২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ফেসবুক ও অ্যামাজন কেন লিনা খানকে ভয় করছে?

লিনা খান - ছবি : সংগৃহীত

সাধারণভাবে মার্কিন নাগরিকরা যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ট্রেড কমিশনের (এফটিসি) প্রধানের নাম বলতে পারেন না। বৃহৎ প্রতিষ্ঠানের একচেটিয়া ব্যবসার পথ বন্ধ করে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করার বিষয়ে নজরদারি করার সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটি খুব আলোচনাতেও ছিল না। কিন্তু লিনা খান এই চিত্র বদলে দিয়েছেন।

৩২ বছর বয়সী কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের এই সহযোগী অধ্যাপককে গত জুনে যখন এফটিসির প্রধানের পদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নিয়োগ দেন, তখনই প্রযুক্তি খাতের বৃহৎ দুই প্রতিষ্ঠান ফেসবুক ও অ্যামাজন তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে লিনা খানকে বাদ রাখার জন্য আদালতে আবেদন করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রে ১৯১৪ সালে ফেডারেল ট্রেড কমিশন (এফটিসি) গঠন করা হয়। বাণিজ্যে বৃহৎ প্রতিষ্ঠানগুলোর একচেটিয়া আধিপত্যকে বন্ধ করে অন্য ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানকে সুযোগ দেয়ার জন্য কাজ করে সংস্থাটি।

একই সাথে ‘সুস্থ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বৈচিত্রময় অর্থনৈতিক বৈশিষ্ট্য তৈরি এবং যথার্থ তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে ভোক্তার জন্য সুযোগ সৃষ্টির’ মাধ্যমে মার্কিন ভোক্তাদের সুরক্ষায় সংস্থাটি ভূমিকা রাখছে।

পাঁচ কমিশনারের অধীনে এফটিসি পরিচালিত হয়। ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান, দুই দল থেকে মোট পাঁচ কমিশনার নির্বাচিত হন। একই সময়ে এক দল থেকে সর্বোচ্চ তিনজন কমিশনার নিযুক্ত হতে পারেন। বর্তমানে পাঁচ কমিশনারের মধ্যে তিনজন ডেমোক্রেটিক ও একজন রিপাবলিকান দলীয় সদস্য।

বৃহৎ প্রতিষ্ঠানের একচেটিয়া আধিপত্য ভাঙতে এফটিসি শক্তি প্রয়োগের ক্ষমতা রাখে। এই লক্ষ্যে সংস্থাটি নতুন আইন তৈরি এবং সংশ্লিষ্ট আইন ভঙ্গকারীকে সাজা দিতে পারে।

কমিশনারদের ভোটের মাধ্যমে যে কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয় সংস্থাটি। তবে সংস্থাটির প্রধান এর কর্মসূচিকে ঠিক করতে পারেন।

শিক্ষার্থী থাকাকালেই ২০১৭ সালে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের জার্নালে ‘অ্যামাজনস অ্যান্টিট্রাস্ট প্যারাডক্স’ (অ্যামাজনের একচেটিয়া বিরোধী বৈপরিত্য) শিরোনামে একটি প্রবন্ধ লিখে পরিচিতি লাভ করেন।

এতে তিনি যুক্তি দেন, বর্তমান ডিজিটাল যুগে এসে ‘একচেটিয়া আধিপত্যের’ সংজ্ঞা বদলের প্রয়োজন।

লিনা খান তার প্রবন্ধে লিখেন, আগে পণ্যের দামের ওপর বৃহৎ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রণ ছিল। এখন অ্যামাজনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো বাজারের ওপর এতোটাই প্রভাব বিস্তার করেছে যে, তার প্রতিদ্বন্দ্বীরাও সাফল্যের জন্য অ্যামাজনের ওপর নির্ভর করতে বাধ্য হচ্ছে।

অ্যামাজনের বর্তমান একচেটিয়া আধিপত্যকে বিশ শতকে যুক্তরাষ্ট্রের রেল লাইন প্রতিষ্ঠার সাথে সম্পৃক্ত একক কোম্পানির সাথে তুলনা করেন লিনা খান।

এই একচেটিয়া আধিপত্যের মাধ্যমে অর্থনীতিতে নতুন উদ্ভাবনের পথ বন্ধ হয়ে যায়। অপরদিকে নতুন উদ্ভাবনই অর্থনীতিকে সচল ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ রাখে বলে প্রবন্ধে মন্তব্য করেন লিনা খান।

তবে তার এই প্রবন্ধের বিষয়ে অনেক সমালোচকই বিপরীত মন্তব্য করেন। তারা বলেন, অ্যামাজনের জনপ্রিয়তা ও পণ্যের স্বল্পমূল্যের জন্য একে সমালোচনার লক্ষ্যে পরিণত করা উচিত হবে না। অপরদিকে অ্যামাজন বলছে, বাণিজ্যে তার নতুন ধরনের উদ্যোগ নতুন সুযোগের সৃষ্টি করেছে এবং ব্যবসায় নতুন প্রতিদ্বন্দ্বিতার স্থান তৈরি করেছে।

লিনা খানের প্রবন্ধের সমালোচনা করে রিপাবলিকান দলীয় সিনেট সদস্য ওরিন হ্যাচ বলেছিলেন, যারা এটি সমর্থন করছে তারা ‘মূলধারা বহির্ভূত একচেটিয়া বাণিজ্য বিরোধী’।

একচেটিয়া বাণিজ্যবিরোধী আইন সংশোধন ও সংস্কারের জন্য লিনা খানকেই উপযুক্ত ব্যক্তি মনে করে এফটিসি প্রধানের পদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নিয়োগ দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন সমর্থকরা।

ডেমোক্রেটিক দলীয় সিনেট সদস্য এলিজাবেথ ওয়ারেন মন্তব্য করেন, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি, সমাজ ও গণতন্ত্রকে হুমকির মুখে ফেলা একচেটিয়া বাণিজ্যকে মোকাবিলায় এবং এর বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগের উদ্যোগকে পুনর্জীবিত করতে লিনা খানের নিয়োগ এক বৃহত্তর সুযোগ।

বিরূপ মনোভাবের অভিযোগে অ্যামাজন ও ফেসবুক ইতোমধ্যেই তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে লিনা খানকে বাদ রাখার জন্য আবেদন করেছে।

তবে লিনা খান জানিয়েছেন, এক্ষেত্রে তার সরে যাওয়ার কোনো কারণ নেই। যদি কোনো বিতর্ক হলে তার সমাধানে তিনি এফটিসির নীতি পর্যবেক্ষকদের সাথে আলোচনা করবেন।

সূত্র : আলজাজিরা


আরো সংবাদ



premium cement