১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

চীন-মার্কিন দ্বন্দ্ব : হুয়াওয়ে মালিকের মেয়ের মুক্তি কী ইঙ্গিত দিচ্ছে

চীন-মার্কিন দ্বন্দ্ব : হুয়াওয়ে মালিকের মেয়ের মুক্তি কী ইঙ্গিত দিচ্ছে -

যুক্তরাষ্ট্রের দায়ের করা প্রতারণার অভিযোগ কাঁধে নিয়ে ১০০০ দিন কানাডায় গৃহবন্দী থাকার পর শনিবার যখন চীনা টেলিকম জায়ান্ট হুয়াওয়ের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা মাং ওয়ান জো শেনজেন বিমানবন্দরে নামেন পুরো চীন আবেগের জোয়ারে ভাসছিল।

চীনা অনলাইন সার্চ ইঞ্জিন সিনা উইবোতে শনিবার দিনভর সবচেয়ে বেশি সার্চ হয়েছে মাংয়ের দেশে ফেরার প্রসঙ্গ। এ সম্পর্কিত বিভিন্ন ছবি-খবর-বিবৃতিতে কমপক্ষে ১০ কোটি হিট হয়েছে।

চীনা সরকারি মুখপাত্র গ্লোবাল টাইমস লিখেছে মাংকে বহনকারী বিমানটির অবতরণ থেকে শুরু করে বিমানবন্দরে তাকে সংবর্ধনার লাইভ স্ট্রিমিং দেখেছেন ৩ কোটি চীনা।

২০১৮ সালের পহেলা ডিসেম্বরে মেক্সিকোতে একটি ব্যাবসায়িক সফরে যাওয়ার পথে ভ্যাঙ্কুভারে যাত্রাবিরতির জন্য নামার পর কানাডার পুলিশ মাং ওয়ান জোকে আটক করে। পরে জানা যায় যুক্তরাষ্ট্রে সরকার ওই গ্রেফতার চেয়েছে।

মিজ মাংয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ফাঁকি দিয়ে হুয়াওয়ে ইরানের সাথে ব্যবসা করেছে এবং তা চাপা দিতে এইচএসবিসি ব্যাংকের কাছে তিনি মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদ এবং বিচারের জন্য যুক্তরাষ্ট্র কানাডার কাছে তার প্রত্যর্পণ চাইলেও আইনি লড়াই করে তা ঠেকিয়ে রাখে হুয়াওয়ে।

গত প্রায় তিন বছর মিজ মাং ভ্যাঙ্কুভারে তার কেনা বাড়িতে গৃহবন্দী ছিলেন। পুরো সময়টা তার গোড়ালিতে বাধা ছিল জিপিএস ট্র্যাকার যাতে ২৪ ঘণ্টা তার ওপর নজরদারী করা যায়।

এই গ্রেফতার নিয়ে কানাডার সাথে চীনের সম্পর্ক রাতারাতি তলানিতে ঠেকে। মিজ মাংয়ের গ্রেফতারের পরপরই চীনে ব্যবসার সূত্রে সফররত দুজন কানাডীয় নাগরিককে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে আটক করা হয়।

তবে এই গ্রেফতার নিয়ে মূল কূটনৈতিক শুরু হয় যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে। প্রকাশ্যে এবং পর্দার আড়ালে।

অপমানিত চীন
প্রযুক্তিতে সাম্প্রতিক সময়ে চীনের যে অসামান্য অগ্রগতি তার অন্যতম প্রতীক হুয়াওয়ে। এই কোম্পানি এখন বিশ্বের এক নম্বর টেলিকম যন্ত্র নির্মাতা।

কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা রেন জেংফেই চীনা কম্যুনিস্ট পার্টির একজন নেতৃস্থানীয় সদস্য। একসময় চীনা সেনাবাহিনীতে ছিলেন তিনি। তারই মেয়েকে, যাকে হুয়াওয়ের উত্তরসূরি হিসাবে দেখা হয়, এভাবে বিমানবন্দর থেকে আটক করে নিয়ে গিয়ে প্রতারণার অভিযোগে অভিযুক্ত করাকে চীন তাদের জাতীয় মর্যাদার প্রতি আমেরিকার ইচ্ছাকৃত একটি আঘাত হিসাবে বিবেচনা করেছে।

চীনা গবেষণা সংস্থা চায়না অ্যাকাডেমি অব সোশ্যাল সায়েন্সের গবেষক গাও লিওয়ান মনে করেন চীনের চাপের মুখেই যুক্তরাষ্ট্র মিজ মাংয়ের মুক্তি ব্যাপারে আপস করেছে।

তাকে উদ্ধৃত করে গ্লোবাল টাইমস লিখেছে (যুক্তরাষ্ট্রের) হাতে কোনো বিকল্প ছিল না। কারণ জলবায়ু পরিবর্তন এবং কোভিড প্যানডেমিকের মতো লড়াই মোকাবেলায় চীনের সহযোগিতার কোনো বিকল্প তাদের নেই। চীনের সাথে সম্পর্ক খারাপ হওয়ার জেরে যুক্তরাষ্ট্রে মুদ্রাস্ফীতি এবং সরকারি ঋণ বেড়েই চলছে।

গোপন বোঝাপড়া?
ড. মাহমুদ আলীও মনে করেন হুয়াওয়ে কর্মকর্তার মুক্তির পেছনে একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত কাজ করেছে। আড়াই বছর ধরে এই টানাপড়েন চলছিল। অপরাধের অভিযোগ তো বদলে যায়নি। তাহলে হঠাৎ এই মুক্তি কেন? তাছাড়া মাংয়ের মুক্তির সাথে সাথে চীন দুই কানাডীয়কে মুক্তি দিয়ে দিল। মীমাংসার ইঙ্গিত স্পষ্ট।

গ্লোবাল টাইমস শনিবার তাদের সম্পাদকীয়তে লিখেছে, তিন বছর আগে যে বিশৃঙ্খলার জন্ম হয় মাংয়ের মুক্তি তা ঘোচাতে সাহায্য করবে বলে আমরা আশা করি। কিন্তু একটি কোম্পানির একজন কর্মকর্তার মুক্তিতেই কি চীন-মার্কিন সম্পর্কে বরফ গলা শুরু হবে?

ড মাহমুদ আলী বলেন, অদূর ভবিষ্যতে সম্পর্কে মৌলিক কোনো বদল হবে বলে তিনি মনে করেন না।

জি-২০ সম্মেলনে শি জিন পিং এবং জো বাইডেনের কোনো মুখোমুখি বৈঠক হয় কিনা এবং জলবায়ু সম্মেলনে শি বা চীনা প্রধানমন্ত্রী হাজির থাকবেন কিনা তা থেকে বুঝা যাবে সম্পর্কে বরফ সত্যিই গলছে কি গলছে না, বলেন ড. আলী।

তবে চীনের সামরিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব খাটো করাই যে এখন যুক্তরাষ্ট্রের এক নম্বর ভূ-রাজনৈতিক লক্ষ্য তা নিয়ে রাখ-ঢাক করছে না বাইডেন প্রশাসন। সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে আমেরিকা এখন থেকে তাদের বাৎসরিক ৭০০ বিলিয়ন ডলারের প্রতিরক্ষা বাজেটের ৬০ শতাংশই খরচ করবে এশিয়া প্রশান্ত-মহাসাগরীয় এলাকায় অর্থাৎ চীনের আশপাশে।

ফলে, ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব নিয়ে চীন-মার্কিন ক্রমবর্ধমান প্রতিদ্বন্দ্বিতার যে বাস্তবতা তাতে মৌলিক কোনো বদলের সম্ভাবনা সহসা নেই বললেই চলে।
সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement

সকল