২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

মামলার পর ট্রাম্প কি আর নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবেন?

২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হবেন ট্রাম্প - ছবি : বিবিসি

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন এমন একজন ব্যক্তি যিনি আদালতে একজন যৌন-নির্যাতনকারী হিসেবে সাব্যস্ত হয়েছেন। একইসাথে আরেকটি ফৌজদারি মামলার আসামি।

এমন এক সময় এ ঘটনা ঘটল যখন তিনি ২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হবার কথা জানান। রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থীদের মধ্যে জনপ্রিয়তার দৌড়েও অন্তত এখন পর্যন্ত তিনিই এগিয়ে।

মঙ্গলবার (১০ মে) নিউইয়র্কের এক আদালতের জুরিরা রায় দেন যে ১৯৯০-এর দশকে ম্যানহাটানে ই জীন ক্যারল নামে এলি ম্যাগাজিনের একজন কলামিস্টের ওপর যৌন নির্যাতন চালিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

মিজ ক্যারল অভিযোগ করেছিলেন, ট্রাম্প তাকে একটি ডিপার্টমেন্ট স্টোরের ড্রেসিং রুমের ভেতর ধর্ষণ করেছিলেন, কিন্তু তা আদালতে প্রমাণ হয়নি। তবে যৌন নির্যাতন ও মানহানির মামলায় ট্রাম্পকে ৫০ লাখ ডলার ক্ষতিপূরণ দেবার আদেশ দিয়েছেন আদালত।

এর কিছুদিন আগেই গত ৩০ মার্চ নিউইয়র্কে আরেক মামলায় একজন পর্ন তারকাকে মুখ বন্ধ রাখার জন্য অর্থ দেবার দলিলপত্র জালিয়াতির দায়ে ট্রাম্প অভিযুক্ত হয়েছেন। ওই মামলায় বলা হয় ২০১৬-র প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ট্রাম্প ওই পর্ন তারকাকে অর্থ দেবার জন্য তার ব্যবসায়িক কাগজপত্রে মিথ্যা তথ্য দিয়েছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রে কোনো সাবেক বা ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টের ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত হবার ঘটনা এটাই প্রথম। ট্রাম্প দুটি ক্ষেত্রেই নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেছেন, এসব অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

ট্রাম্প কি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবেন?
মূল প্রশ্ন হলো, এসব মামলার ফলে ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট পদে আবার নির্বাচন করার পথে কোনো বাধা সৃষ্টি হবে কী না?

আইন বিশেষজ্ঞদের উদ্ধৃত করে টাইম ম্যাগাজিন বলছে, এককথায় এর উত্তর হচ্ছে, ‘না, তেমন কিছুই হবে না।’

ইউসিএলএ ল' স্কুলের নির্বাচনী আইন সংক্রান্ত অধ্যাপক রিচার্ড হ্যাসেন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে কেউ ‘ফেলোনি’ বা গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত হলেও তার প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন করার পথে কোনো সাংবিধানিক বাধা নেই।

মার্কিন সংবিধান মতে কমপক্ষে ৩৫ বছর বয়স্ক যে কোনো নাগরিক, যার সেদেশের মাটিতে জন্ম হয়েছে এবং যিনি সেখানে ১৪ বছর থেকেছেন তিনিই প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যগুলো এ আইনে কোনো পরিবর্তন আনতে পারে কিনা তাও স্পষ্ট নয়। এমনকি ট্রাম্প তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা থাকলেও বা জেল হলেও তার নির্বাচনী প্রচারাভিযান চালিয়ে যেতে পারবেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন যেহেতু ট্রাম্পের মামলাটি একটা সিভিল অর্থাৎ দেওয়ানি মামলা। তাই এর ফলে তাকে কোনো ফৌজদারি পরিণতির সম্মুখীন হতে হবে না। সেদিক থেকে দেখলে তার কারাগারে যেতে হতে পারে এমন কোনো হুমকিও নেই।

মামলার জুরিরা মিজ ক্যারলকে ৫০ লাখ ডলার ক্ষতিপূরণ দেবার যে রায় দিয়েছেন, সে অর্থও ট্রাম্পকে এখনই দিতে হবে না যতদিন এ মামলার আপিলের প্রক্রিয়া চলে।

জেল থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দুটি নজির
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কারাগারে থেকেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হবার অন্তত দুটি নজির আছে।

১৯২০ সালে ইউজিন ডেবস নামে সোশ্যালিস্ট পার্টির এক ব্যক্তি গুপ্তচরবৃত্তি আইন লঙ্ঘনের দায়ে আটলান্টায় জেলে থাকা সত্ত্বেও প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হয়েছিলেন। এ ছাড়া লিন্ডন লা'রুশ নামে আরেকজন ১৯৯২ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন কারাগারে থাকা অবস্থায়। তিনি ট্যাক্স জালিয়াতির মামলায় জেল খাটছিলেন।

কিন্তু সমস্যা হচ্ছে দণ্ডিত অবস্থায় বা ধরা যাক জেলে থাকা অবস্থায় কোনো প্রার্থী যদি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিতে যান, তাহলে কি হবে তার কোনো ব্যাখ্যা যুক্তরাষ্ট্রের আইনে নেই।

তাছাড়া ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে করা কোনো মামলার বিচার চলবে কিনা বা তা কীভাবে হবে, মামলায় প্রেসিডেন্ট দণ্ডিত হলেই বা কি হবে- এসব প্রশ্নে ব্যাপক আইনি জটিলতা দেখা দিতে পারে বলেই বিশ্লেষকরা বলছেন।

রাজনৈতিক ক্ষতি কতটা হবে?
ট্রাম্প ২০১৭ থেকে ২০২১ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ছিলেন। আগাম নির্বাচনের জন্য সম্ভাব্য রিপাবলিকান প্রার্থীদের জনপ্রিয়তার তালিকায় তিনিই এগিয়ে। এমনটাই দেখা গেছে জনমত জরিপগুলোতে।

এমনকি গত মাসে একজন পর্ন তারকাকে মুখ বন্ধ রাখার জন্য অর্থ দেবার মামলায় ট্রাম্প অভিযুক্ত হবার পরেও দেখা যায় জনমত জরিপে তার অবস্থানের উন্নতি হয়েছে।

রয়টার্স বলছে, ট্রাম্প এর আগেও এটা দেখিয়েছেন যে তিনি অতীতে এমন বহু রকম বিতর্কের ধাক্কা কাটিয়ে উঠেছেন। যা অন্য রাজনীতিবিদদের ডুবিয়ে দিতে পারত।

বিশ্লেষকরা বলছেন, আমেরিকায় রাজনীতিতে এত তীব্র মেরুকরণ হয়েছে যে এই মামলাটি ট্রাম্পের কট্টর সমর্থকদের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে এমন সম্ভাবনা কম। কারণ এই সমর্থকরা মনে করেন এসব মামলা মূলত ট্রাম্পকে হেয় করার জন্য তার বিরোধীদের এক সমন্বিত প্রয়াসের অংশ।

পেনসিলভানিয়া রাজ্যের রিপাবলিকান স্ট্রাটেজিস্ট চার্লি গেরো বলছেন, ‘যারা ট্রাম্প-সমর্থক তাদের মধ্যে কোনো পরিবর্তন হবে না। যারা ট্রাম্প বিরোধী তারাও ঠিক সেরকমই থাকবে। যারা মাঝামাঝি আছে তারাও এসব ঘটনার ফলে কোনো একদিকে হেলে যাবে বলে আমি মনে করছি না।’

তিনি বলছেন, নেতিবাচক প্রভাব যদি পড়ে তা হবে খুবই কম। মূলত তা উপশহরগুলো বাসিন্দা নারী এবং মধ্যপন্থী রিপাবলিকানদের মধ্যে সীমিত থাকবে।

একজন ডেমোক্র্যাট স্ট্রাটেজিস্ট লিজ স্মিথও বলছেন, এ মামলায় রায় ট্রাম্পের গোঁড়া-সমর্থক বলয়ের বাইরের রিপাবলিকান ভোটারদের কাছে তাকে অগ্রহণযোগ্য করে তোলে কিনা বা তাদেরকে অন্য কোনো রিপাবলিকান প্রার্থীর সমর্থক হতে উদ্বুদ্ধ করে কিনা, তা এখনো দেখার বিষয়।

রিপাবলিকান শিবিরে কী প্রতিক্রিয়া হলো?

বিবিসির বিশ্লেষক অ্যান্টনি জার্কার বলছেন, রিপাবলিকান পার্টির ভেতরে ট্রাম্পের সমর্থন এসব মামলার কারণে হয়ত তেমন কমবে না। কিন্তু ভবিষ্যতে নানা রকম রাজনৈতিক ও আইনগত ক্ষতি হতে পারে।

ট্রাম্পের সমর্থকরা যুক্তরাষ্ট্রের গোটা আইনী ব্যবস্থাটাকেই সন্দেহের চোখে দেখেন এবং শত বিপদেও তারা হয়তো ট্রাম্পের পাশে থাকবেন। কিন্তু তাতে সমস্যা পুরোপুরি কাটবে না।

প্রভাবশালী মার্কিন দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্ট এবং নিউইয়র্ক টাইমসে বলা হচ্ছে, ট্রাম্পের বিরোধীরা এখন পর্যন্ত খুব জোর গলায় এর নিন্দা জানাননি।

তবে আরকানসাসের সাবেক গভর্নর এবং রিপাবলিকান প্রার্থী আসা হাচিনসন এক বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, ‘জুরিদের এ রায়কে গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পে আচরণ যে কোনোভাবেই সমর্থন করা যায় না এটি তার আরেকটি দৃষ্টান্ত।’

দক্ষিণ ডাকোটার সেনেটর জন থুন বলছেন, এ সমস্যার অভিঘাত ধীরে ধীরে পুঞ্জীভূত হবে। মানুষকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে তারা এই নাটক আর কতদিন সহ্য করবেন।

টেক্সাসের জন করনিন বলছেন, ‘আমার মনে হয়না ট্রাম্প নির্বাচিত হতে পারবেন। কারণ একটা সাধারণ নির্বাচন শুধু নিজের সমর্থকদের ওপর ভর করে জেতা যায়না।’

নিউইয়র্ক টাইমসের এক রিপোর্টে বলা হচ্ছে, সাবেক ভাইস-প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স বলেছেন, ট্রাম্প আবার প্রেসিডেন্ট হবার উপযুক্ত কিনা তা আমেরিকান জনগণই ঠিক করবে।

ট্রাম্পের জন্য ভবিষ্যতে বিপদ ঘটতে পারে
২০২০ সালের নির্বাচনে আমেরিকান উপশহরগুলোর ভোটাররা বিশেষত নারীরা ট্রাম্পের রাজনীতি থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নিয়েছিলেন।

সবশেষ এ দুটি মামলা হয়তো এই শ্রেণির ভোটারদেরকে তার কাছ থেকে আরো দূরে সরিয়ে নিয়ে যেতে পারে। এতদিন পর্যন্ত ট্রাম্প বেশ সুশৃঙ্খলভাবেই ২০২৪-এর নির্বাচনের জন্য তার প্রচারণা চালাচ্ছিলেন।

তার নির্বাচনী দল গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যগুলোর প্রাইমারিতে তৃণমূল পর্যায়ে সমর্থন গড়ে তুলছিলেন। রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়ন পাবার প্রতিযোগিতায় ট্রাম্প তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী রন ডেসান্টিসকে লক্ষ্য করে আক্রমণ শানাচ্ছিলেন। এমনকি একজন পর্ন তারকাকে অর্থ দেবার মামলাটিকেও তিনি তার প্রতি সমর্থন বাড়াতে কাজে লাগাচ্ছিলেন।

তবে এখন যৌন নির্যাতনের মামলাটির ফলে তার প্রতিপক্ষের জন্য হয়তো পাল্টা আক্রমণ চালানোর একটা রাস্তা খুলে দিতে পারে। এছাড়া ট্রাম্প যদিও এতদিন ধরে এসব মামলা ও আইনগত সমস্যাকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের অপচেষ্টা বলে উড়িয়ে দিচ্ছিলেন, কিন্তু এখন সাধারণ আমেরিকানরা হয়তো মনে এই ধারণা তৈরি হতে পারে যে ট্রাম্প আসলেই একটি অপরাধ করেছেন।

কিছু বিশ্লেষকের মতে, এই মামলাটি অন্যগুলোর মতো নয়। একজন নারীকে যৌন নির্যাতনের ঘটনা একটি স্পর্শকাতর ব্যাপার। তাই এটিকে উড়িয়ে দেয়া ট্রাম্পের জন্য অত সহজ হবে না।

ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, এটি এমন একটি ইস্যু যার প্রতি আমেরিকান জনগণের প্রতিক্রিয়া অন্য কিছুর তুলনায় বেশি বিরূপ হতে পারে। আগেকার কিছু জনমত জরিপে এমন আভাস পাওয়া গেছে।

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আরো কিছু মামলা আছে। যেমন মার্কিন কংগ্রেস ভবনে আক্রমণের ঘটনায় ট্রাম্প জড়িত ছিলেন কিনা। হোয়াইট হাউস ছাড়ার পর গোপনীয় দলিলপত্র নিয়ে তিনি কি করেছিলেন ২০২০-এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। যাতে তিনি পরাজিত হন তার ফলাফল তিনি উল্টে দেবার চেষ্টা করেছিলেন কিনা। এরকম বেশ কিছু অভিযোগের এখনো তদন্ত চলছে।

বিবিসির বিশ্লেষক বলছেন, এসব মামলার জন্য ট্রাম্পকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে এমন সম্ভাবনা ক্ষীণ। কিন্তু এগুলো তার জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
জাতীয় দলে যোগ দিয়েছেন সাকিব, বললেন কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই কারওয়ান বাজার থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে ডিএনসিসির আঞ্চলিক কার্যালয় এলডিসি থেকে উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন : প্রধানমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি আহসান উল্লাহ ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার বিষয়ে ইউনূস সেন্টারের বিবৃতি আনোয়ারায় বর্তমান স্বামীর হাতে সাবেক স্বামী খুন, গ্রেফতার ৩ ফতুল্লা প্রেস ক্লাবের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত বদরের শিক্ষায় ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে : সেলিম উদ্দিন ইসলামের বিজয়ই বদরের মূল চেতনা : ছাত্রশিবির পরিবেশ দূষণে বাংলাদেশে বছরে ২ লাখ ৭২ হাজার মানুষের মৃত্যু : বিশ্বব্যাংক নোয়াখালীতে ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত

সকল