তাহ ধরে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করছে।

এই তরুণরা এবং তাদের কাছাকাছি দৃষ্টিভঙ্গির অন্যান্য সংখ্যালঘু যেমন :- ল্যাতিনো, এশিয়ান, আফ্রিকান-আমেরিকান, এলজিবিটি সম্প্রদায়ের সদস্যরা মূলত ডেমোক্র্যাট পার্টির ভোটার হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকেন। এদের সমর্থন বড় ধরনের পার্থক্য তৈরি করতে সক্ষম যা পেলে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারবেন বাইডেন।

‘বাইডেনের যুদ্ধ’
গত বছরের ৭ অক্টোবরের হামলার পর বাইডেন হামাসের আক্রমণের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানান।

আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ব্যক্তিগতভাবে ইসরাইল ভ্রমণ করেন এবং ইরান, লেবাননের হেজবুল্লাহ মিলিশিয়াসহ ওই অঞ্চলে হামাসের অন্যান্য মিত্ররা যেন সংঘাত বাড়াতে না পারে তা সতর্কতা হিসেবে ভূমধ্যসাগরে মার্কিন বিমানবাহী রণতরী মোতায়েন করেন।

ইসরাইলি সামরিক অভিযানের ধ্বংসযজ্ঞ এবং বিপুল সংখ্যক বেসামরিক মানুষ হতাহত যে হয়েছে তা নয় বরং নেতানিয়াহু সরকারের কঠোরতার কারণে গাজায় খাদ্য ও মানবিক সাহায্যের প্রবেশও কমে যায়। এর ফলে জাতিসঙ্ঘ, এনজিও এবং বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সরকার কঠোর সমালোচনা করলেও বাইডেন তখন থেকেই ইসরাইলের প্রতি তার সমর্থনে অবিচল আছেন - অন্তত জনসমক্ষে।

ফিলিস্তিনিপন্থী গোষ্ঠীগুলো একটি সুনির্দিষ্ট যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেও, বাইডেন সরকার সাময়িক বিরতির সমর্থন করেন, যা ২০২৩ সালের নভেম্বরে হয়েছিল।

ওই যুদ্ধবিরতির কারণে গাজায় বড় আকারে সহায়তা প্রবেশ করতে শুরু করে। সেইসাথে এক শ’ ইসরাইলি বন্দী এবং সেখানে বন্দী প্রায় ২৪০ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেয়া হয়।

একই সময়ে, গাজায় আরো মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দেয়ার জন্য ইসরাইলের কাছে বাইডেন প্রশাসন বারবার অনুরোধ জানায়। কিন্তু ইসরাইলের কাছ থেকে কোনো অনুকূল বা বাস্তবসম্মত সাড়া পাওয়া যায়নি।

এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র বিমান থেকে ত্রাণ সহায়তা দেয়ার অভিযান শুরু করে। উপত্যকার উপর দিয়ে সরাসরি সাহায্য সরবরাহের জন্য উপকূলে একটি ভাসমান ডক তৈরি করা শুরু হয়।

হোয়াইট হাউসও গাজায় এতো পরিমাণ বেসামরিক মৃত্যুর ঘটনায় বারবার বিরক্তি প্রকাশ করে।

এপ্রিলের শুরুতে, প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে আসে যে- বাইডেন নেতানিয়াহুকে বলেছেন, ‘মানবিক পরিস্থিতি অগ্রহণযোগ্য’ এবং ‘বেসামরিকদের ক্ষয়ক্ষতি ও মানবিক দুর্ভোগ মোকাবেলা করতে সেইসাথে গাজায় নিয়োজিত দাতব্য কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র তাদের গাজা সম্পর্কিত মার্কিন নীতিতে সুনির্দিষ্ট, বাস্তবসম্মত এবং পরিমাপযোগ্য পদক্ষেপ নির্ধারণ করতে যাচ্ছে।’

তবে একই সময়েও, হোয়াইট হাউস ইসরায়েলে অস্ত্রের চালান বজায় রেখেছে এবং জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদে তার ভেটো ক্ষমতা ব্যবহার করেছে যাতে ইসরাইলকে তাদের বিরুদ্ধে আসা প্রস্তাবগুলো থেকে রক্ষা করা যায়।

এই পদক্ষেপগুলো ফিলিস্তিনপন্থী বিভিন্ন সম্প্রদায়ের তীব্রে আপত্তির মুখে পড়ে।

জেরেমি কোনিন্ডিক, যিনি বাইডেন এবং বারাক ওবামা সরকারের হয়ে কাজ করেছেন এবং এখন এনজিও রিফিউজিস ইন্টারন্যাশনালের সভাপতিত্ব করছেন, তার ধারণা বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট এই যুদ্ধকে নিজের করে তুলেছেন।

