২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ফ্লয়েডকে হত্যার ভিডিও ধারণকারী কিশোরী পাচ্ছেন পুলিৎজার

ফ্লয়েডকে হত্যার ভিডিও ধারণকারী কিশোরী পাচ্ছেন পুলিৎজার - ছবি- সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের মিনেয়াপোলিসের রাস্তায় গত বছরের ২৫ মে আফ্রিকান-আমেরিকান নাগরিক জর্জ ফ্লয়েডকে হত্যার ভিডিও ধারণকারী কিশোরী পাচ্ছেন পুলিৎজারের বিশেষ পুরস্কার-২০২১। ওই ভিডিওটি প্রকাশ করেছিল দ্য মিনিয়াপোলিস স্টার ট্রিবিউন। ওই সংবাদমাধ্যমটিও এবার পুলিৎজার পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হয়েছে। এ ছাড়া বার্তা সংস্থা রয়টার্সও পুলিৎজার-২০২১ পুরুস্কার পাচ্ছে। শুক্রবার রাতে পুলিৎজার কর্তৃপক্ষ এ ঘোষণা দেয়।

কিশোরীর ধারণ করা ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, গ্রেফতারের সময় ফ্লয়েডের গলার ওপর নয় মিনিটেরও বেশি সময় ধরে হাঁটু গেড়ে বসে ছিলেন ৪৫ বছর বয়সী শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসার ডেরেক শভিন। এতে তার মৃত্যু হয়। ওই পুরো ঘটনাটি ক্যামেরাবন্দি করেন কিশোরী পথচারী ডারনেলা ফ্রেজিয়ার। তার ওই ভাইরাল হওয়া ভিডিওর কারণে অবশেষে ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনায় সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক শভিনকে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করেছে মার্কিন আদালত। তার এ অসীম সহসীকতা ও 'বিশেষ সাংবাদিকতার' জন্য পুলিৎজার পুরস্কার কমিটি তাকে পুরস্কৃত করেছে।

পুলিৎজার কমিটি বলেছে, ডারনেলা ফ্রেজিয়ার অত্যান্ত সাহসিকতার সাথে ওই দিন ভিডিওটি ধারণ করেছেন বলেই পুলিশের ওই বর্বরতা নিয়ে বিশ্ববাসী সোচ্চার হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তার বিচার হয়।

ফ্রেজিয়ার ওই দিন তার নয় বছরের এক চাচাতো বোনকে নিয়ে 'কাপ ফুডস' নামে এক দোকানে যাচ্ছিলেন। দোকানটা মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের মিনিয়াপোলিস শহরে, তার বাসার বেশ কাছেই। পথে তিনি দেখতে পান পুলিশ কিভাবে ফ্লয়েডের গলা চেপে ধরেছে। তিনি দাঁড়িয়ে যান। তার মোবাইল ফোন বের করেন ও ভিডিও রেকর্ড করেন।

পুরো ১০ মিনিট নয় সেকেন্ড তিনি ভিডিও ধারণ করেন। যতক্ষণ পর্যন্ত পুলিশ অফিসাররা ও ফ্লয়েড সেখানে ছিলেন। পুলিশ অফিসাররা পায়ে হেঁটে স্থান ত্যাগ করে আর ফ্লয়েডকে স্ট্রেচারে করে নিয়ে যাওয়া হয়।

জর্জ ফ্লয়েড (বামে) ও ফ্লয়েডকে পুলিশ কর্মকর্তার চেপে ধরার ভাইরাল ভিডিওর অংশ (ডানে) ছবি : বিবিসি ও এএফপি

যখন কোনো ভিডিও ভাইরাল হয়, ওই ভিডিওর বিষয়বস্তু যখন সংবাদ শিরোনাম হয়, তখন যে ওই ভিডিও তুলেছে তার নাম সংবাদের আড়ালে প্রায়শই ঢাকা পড়ে যায়। যখন তিনি ভিডিও ক্যামেরা চালু করেন তখন ৪৬ বছর বয়স্ক জর্জ ফ্লয়েড দম নিতে না পেরে হাঁপাচ্ছেন, কাতর কণ্ঠে বারবার অনুনয় করছেন, প্লিজ, প্লিজ, প্লিজ।

তার ক্যামেরা তখন ছবি তুলছে ২০ সেকেন্ড ধরে। ফ্লয়েড এরপর আর যে তিনটি শব্দ উচ্চারণ করতে পেরেছিলেন, তা এখন বিশ্বজোড়া এক আন্দোলনের মূলমন্ত্র হয়ে উঠেছে।

পুলিৎজার পেল রয়টার্স ও মিনিয়াপোলিস স্টার ট্রিবিউন
এ দিকে সাংবাদিকতার নোবেলখ্যাত পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও দ্য মিনিয়াপোলিস স্টার ট্রিবিউন। যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের বর্ণবৈষম্য নিয়ে সাংবাদিকতার জন্য এ পুরস্কার দেয়া হয়েছে।

গত ২৫ মে যুক্তরাষ্ট্রের মিনিয়াপোলিস শহরে পুলিশের হেফাজতে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় প্রথম সংবাদ প্রকাশ করায় দ্য মিনিয়াপোলিস স্টার ট্রিবিউনকে ‘ব্রেকিং নিউজ’ ক্যাটাগরিতে পুলিৎজার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। আর ব্যাখ্যামূলক প্রতিবেদনের জন্য রয়টার্স ও দ্য আটলান্টিককে পুরস্কৃত করা হয়েছে।

এ ছাড়াও করোনা মহামারী নিয়ে ক্রমাগত দূরদর্শী রিপোর্টিংয়ের জন্য ‘জনসেবা’ ক্যাটাগরিতে সম্মানিত করা হয়েছে নিউইয়র্ক টাইমসকে।

অন্যদিকে চীনের উইঘুর ইস্যুতে অনুসন্ধানী খবর প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছে বাজফিড।

হাঙ্গেরীয়-মার্কিন সাংবাদিক জোসেফ পুলিৎজার এ পুরস্কারের প্রচলন করেছিলেন। ১৯১৭ সাল থেকে পুলিৎজার পুরস্কার দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে ২২টি ক্যাটাগরিতে এ পুরস্কার দেয়া হচ্ছে।

সূত্র : রয়টার্স ও বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement