১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গুলি চালিয়েছিল মার্কিন পুলিশ

কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গুলি চালিয়েছিল মার্কিন পুলিশ - ফাইল ছবি

যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে চলমান ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভ ভণ্ডুল করে দিতে ব্যাপক অভিযান চালাচ্ছে আইন-প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। বিভিন্ন ক্যাম্পাস থেকে এ পর্যন্ত দুই হাজারের বেশি লোককে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে কোথাও কোথাও গুলি পর্যন্ত করা হয়েছে।

আইনজীবীরা বলছেন, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে এক পুলিশ অফিসার গুলি করেছে। ওই অফিসার ভবনটির ভেতরে গুলি করেন বলে ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি আলভিন ব্রাগসের অফিস নিশ্চিত করেছে।

তবে এতে কেউ আহত হয়নি বলে মুখপাত্র ডগ কোহেন জানিয়েছেন। তিনি জানান, কাছাকাছি আরো কয়েকজন অফিসার থাকলেও কোনো শিক্ষার্থী ছিল না। এ নিয়ে পর্যালোচনা চলছে বলে তিনি জানান।

এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে বলা হলেও নিউ ইয়র্ক পুলিশ বিভাগ সাড়া দেয়নি।

পুলিশ বৃহস্পতিবার রাতে হ্যামিল্টন হলে পুলিশ শক্তি প্রয়োগ করে প্রবেশ করার সময় গুলি চালানো হয়। ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভকারীরা ২০ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ব্যারিকেড দিয়ে হলের ভেতরে অবস্থান নিয়েছিল। ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ জিপ টাই এবং রায়ট শিল্প নিয়ে দ্বিতীয় তলার জানালা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। পুলিশ জানিয়েছে, ভেতরে বিক্ষোভকারীরা তেমন কোনো প্রতিরোধ করেনি।

এই অভিযানের সময় শতাধিক বিক্ষোভকারীকে হেফাজতে নেয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে পুলিশের দমন অভিযানে ইতোমধ্যেই যে দুই হাজারের বেশি লোককে গ্রেফতার করা হয়েছে, এরা তাদেরই অংশ।

তবে ম্যানহাটন ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি আলভিন ব্রাগসের অফিসের মুখপাত্র ডগলাস কোহেন বলেন, ওই পুলিশ অফিসার কারো দিকে অস্ত্র তাক করেননি। গুলিতে কেউ আহত হয়নি। গুলিটি দুর্ঘটনাক্রমে হয়েছিল।

কলম্বিয়ার বিক্ষোভকারীরা বৃহস্পতিবার সকালে হ্যামিল্টন হল দখলে নেয়। তারা ১৭ এপ্রিল থেকে তাঁবু স্থাপন করে বিক্ষোভ করছিল।

পরের দিন আরো শতাধিক লোককে গ্রেফতার করা হয়। বিক্ষোভকারীরা সাসপেন্ডের ভয় উড়িয়ে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেয়। পরে তারা হ্যামিল্টন হল দখল করে। তাদের এই ঘটনা ১৯৬৮ সালের স্মৃতিকে উস্কে দেয়। উল্লেখ্য, ওই সময় বর্ণবাদ এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধের প্রতিবাদে ওই প্রশাসনিক ভবনটি দখল করা হয়েছিল।

কলম্বিয়ার নিউ ইয়র্ক ক্যাম্পাস ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় প্রতিটি স্থানে বিক্ষোভ ও গ্রেফতার হয়েছে। এ সময়ে সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, লস অ্যাঞ্জেলস। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়।
তবে ইউসিএলএর শত শত বিক্ষোভকারী স্থান ত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানায়। পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করলে অনেক শিক্ষার্থী মানববন্ধন রচনা করে।
এখান থেকে অন্তত ২০০ লোককে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে ক্যালিফোর্নিয়া হাইওয়ে প্যাট্রলের আলেজান্ড্রো রুবিও জানিয়েছেন।

শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ক্যাম্পাসে তাঁবু খাটিয়ে বিক্ষোভ করে আসছিল। তারা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতি ইসরাইলের সাথে ব্যবসা বন্ধ করা, গাজা যুদ্ধকে সমর্থন করছে- এমন কোম্পানির সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি জানিয়ে আসছিল।
চলতি শতকে যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের বিক্ষোভ আর হয়নি।

এদিকে পুলিশের অভিযান চালানোর সময় অনেকে মারাত্মকভাবে আহতও হয়েছেন। ইলিনসের এক কলেজ অধ্যাপক জানান, ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভের সময় তাঁর পাঁজরের কয়েকটি হাড় ভেঙে গেছে।

পথচারীদের ভিডিওতে সাউদার্ন ইলিনয়স ইউনিভার্সিটি অ্যাডওয়ার্ডসভিলের ইতিহাসের অধ্যাপক স্টিভ তামারির গ্রেফতারের চিত্র দেখা যায়। তার সাথে কঠোর আচরণ করা হয়। তাঁর মাথায় আঘাত লেগেছে, পাঁজরের ৯টি হাড় ভেঙে গেছে বলে তার স্ত্রী জানিয়েছেন।
তামারি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘গাজায় ইসরাইলি গণহত্যার জন্য এটি হলো সামান্য মূল্য।’
ইসরাইল এসব বিক্ষোভকে অ্যান্টিসেমিটিক হিসেবে অভিহিত করেছে। তবে ইসরাইলের সমালোচকেরা বলছে, বিরোধীদের মুখ বন্ধ করার জন্য ইসরাইল এসব অভিযোগ উত্থাপন করছে। অল্প কয়েকজন বিক্ষোভকারী অ্যান্টিসেমিটিক মন্তব্য বা সহিংস হুমকি দিলেও বিক্ষোভের আয়োজকরা বলছেন (তাদের কেউ কেউ ইহুদিও), এটা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন। আর তা আয়োজন করা হয়েছে ফিলিস্তিনিদের অধিকার এবং যুদ্ধের প্রতিবাদ জানাতে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করার অধিকারের প্রতি সমর্থন ঘোষণা করলেও একই সাথে সাম্প্রতিক সময়ের বিশৃঙ্খলার সমালোচনা করেন।

সূত্র : আল জাজিরা এবং অন্যান্য


আরো সংবাদ



premium cement