‘তারা এমন সব সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে যাতে যুদ্ধ টিকে আছে। এই যুদ্ধ টিকিয়ে রাখতে তারা রাজনৈতিক সমর্থন দিয়েছে। তারা জাতিসঙ্ঘে কূটনৈতিকভাবে ইসরেইলের পাশে থেকেছে যা যুদ্ধকে টিকিয়ে রেখেছে,’ কোনিন্ডিক নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন।

‘বাইডেন কি এই যুদ্ধ চাইবেন? না। কিন্তু বাইডেন কি এই যুদ্ধ বস্তুগতভাবে সমর্থন করছেন? হ্যাঁ। এবং তাই সেই অর্থে, এটি তারই যুদ্ধ,’ তিনি আরো বলেন।

নির্বাচনি প্রভাব
বাইডেনের গাজা নীতি তার পুনর্নির্বাচনের সম্ভাবনাকে প্রভাবিত করবে এমন আশঙ্কা ওই অঞ্চলে সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকেই রয়েছে।

২০২৩ সালের নভেম্বরে, মিশিগান ডেমোক্রেটিক কংগ্রেসওম্যান রাশিদা তালাইব এক ভিডিও প্রকাশ করেছিলেন যাতে তিনি প্রকাশ্যে বাইডেনকে ‘ফিলিস্তিনিদের গণহত্যা’ সমর্থন করার জন্য অভিযুক্ত করেছিলেন।

মার্কিন কংগ্রেসে ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত একমাত্র প্রতিনিধি তালাইব ভিডিওটিতে বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট, আমেরিকার জনগণ এই বিষয়ে আপনার সাথে নেই। আমরা ২০২৪ সালে সেটা মনে রাখব।’

তার বার্তার পরে, স্ক্রিনটি কালো হয়ে যায় এবং একটি বার্তা সামনে আসে যাতে বলা হয়, ‘জো বাইডেন ফিলিস্তিনি জনগণের গণহত্যাকে সমর্থন করেছিলেন। আমেরিকার মানুষ ভুলবে না। বাইডেন, এখন একটি যুদ্ধবিরতি সমর্থন করুন। অথবা ২০২৪ সালে আমাদের উপর নির্ভর করবেন না।’

এই অস্থিরতা প্রথম রাজনৈতিকভাবে প্রকাশ পায় প্রাইমারির সময় যখন যুদ্ধবিরোধী আন্দোলন জোরদার হয়ে উঠেছিল।

ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী নির্বাচনে একটি প্রতিনিধিদের অনেকে বাইডেনকে ভোট দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেননি।

এ ধরনের ‘আনকমিটেড’ আন্দোলন মিশিগানে দেখা গিয়েছিল, যেখানে তারা এক লাখেরও বেশি ভোট পেয়েছে (১৩ শতাংশের মতো)। এটি মিনেসোটায় (প্রায় ১৯ শতাংশ ভোট), হাওয়াইয়ে (২৯ শতাংশ) এবং ওয়াশিংটনে (প্রায় ১০ শতাংশ) উল্লেখযোগ্য ফল অর্জন করে।

যে রাজ্যগুলোয় ‘আনকমিটেড’ অপশন ছিল, সেখানে মার্চের মাঝামাঝি নাগাদ, গড়ে ১০ শতাংশ ভোটারা ‘আনকমিটেড’ অপশনের পক্ষে ভোট দিয়েছে।

যে রাজ্যগুলোয় আনকমিটেড অপশন ছিল না সেখানকার ১২ শতাংশ ভোট বাইডেন ছাড়া অন্য প্রার্থীদের পক্ষে পড়েছিল।

‘আনকমিটেড’ মুভমেন্টের তথ্যমতে তাদের এই আন্দোলনের পক্ষে অন্তত পাঁচ লাখ ভোট পড়েছে।

এই ফলাফলগুলো হেলাফেলা করার মতো নয়, কেন না বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্টের ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পেছনে বড় কারণ ছিল তিনি অ্যারিজোনা, জর্জিয়া, মিশিগান, নেভাডা, পেনসিলভানিয়া এবং উইসকনসিনের মতো অতি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক রাজ্যগুলোয় ভোট পেয়েছিলেন।

এসব রাজ্যের অনেকগুলোয় তিনি খুব অল্প ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন এবং তার জয়ী হওয়ার পেছনে মূল ভূমিকা রেখেছে তরুণদের মতো নির্দিষ্ট কিছু গ্রুপের ভোট।

