২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হতে চান বিবেক রামাসোয়ামি, কে এই ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্যক্তি?

বিবেক রামাসোয়ামি - ছবি - বিবিসি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যে তিনজন রিপাবলিকান অংশ নেয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন তাদের মধ্যে দু’জন হলেন ভারতীয়-আমেরিকান।

নিকি হ্যালি বেশ পরিচিত নাম হলেও প্রার্থী হিসেবে হঠাৎই নাম ঘোষণা করা হয় বিবেক রামাসোয়ামির, যিনি তেমন একটা পরিচিত নন। তার প্রার্থী হওয়ার সম্ভাব্যতা মূল্যায়ন করেছেন ক্যালিফোর্নিয়া-ভিত্তিক সাংবাদিক সবিতা প্যাটেল। তিনি একজন ধনাঢ্য উদ্যোক্তা এবং ‘ওক, ইঙ্ক’ শীর্ষক বইয়ের লেখক।

২১ ফেব্রুয়ারি ফক্স নিউজ শোতে নিজের রাজনৈতিক মতামত তুলে ধরে ক্যামেরার সামনে প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি।

নতুন আমেরিকান স্বপ্ন নির্মাণে ‘সাংস্কৃতিক আন্দোলন’ গড়ে তুলতে চান রামাসোয়ামি। যার ভিত্তি হবে 'দক্ষতা ও যোগ্যতা'। তিনি বলেছেন, ‘মানুষের সাথে মানুষের যদি বন্ধন তৈরী করা না যায় তাহলে বৈচিত্র্য থাকা অর্থহীন’।

রামাসোয়ামি (৩৭) ওহাইওতে জন্মগ্রহণ করেছেন। হার্ভার্ড এবং ইয়েলে পড়াশোনা করেছেন। বায়োটেকনোলজি উদ্যোক্তা হিসাবে লাখ লাখ ডলার উপার্জন করেছেন। এরপর একটি সম্পদ ব্যবস্থাপনা ফার্ম প্রতিষ্ঠা করেছেন।

তিনি বর্ণবাদ এবং জলবায়ু নিয়ে করপোরেট বিশ্বের ‘ওকেইজম’ এর বিরুদ্ধে বেশ সোচ্চার ভূমিকা পালন করেন। তার দাবি, এটি ব্যবসা এবং দেশ সবার জন্যই ক্ষতিকর।

রামাসোয়ামি মূলত ইএসজি (পরিবেশ, সামাজিক এবং করপোরেট গভর্নেন্স) উদ্যোগের বিরোধী। এর মাধ্যমে মূলত একটি কোম্পানির সামাজিক এবং পরিবেশগত প্রভাব পরিমাপ করা হয়। তিনি চীনের ওপর মার্কিন অর্থনৈতিক নির্ভরতা কমাতে চান।

রামাসোয়ামির মতামত তার সহকর্মী রিপাবলিকান বিক্রম শারামানির সাথে মিলে যায়। যিনি ২০২২ সালের মধ্যবর্তী মেয়াদে নিউ হ্যাম্পশায়ার থেকে মার্কিন সেনেটের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন এবং সম্প্রতি রাজ্য সফরের সময় রামাসোয়ামির সাথে দেখা হয় তার।

শারামানি এই ভারতীয়-আমেরিকান সহকর্মীকে ‘খুবই হৃদয়গ্রাহী, স্পষ্টবাদী এবং চিন্তাশীল’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

তিনি বলেছেন, ‘আমেরিকাকে আলাদা করার পরিবর্তে একত্রিত করা’ হচ্ছে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি।

‘ব্যক্তি পরিচয়ের রাজনীতি যুক্তরাষ্ট্রে শিকড় গেড়েছে এবং এতে একতার পরিবর্তে বিভক্তিমূলক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে’। আমাদের মধ্যে যে বিষয়গুলোয় মিল রয়েছে তার ওপর ভর করেই আমাদের দাঁড়াতে হবে।

শারামানি আরো বলেন, সম্প্রতি তার পরিবারও নিউ হ্যাম্পশায়ারে নিকি হ্যালিকে দাওয়াত করেন।

তবে, তাদের চিন্তাধারার সাথে কিছু ভারতীয়-আমেরিকানের মধ্যে মতবিরোধ দেখা যায়। তারা রামাসোয়ামির রাজনীতির সাথে একমত নন। তাদের ধারণা, তার প্রচারণায় গভীরতার অভাব রয়েছে।

