২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

টেক্সাসের স্কুলে গুলি করে ২১ জনকে হত্যা : কী ঘটেছিল সেদিন?

টেক্সাসের স্কুলে গুলি করে ২১ জনকে হত্যা : কী ঘটেছিল সেদিন? - ছবি : সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে গত ২৪ মে এক কিশোরের নির্বিচার গুলিবর্ষণে ১৯ শিক্ষার্থী এবং দু'শিক্ষক নিহত হন। নৃশংস এই ঘটনা কি এড়ানো যেত না? এ নিয়ে নানা তথ্য ওঠে আসছে এখনো। এর মধ্যেই আততায়ীর গতিবিধি এবং ঘটনাস্থলে পুলিশ বাহিনীর পৌঁছনো নিয়ে আসল তথ্য লুকোনোর দায়ে এবার প্রশ্নের মুখে আমেরিকার টেক্সাসের ‘ডিপার্টমেন্ট অব পাবলিক সেফটি’।

ঘটনার পরে পুলিশ জানিয়েছিল, স্কুলে ঢোকার আগে এক পুলিশ কর্মকর্তা সালভাদর র‌্যামোস নামে ওই বন্দুকবাজকে বাধা দেন। কিন্তু তাকে টেক্কা দিয়ে কোনোমতে পেছনের দরজা দিয়ে স্কুলে প্রবেশ করে সে। উল্টা দিকে নিহত শিশুদের অভিভাবক এবং একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীরই অভিযোগ ছিল, স্কুলের মূল গেটে নিরাপত্তার অভাব ছিল। হামলা শুরুর অনেকক্ষণ পরে স্কুলটিতে পুলিশের সশস্ত্র বাহিনী এসে পৌঁছয়। নিহতদের আত্মীয়-পরিজনের মতে, পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছলে হয়তো এত মৃত্যু এড়ানো যেত।

এই নিয়ে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের মাঝেই আগের অবস্থান থেকে সরে এসে টেক্সাসের পুলিশ জানাল, ‘দাদির বাড়ি থেকে স্কুল পর্যন্ত পৌঁছনোর পথে কোথাও বাধা পায়নি ওই বন্দুকবাজ। কেউ তার পথ আটকায়নি।’ তবে একই সঙ্গে দফতরের মুখপাত্রের দাবি, বন্দুকবাজ হানার খবর পাওয়ার মিনিট চারেকের মধ্যেই স্কুলে বাইরে পৌঁছয় পুলিশ। অপেক্ষা ছিল ‘বর্ডার প্যাট্রল ট্যাকটিক্যাল টিম’-এর। তাদের পৌঁছতে ঘণ্টাখানেক পেরিয়ে যায় বলেও স্বীকার করে নিয়েছেন পুলিশের ওই মুখপাত্র।

কিন্তু অসংলগ্নতা রয়েছে এখানেও। পুলিশ যতই দাবি করুক দেরি হলেও ঘটনাস্থলে পৌঁছেই বন্দুকবাজকে আটকাতে ঝাঁপিয়ে পড়েন কর্মকর্তারা- অভিভাবকদের অভিযোগ, প্রাথমিকভাবে স্কুলের ভিতরে ঢুকতেই ইতস্তত করছিলেন কর্মকর্তাদের! ঘটনার সময়ের একাধিক ভিডিও ফুটেজেও দেখা গিয়েছে, বাইরে কর্মকর্তারা ভিড় জমালেও অভিভাবকদের কাতর আর্জি সত্ত্বেও ভিতরে ঢুকছেন না কেউ। এমনকি বার বার ওই আর্জি জানানোয় তাকে ‘পুলিশের তদন্তে হস্তক্ষেপ’ করার অভিযোগে বেশ কিছুক্ষণ হাতকড়া পরিয়ে রাখা হয় বলে জানান এক শিক্ষার্থীর মা! ওই ঘটনায় সদ্য কন্যা হারানো এক বাবার কথায়, ‘কর্মকর্তারা এত দেরি করছিলেন স্কুলে ঢুকতে যে আমি এবং আরো কয়েকজন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলাম যে আমরাই দৌড়ে ভিতরে ঢুকে যাব।’

যদিও এই বিষয়গুলো নিয়ে এখনও কোনো মন্তব্য করেনি সংশ্লিষ্ট দফতর। কিন্তু টেক্সাসের ‘ডিপার্টমেন্ট অব পাবলিক সেফটি’-র প্রধান স্টিভেন ম্যাক ক্র সময় মতো পুলিশের স্কুলের অন্দরে প্রবেশ না-করা নিয়ে এ দিন বলেন, ‘সিদ্ধান্তটি একেবারেই ভুল ছিল। আমি যেটুকু জেনেছি তাতে সাথে সাথে প্রবেশ করাই উচিত ছিল। যদি এতে কিছু এসে যেত, তা হলে আমি অবশ্যই ক্ষমা চেয়ে নিতাম।’

ছড়িয়ে পড়ছে ওই দিনের আরো বিভিন্ন ঘটনা। যার মধ্যে রয়েছে ছোট্ট মিয়া সেরিলোর কাহিনিও। সে দিন র‌্যামোসের হাত থেকে বাঁচতে পাশে পড়ে থাকা বন্ধুর শরীর থেকে খানিকটা রক্ত মুখে মেখেছিল বছর এগারোর মিয়া। তার পর মৃতের অভিনয় করে শুয়ে থাকা। এভাবেই কোনো মতে রক্ষা পায় সে। এ দিকে, আমেরিকার স্কুলের ওই ঘটনায় নিহত দুই শিক্ষিকার মধ্যে একজন, ইরমা গার্সিয়ার অন্ত্যেষ্টির আয়োজন চলার সময়ে হৃদ্‌যন্ত্র বিকল হয়ে মৃত্যু হলো তার স্বামীর। আত্মীয়দের দাবি, স্ত্রীর মৃত্যু সম্ভবত মানতে পারেননি জো গার্সিয়া।

অন্য দিকে, স্কুলের কাছে অস্ত্র হাতে দেখা গিয়েছিল এক যুবককে। কানাডা পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হলো তার। বৃহস্পতিবার টরন্টোয় ওই ঘটনার পরে বেশ কয়েকটি স্কুল বন্ধ হয়ে যায়। শহরের পুলিশ প্রধান শুধু জানান, বছর কুড়ির এক যুবক পুলিশ কর্মকর্তার সাথে বচসায় জড়ান। প্রশ্ন উঠছে, পুলিশ যে সময় ওই যুবককে গুলি করে মেরেছিল তখনও কি তার হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল? তদন্তাধীন বলে কিছু জানাতে চাননি জেমস। আমেরিকার স্কুলে সাম্প্রতিক গুলি-ঘটনার পর থেকে সতর্কতা বেড়েছে কানাডাতেও।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা


আরো সংবাদ



premium cement

সকল