২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

সৌদি ও আমিরাতে অস্ত্র বিক্রি স্থগিত করলেন বাইডেন

সৌদি ও আমিরাতে অস্ত্র বিক্রি স্থগিত করলেন বাইডেন - ছবি : সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন স্থগিত করেছে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নেতৃত্বাধীন মার্কিন প্রশাসন। বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিনকেন এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা করেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে প্রথম সংবাদ সম্মেলনে অ্যান্থনি ব্লিনকেন বলেন, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাথে ট্রাম্পের করা চুক্তি পর্যালোচনা করা হবে। বাইডেন প্রশাসনের জন্য এটিই স্বাভাবিক আচরণ বলে এই সময় তিনি মন্তব্য করেন।

সংবাদ সম্মেলনে ব্লিনকেন বলেন, ওই অনুমোদনে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত বিষয়বস্তু ও পররাষ্ট্রনীতির অগ্রগতিতে কোন বিষয়ের বিবেচনা করা হয়েছিল তা নিশ্চিত করার জন্য এই পর্যালোচনা করা হবে।

এর আগে বুধবার প্রথম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাইডেন প্রশাসন দুই দেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রিতে সাময়িক স্থগিতাদেশ দিয়েছে। এর মধ্যে সৌদি আরবের কাছে নির্ভুল নিশানার সমরাস্ত্র ও আমিরাতের কাছে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান অন্তর্ভুক্ত।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেনের অভিষেকের এক সপ্তাহ পরেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হলো। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার আগে বাইডেন রিয়াদের সাথে ওয়াশিংটনের সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই পূর্বসুরী ট্রাম্প প্রশাসনের বিভিন্ন নীতিগত সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা বা প্রত্যাহারে নির্বাহী আদেশ জারি করে চলছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

ইসরাইলকে অব্যাহত সমর্থন এবং ইরানের ওপর চরম চাপ প্রয়োগের কৌশলের অংশ হিসেবে ট্রাম্প সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করেন।

গত ২০১৯ সালের মে মাসে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইরানের সাথে উত্তেজনা বাড়ার অজুহাতে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন। ওই সময় সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও জর্দানের কাছে আট বিলিয়ন ডলার অর্থমূল্যের অস্ত্র বিক্রিতে কংগ্রেসের আপত্তিকে পাশ কাটানোর জন্য তিনি এই জরুরি অবস্থা জারি করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

ট্রাম্প প্রশাসন গত বছরের ডিসেম্বরে সৌদি আরবের কাছে আরো ২৯০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দেয়।

এর আগে নভেম্বরে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন মার্কিন কংগ্রেসকে জানায়, তারা সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে ২৩ বিলিয়ন ডলার মূল্যের উন্নত প্রযুক্তির অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে, যার মধ্যে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ও সশস্ত্র ড্রোন অন্তর্ভুক্ত।

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরাইলের সাথে আমিরাতি সরকারের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চুক্তিতে স্বাক্ষরের পরপরই ওই অনুমোদন দেয়া হয়।

ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এটি আমাদের গভীর সম্পর্কের স্বীকৃতি। ইরানের প্রবল হুমকি থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিরোধ ও প্রতিরক্ষার প্রয়োজনে দেশটির অগ্রসর প্রতিরক্ষা সামর্থ্যের প্রয়োজন।’

মানবাধিকার সংগঠনগুলো অস্ত্র বিক্রির ওই অনুমোদনকে তখন প্রত্যাখ্যান করে বলেছিল, এটি আঞ্চলিক সংঘাতকে বাড়াবে, বিশেষত লিবিয়া ও ইয়েমেনে। আমিরাত ও সৌদি আরব ইয়েমেনে দেশটির হাউছি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে বিধ্বংসী যুদ্ধ চালিয়ে আসছে।

রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেট আইন পরিষদ সদস্যরাও অস্ত্র বিক্রির এই চুক্তির সমালোচনা করে আসছেন। তারা বলছেন, এর ফলে ওই অঞ্চলে ভয়ংকর এক অস্ত্র প্রতিযোগিতার সৃষ্টি করবে।

এই অস্ত্র চুক্তি বাতিলের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দুই দলের আইন পরিষদ সদস্যরা যৌথ প্রস্তাব এনেছিল কিন্তু মার্কিন সিনেটে এই প্রস্তাব সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে ব্যর্থ হয়।

ট্রাম্প ওই সময় এই বিক্রির অনুমোদনের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের যেকোনো বাধায় ভেটো দেয়ার হুমকি দিয়েছিলেন।


সূত্র : আলজাজিরা


আরো সংবাদ



premium cement