সাম্প্রতিক জরিপগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে যে- প্রেসিডেন্ট বাইডেন ভোটারদের এই গ্রুপের মধ্যে তার জায়গা হারাচ্ছেন।

এপ্রিলের মাঝামাঝি ইউএসএ টুডে পত্রিকায় প্রকাশিত এক সমীক্ষা থেকে জানা যায় যে- ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৩০ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে ৪৫ শতাংশ বাইডেনকে সমর্থন করেছিল, যেখানে ট্রাম্প পেয়েছিলেন ৩৭ শতাংশ পাবেন।

এসব পরিসংখ্যান তখন বাইডেনের অনুকূলে থাকলেও এখন তার অবস্থান ২০২০ সালের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে নিচে নেমে এসেছে। তখন, এই পর্যায়ে, বাইডেনের পেছনে ৬০ শতাংশ তরুণের সমর্থন ছিল এবং ট্রাম্পের ছিল মাত্র ৩০ শতাংশ।

জরিপ অনুসারে, ভোট দেয়ার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্টের জনপ্রিয়তা কমার পেছনে একটি কারণ হলো গাজার যুদ্ধ।

যেহেতু তরুণদের একটি বড় অংশ মনে করে যে- ইসরাইলের পদক্ষেপগুলো ন্যায়সঙ্গত নয়।

এপ্রিলের শেষের দিকে সিএনএন এর প্রকাশিত আরেকটি সমীক্ষা থেকে ধারণা করা যায়, বাইডেন যে ইস্যুতে সবচেয়ে খারাপ রেটিং পেয়েছিলেন তা হলো ইসরাইল এবং হামাসের মধ্যে যুদ্ধ পরিচালনায় আমেরিকার ভূমিকা।

মাত্র ২৮ শতাংশ মানুষ এর অনুমোদন দিয়েছিল এবং ৭১ শতাংশ অসম্মতি জানিয়েছিল এবং অসম্মতির পক্ষে তরুণদের অবস্থান অর্থাৎ যাদের বয়স ৩৫ বছরের কম তাদের অবস্থান বাড়তে বাড়তে ৮১ শতাংশে ঠেকেছে।

গাজার যুদ্ধ নিয়ে তরুণদের মধ্যে এই অস্থিরতা কি বাইডেনের পুনর্নির্বাচিত হওয়াকে প্রশ্নের মুখে ফেলতে পারে?

নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ইতিহাসবিদ রবার্ট কোহেন বিবিসিকে বলেছেন, ‘ছাত্র আন্দোলন মূলত ভয় তৈরি করছে যে- বাইডেন এই যুদ্ধের জন্য তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনি এলাকাগুলো হারাতে বসেছেন- বিশেষ করে তরুণ ভোটারদের সমর্থন হারাচ্ছেন - যা নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে।’

বিবিসির হিসাব অনুযায়ী, ২ মে পর্যন্ত, গাজার যুদ্ধের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ইতোমধ্যেই ৪৫টি রাজ্যের প্রায় ১৪০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে গেছে।

যাতে গ্রেফতার হয়েছের দুই হাজারের বেশি শিক্ষার্থী।

এই পরিসংখ্যানের মাধ্যমে বুঝা যায়, বিক্ষোভের পরিধি এবং তীব্রতা কতোটা বাড়ছে। যা বাইডেনকে ঘিরে আরো বেশি দ্বিধা তৈরি করছে।

‘যুদ্ধের মতোই, ক্যাম্পাসের এই বিক্ষোভগুলো জো-বাইডেনকে ক্রমেই চাপের মধ্যে ফেলেছে। বাইডেনের পুনর্নির্বাচিত হওয়ার প্রচারণায় এই তরুণ ভোটাররা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার কথা কিন্তু তিনি এই তরুণদের খেপিয়ে তুলেছেন। সেইসাথে আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে কিছুটা নমনীয় হওয়ায়, বা ইহুদি-বিদ্বেষের অভিযোগের প্রতি অন্ধ অবস্থান নেয়ার কারণেও তাকে বড় ধরনের রাজনৈতিক মূল্য দিতে হতে পারে,’ বলেছেন বিবিসির ওয়াশিংটন সংবাদদাতা অ্যান্থনি জার্চার।

বাইডেন গত ২ মে হোয়াইট হাউসে যে বিবৃতি দিয়েছিলেন, সেখানে তিনি ভিন্নমত এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকার রক্ষার কথা বলেছিলেন তবে সবকিছুই অবশ্যই আইনের মধ্যে থেকে করা উচিত বলেও সতর্ক করে দিয়েছিলেন।