এ বিষয়ে এশিয়ান আমেরিকানস অ্যান্ড প্যাসিফিক আইল্যান্ডার্স ভিক্টরি ফান্ডের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ডেমোক্র্যাট শেখর নারাসিমহান বলেছেন, ‘মার্কিন রাজনীতিতে এশিয়ান-আমেরিকানদের গুরুত্ব দেখে তিনি খুশি হলেও রামাসোয়ামির বিষয়ে তিনি আস্থাশীল নন’।

প্রশ্ন তোলেন যে তিনি একজন ব্যবসায়ী মানুষ এবং তার ব্যক্তিত্বে কোনো দাগ নেই। কিন্তু তার রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি কী? তিনি কি বয়স্কদের চিকিৎসার বিষয়ে খেয়াল রাখেন? অবকাঠামো খাতে ব্যয়ের বিষয়ে তার পরিকল্পনা কী? তার নির্দিষ্ট কোনো অবস্থান নেই এবং এখনো তার নীতিগুলো স্পষ্ট করেননি।

বিভিন্ন কমিউনিটির অনেক মানুষ আছেন যারা অনেক বছর ধরে রিপাবলিকানদের সমর্থন করছেন। তারা বলেছেন, রামাসোয়ামি এই লড়াইয়ে না আসা পর্যন্ত তারা কখনো তার সম্পর্কে শোনেননি।

রিপাবলিকান পার্টি সমর্থক এবং তহবিল সংগ্রহকারী ডা. সাম্পাত শিভাঙ্গি বলেছেন, ‘আমি তার সাথে কখনো দেখা করিনি। শুনেছি তার অনেক টাকা আছে এবং বেশ ভালো করে কথা বলেন। কিন্তু তিনি অন্য ১০টা প্রার্থীর মতোই একজন প্রার্থী। তার খুব বেশি সুযোগ নেই’।
অন্যরাও তার বক্তব্যে একমত প্রকাশ করেন।

হোটেল ব্যবসায়ী ড্যানি গ্যাকওয়াড বলেছেন, রামাসোয়ামি যদি প্রথম দিকে তার উপস্থিতি জানান না দেন, তাহলে কেউ তার কথা জানতে চাইবে না।

যদিও গ্যাকওয়াড প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য রামাসোয়ামির সাহসের প্রশংসা করে বলেছেন যে তার একটি কৌশল থাকা বেশ জরুরি। সেটি হলো ‘ভারতীয়-আমেরিকানদের জন্য কিছু আছে’।

তিনি আরো বলেছেন, আমরা এখনো প্রাথমিক অবস্থায় আছি, ফ্লোরিডায় দু’জন শক্তিশালী প্রার্থী থাকতে পারেন। এর মধ্যে গভর্নর রন ডিসান্টিস বলেন যে যিনি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে হোয়াইট হাউসের লড়াইয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেননি এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প লড়াইয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

ভারতীয়-আমেরিকান রিপাবলিকানরা ‘ট্রাম্প, ডিসান্টিস এবং হ্যালির মধ্যে ত্রিমুখী লড়াইয়ের ভবিষ্যদ্বাণী করছেন।’

শিভাঙ্গি নিকি হ্যালির আক্রমণাত্মক প্রচারণা শৈলীর প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ট্রাম্প যদি প্রার্থিতার লড়াই থেকে ছিটকে পড়েন তাহলে হ্যালিকে সমর্থন করবেন।

তিনি আরো বলেন, ‘ট্রাম্পের ৪০ শতাংশ রেটিং রয়েছে এবং হ্যালি একক সংখ্যায় আছেন। কিন্তু তিনি আমাদের প্রার্থী। তিনি ভারতীয়-আমেরিকান হওয়ার কারণেই আমরা তার এতটা কাছাকাছি আছি।’

রাজনৈতিক মতপার্থক্য নির্বিশেষে, ভারতীয়-আমেরিকান সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ ক্রমে বাড়তে থাকায় ওই সম্প্রদায়ের মানুষ বেশ খুশি, বিশেষ করে গত তিন দফার নির্বাচনে এবং এবার একজনের প্রার্থিতার সম্ভাবনা তাদের বেশ গর্বিত করেছে।

গ্যাকওয়াড বলেছেন, ‘একটি সুন্দর জিনিস ঘটছে, ভারতীয়-আমেরিকানরা সামনে আসছে। সাম্প্রতিক এই লড়াই স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে উৎসাহিত করতে পারে। এতে রাজনৈতিক বিরোধীরাও একমত হবেন।‘

নারাসিমহান বলেছেন, ‘আমাদের বাচ্চারা যদি দেখে যে রামাসোয়ামি বা খান্না বা কৃষ্ণমূর্তির মতো নামধারী আমেরিকানরা জয়ী হচ্ছে, তাহলে সেটা দারুণ হবে’।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement