২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

যুক্তরাষ্ট্রের বিক্ষোভ উস্কে দিচ্ছে পুলিশ!

যুক্তরাষ্ট্রের বিক্ষোভ উস্কে দিচ্ছে পুলিশ! - ছবি : সংগৃহীত

অ্যাশলে ফেল্পস ও আহমেদ এলতাওলির মধ্যে বন্ধুত্ব হয়েছে শনিবার। ওইদিন রাতে তারা পুলিশের টিয়ার গ্যাস ও পিপার স্প্রে থেকে রক্ষা পেতে একসাথে দৌড়ে পালিয়ে ছিলো।

এলতাওয়ালির হাতে একটি মাইক্রোফোন ছিলো, যা দিয়ে তিনি প্রতিমূহুর্তে লোকজনকে দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন। তিনি বলেন, একদিন আগে আমরা হাজার হাজার বিক্ষোভকারীর সাথে বৈঠক করেছি। কথা ছিলো, আমাদের আন্দোলন হবে শান্তিপূর্ণ, পুলিশকে উস্কানি দিয়ে আমরা কোনো স্লোগান দিব না।

সহিংসতার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের বিক্ষোভ করার কোনো উদ্দেশ্য ছিল না, একারণেই আমরা পুলিশকে লক্ষ্য করে যে কোনো প্রকার উস্কানি বক্তব্য দেয়া থেকে বিরত ছিলাম।’

তবে শনিবার সকাল ৮টায় কারফিউ উঠে যাওয়ার এ ঘন্টার কম সময়ের মধ্যে মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের টহলরত পুলিশ কর্মকর্তারা জমায়েত হওয়া লোকদের ছত্রভঙ্গ করতে গণহারে গ্রেফতার শুরু করে। এক পর্যায়ে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ও পিপার স্প্রে শুরু করে। এতে মহুর্তেই রাস্তা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়।

লোকেরা তখন ভয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে থাকে, অনেকে ভয়ে কাঁদতে শুরু করে। সুযোগ বুঝে পুলিশও তাদের শক্তি প্রদর্শন বাড়াতে থাকে।

শুরুর দিকে বিক্ষোভের নেতৃত্বে ছিলেন ৩২ বছর বয়সী ফেল্পস। তিনি বলেন, ‘আমরা পুলিশের আক্রমণ থেকে বাঁচতে দৌড়াচ্ছিলাম।’

এলতাওলি (৩৩) বলেন, এটি ছিল তার জীবনের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা।

তিনি বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম আমাদের সাংবিধানিক অধিকার আছে। সাদা লোকেরো যদি অস্ত্র সহ শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে পারে তবে অবশ্যই আমি ও আমার সহকর্মীরা মিনিয়াপলিশ এবং মিনেসোটার বাসিন্দারা থানার সমানে একটি প্রার্থনার আয়োজন করতে পারবো, আমাদের কখনই আক্রমণ করা হবে না।’

কিন্তু মিসরীয় এই আমেরিকানের ওইদিন অভিজ্ঞতা হয়ে ছিলো উল্টো।

ওইদিন পুলিশের আক্রমণের পর ফেল্পসের রাত কাটাতে হয়ে ছিলো এলতাওলির বাসায়।

এ সম্পর্কে এলতাওলি বলেন, ‘এটি কেবল মানবতা, অন্যের সাথে অবশ্যই আপনাকে মানুষের মতো আচরণ করতে হবে।’

শনিবার দিনের শুরুতে মাইক্রোফোন হাতে ফেল্পস যখন হাজার হাজার বিক্ষোভকারীর সামনে গিয়ে দাড়িয়ে ছিলো। তখন তার গর্জন দেয়া কণ্ঠটাও কাঁপছিলো। থানার সামনে দাড়িয়ে সে তখন বলে ছিলো, ‘আমরা এখানে জরো হয়েছি আমাদের ক্ষমা করে দেয়ার জন্য, অনুগ্রহ দেখানোর জন্য। আজ রাতে আমরা একে অপরকে আলিঙ্গন করবো।’

এই কথা শোনে বিক্ষোভকারীরা হাত তালি দিয়ে গর্জে উঠে ছিলো।

পুলিশ হেফাজতে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর এক সপ্তাহ আগেও ফেল্পস নিজেকে অ্যাক্টিভিস্ট মনে করেননি। শহরে বিক্ষোভ চলার পঞ্চম দিন ওই শনিবারই প্রথম বিক্ষোভে যোগ দিয়ে ছিলেন তিনি।

কারণ ফেল্পস তখন মনে করে ছিলেন, তার আর ঘরে বসে থাকা সম্ভব নয়।

বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেয়ার সময় তিনি সবার উদ্দেশ্যে বলে ছিলেন, ‘আমাদের প্রত্যেকের সুস্থতা দরকার, সবাই ঠিকভাবে বসুন, নরবেন না, নিজের জায়াগা নিজ দায়িত্বে ঠিক রাখুন।’

ফ্লয়েড ছিলেন কলো বর্ণের মানুষ। গত ২৫ মে জাল নোট ব্যবহার করে দোকানে বিল দেয়ার অপরাধে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ এবং তার মৃত্যু হয়। পরে একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ডেরেক চৌভিন নামের এক পুলিশ কর্মকর্তা হাটু গেরে আট মিনিট ফ্লয়েডের উপর বসে আছেন। ওই সময় ফ্লয়েড তার মাকে ডাকছিলেন এবং বলছিলেন, আমি শ্বাস নিতে পারছি না, মরে যাচ্ছি।

ফ্লয়েড মারা যাওয়ার সময় সেখানে আরো তিনজন পুলিশ কর্মকর্তা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

এই ঘটনায় চৌভিনের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে এবং বাকি তিনজন সহ সবাইকে বর্খাস্ত করা হয়েছে।

অনেক বিক্ষোভকারীর দাবি ছিলো, বাকি তিন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও হত্যার অভিযোগ আনা হোক। কিন্তু ফেল্পস বলছেন, ফ্লয়েডের হত্যার বিষয়টি নিয়ে অনেক দূর পর্যন্ত ভাবতে হবে।

তিনি বলেন, বহু শতাব্দী ধরে খুব পদ্ধতিগতভাবে বর্ণবাদের নিপীড়ন চলে আসছে। আমাদের একসাথে পুরো বিষয়টির পুনর্গঠন করা দরকার।

এই বিষয়ে এলতাওলিও একমত।

তিনি বলেন, জর্জ ফ্লয়েড শহীদ হয়েছেন। তবে কোন পরিস্থিতিতে তিনি শহীদ হয়েছেন সেটাও আমাদের ভাবতে হবে। আমাদের সেইগুলিতে মনোনিবেশ করতে হবে।

ফেল্পস তার নিজের শহরে রাত দিন প্রতিবাদ আর পুলিশের প্রতিক্রিয়া দেখতে কেমন ছিলো, সে অভিজ্ঞতাও শেয়ার করেছেন।

তিনি বলেন, গত সপ্তাহটি ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে ক্লান্তিকর, মর্মান্তিক এবং অবশ্যই আলোকিত একটি সময়। আমি বলতে চাচ্ছি যে, সময়টা এমন যে, সত্যটাও বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। এই লড়াইটা খুবই কঠিন এবং মারাত্মক।

ফেল্পস অর্ধেক কালো, অর্ধেক সাদা। তাই এই সময়টায় তিনি ট্রমার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, আমার তখন ঘরে বসে দেখা ছাড়া কোনো বিকল্প ছিল না।

এলতাওলি বলেন, আমি ফ্লয়েড হত্যার বিচারের বিষয়টি মন থেকে অনুভব করেছি। একারণেই সবার সাথে যোগ দিয়ে ছিলাম।

২২ বছর বয়সী সি’মন স্কট বড় একটা ফুলের তোরা নিয়ে বিক্ষোভে অংশ নিয়ে ছিলেন, যার মাঝখানে ফ্লয়েডের একটা ছবি রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক দূর এগিয়ে এসেছি। আমাদের পিছনে যাওয়ার সুযোগ নেই। আমরা আক্ষরিকভাবে ইতিহাসের মাঝখানে দাড়িয়ে আছি।’

তিনি বলেন, আমি এখন যাই করি ফ্লয়েডের শেষ কথাটা কানে বাজে ‘আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না।’

সূত্র : সিএনবিসি 


আরো সংবাদ



premium cement