‘সঙ্ঘাতময় প্রতিবাদকে সুরক্ষা দেয়া হয় না, তবে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকে দেয়া হয়। যখন সহিংসতা ঘটে তখন তা আইনের পরিপন্থী। সম্পদ ধ্বংস করা কোনো শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ নয়, এটি আইন বিরোধী... ভাঙচুর, অনুপ্রবেশ, জানালা ভাঙা, ক্যাম্পাস বন্ধ করে দেয়া, জোরপূর্বক ক্লাস বাতিল করা- এর কোনোটিই শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ নয়,’ তিনি বলেছিলেন।

‘প্রতিবাদ করার অধিকার সবার আছে, কিন্তু বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার অধিকার কারো নেই,’ তিনি আরো যোগ করেন।

এই পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে কোহেন বলেছেন যে- চলমান বিক্ষোভ দমনে এই মুহূর্তে একটি যুদ্ধবিরতি বাইডেনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এই ইতিহাসবিদ অতীতের উদাহরণ টেনে এনে বলেন, এই বছর ডেমোক্রেটিক পার্টি কনভেনশন (ডিএনসি) শিকাগোতে অনুষ্ঠিত হবে, যেটা এর আগে ১৯৬৮ সালে হয়েছিল।

ওই সময় ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছিল যা সহিংস পন্থায় দমন এবং ব্যাপক বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে শেষ হয়।

‘১৯৬৮ সালে শিকাগোর মেয়র রিচার্ড ডেলির দমনাত্মক পুলিশ বাহিনীর সাথে ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করা শিক্ষার্থীদের সংঘাত বেঁধে যায়। তখনকার সব টেলিভিশনে সহিংসতার খবর প্রচার হয়েছিল।’

‘এবং এটি সত্যিই ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী, হুবার্ট হামফ্রেকে বড় ধরনের ধাক্কা দেয়, কারণ টেলিভিশনে ওই সহিংসতা দেখে মনে হয়েছিল ডেমোক্র্যাটরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী দল এবং তাদের শাসনামলে দেশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। এটি রিচার্ড নিক্সনকে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হতে সাহায্য করেছিল,’ কোহেন বলেন।

‘সুতরাং এখানে একটাই সম্ভাবনা আছে, তা হলো গাজার যুদ্ধবিরোধী আন্দোলন শান্তিপূর্ণভাবে হচ্ছে। তাই এই আশঙ্কা উবে যেতে পারে,’ তিনি যোগ করেন।

এখন থেকে আগস্টের মধ্যে ছাত্র বিক্ষোভ কোনদিকে যাবে তা দেখার বিষয়, তবে গত এপ্রিলে বেশ কয়েকটি ফিলিস্তিনিপন্থী দল ডিএনসি-এর বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলনের আহ্বান জানিয়েছে।

ইউএস প্যালেস্টাইন কমিউনিটি নেটওয়ার্কের নেতা হাতেম আবুদায়েহ ঘোষণা করেছেন, ‘ডিএনসি বিরোধী মিছিলটি শিকাগোর ইতিহাসে ফিলিস্তিনের জন্য সবচেয়ে বড় সমাবেশ হবে।’

‘আগস্ট মাসে, আমরা আশা করি যে- যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি, আরব, কৃষ্ণাঙ্গ, লাতিন, এশিয়ান এবং অন্যান্য বিক্ষোভকারীরা ‘জেনোসাইড জো’ বাইডেন, খুনি কমালা (ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিস) উচ্চস্বরে এবং স্পষ্টভাবে বলবে যেন ইসরাইলে মার্কিন সাহায্য বন্ধ করা হয়, ইসরাইলকে অস্ত্র দেয়া বন্ধ করা হয়,’ তিনি ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল সম্প্রচারিত এক ভিডিওতে এ কথা বলেন।

এই ঘোষণাগুলোর মাধ্যমে আবারো স্পষ্ট হচ্ছে যে- যুদ্ধের কারণে বাইডেন প্রচারাভিযান কতোটা সঙ্কটের মুখে পড়েছে।

অ্যান্থনি জার্চারের ভাষায়, ‘বাইডেনের কূটনৈতিক দল যদি শিগগিরই গাজায় যুদ্ধবিরতির বিষয়ে অগ্রগতি করতে না পারে তাহলে ক্যাম্পাসের অস্থিরতা বাইডেনের জন্য খারাপ দিন বয়ে আনতে যাচ্ছে।’
সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement