২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আউটার রিংরোডে প্রবেশে যানবাহনের টোল লাগবে

১০ হাজার কোটি টাকায় আগামী বছর শুরু হবে নির্মাণকাজ
-

আউটার রিংরোডে প্রবেশ করতে হলে যানবাহনকে টোল প্রদান করতে হবে। দেশে এই প্রথম কোনো সড়কে প্রবেশ করতে এ ধরনের টোল দেয়ার প্রয়োজন পড়বে। যানজট নিরসন ও ঢাকার ওপর দিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যানবাহন যাতায়াত সহজ করার জন্য আউটার রিংরোড নির্মাণ প্রকল্পে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার ২০০ কোটি টাকা। প্রকল্পটি ২০২০ সালে শুরু হয়ে ২০২৩ সালে শেষ করা হবে। প্রকল্পটি জাপানি জি টু জি ভিত্তিক পিপিপি পদ্ধতিতে বাস্তবায়িত হবে।

প্রাথমিক জরিপ অনুযায়ী প্রস্তাবিত আউটার রিংরোডের এলাইনমেন্টের কিছুটা সংশোধন করা হয়েছে। সংশোধিত রুটটি হচ্ছে- হেমায়েতপুর-কালাকান্দি-৩য় শীতলক্ষ্যা সেতু-মদনপুর-ভুলতা (ঢাকা বাইপাস হয়ে)-কড্ডা (গাজীপুর)-বাইপাইল (ঢাকা ইপিজেড)-হেমায়েতপুর। যার দৈর্ঘ্য প্রায় ১৩০ কিলোমিটার। এর মধ্যে প্রায় ৪৬ কিলোমিটার সড়ক নতুন করে নির্মাণ করতে হবে এবং অবশিষ্ট ৮৪ কিলোমিটার বিদ্যমান সড়ক উন্নয়ন করতে হবে।

এই সড়কে প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত ও মহাসড়কে প্রবেশ ও নির্গমনের জন্য সীমিত সংখ্যক গ্রেড-সেপারেটেড ইন্টারচেঞ্জের সংস্থান থাকবে। কেবল এসব নির্ধারিত স্থানে যানবাহনগুলো মহাসড়ক ব্যবহারে সুবিধা লাভ করবে। এখানে যাত্রাকালীন সময়ে জ্বালানি সরবরাহ, যাত্রীদের বিশ্রাম ও পানাহারের জন্য একটি সার্ভিস এরিয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা মহানগরীর ভেতরে প্রবেশ না করেই দেশের পূর্ব থেকে পশ্চিমে এবং উত্তর থেকে দক্ষিণে যাতায়াতকারী যানবাহন চলাচল করতে পারবে এবং ঢাকার যাত্রীদের একটা বড় অংশ আউটার রিংরোড ব্যবহার করে খুব সহজে ও কম সময়ে ভ্রমণ করতে পারবে। ফলে ঢাকা মহানগরীর অভ্যন্তরের যানজট ব্যাপকভাবে কমবে এবং বিদ্যমান ট্র্যাফিক লোড রিংরোডের দিকে মোড় নেবে। যাত্রীরা আউটার রিংরোড দিয়ে ইনার রিংরোড ব্যবহার করে ঢাকা মহানগরীর যেকোনো এলাকা থেকে অন্য এলাকায় নিরাপদে এবং স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণ করতে পারবে।

সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য এরই মধ্যে একটি প্রাথমিক জরিপ সম্পাদন হয়েছে। জরিপে দেখা যায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশের দক্ষিণ-দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর সাথে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোর একটি নিরবচ্ছিন্ন, নিরাপদ ও দ্রুত গতিসম্পন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, বিদ্যমান হেভি ট্রাফিক লোড, ভবিষ্যৎ ট্রাফিক চাহিদা এবং ন্যূনতম ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন বিবেচনায় হেমায়েতপুর থেকে কালাকান্দি হয়ে মদনপুর পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার মহাসড়কের উভয় পার্শ্বে ৫ দশমিক ৫০ মিটার প্রশস্ত সার্ভিস লেন রেখে মধ্যবর্তী অংশে মহাসড়ক বিভাজক ও মহাসড়কের প্রতি পাশে একটি করে মোট দু’টি ইমার্জেন্সি লেনসহ চার লেনে উন্নীত করা হবে।

প্রস্তাবিত আউটার রিংরোডের বেশ কিছু স্থানে ইন্টারসেকশন থাকায় ভেহিকাল ওভারপাস ও ইন্টারচেঞ্জ নির্মাণ হবে। স্থানীয় জনগণের চলাচলের সুবিধার জন্য প্রস্তাবিত প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত মহাসড়কের উভয় পাশে সার্ভিস লেনের পাশাপাশি পর্যাপ্ত সংখ্যক আন্ডারপাস এবং প্রশস্ত ফুটপাথের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া মহাসড়কে বিদ্যমান সেতু ও কালভার্টগুলো চাহিদা অনুসারে প্রশস্ত করা হবে এবং প্রয়োজন অনুসারে প্রয়োজন অনুসারে নতুন অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। পেভমেন্টসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের প্রকৃত পরিমাণ পূর্ণাঙ্গ ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি সম্পন্ন হলে চূড়ান্তভাবে নিরূপণ সম্ভব হবে বলে জরিপে বলা হয়েছে।

জানা গেছে, নির্মাণাধীন পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাথে উত্তর ও পূর্বাংশের সংযোগ স্থাপন করবে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা থকে মুন্সীগঞ্জ ও মাওয়া হয়ে যাত্রাবাড়ী দিয়ে অসংখ্য যানবাহন ঢাকা মহানগরীতে প্রবেশ করবে, ফলে রাজধানীতে যানবাহন নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। এতে সংশোধিত এসটিপিতে প্রস্তাবিত এলাইনমেন্টের মধ্যে আউটার রিংরোডের দক্ষিণ অংশ হেমায়েতপুর-কালান্দি-মদনপুর অংশ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে এ অংশ অতি দ্রুত নির্মাণ করার সুপারিশ করা হয়েছে। এ অবস্থা বিবেচনা করে আউটার রিংরোডের দক্ষিণাংশের প্রায় ৪৮ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে হেমায়েতপুর (ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক) থেকে কালান্দি (ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক) যার দৈর্ঘ্য প্রায় ১৮ কিলোমিটার, কালান্দি থেকে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়ক, যার দৈর্ঘ্য প্রায় ১৮ কিলোমিটার এবং শীতলক্ষ্যা সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়ক থেকে মদনপুর (ঢাকা-চট্র্রগ্রাম মহাসড়ক) যার দৈর্ঘ্য প্রায় ১২ কিলেমিটার।

সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যানবাহনের চালক-শ্রমিকদের বিশ্রামের জন্য দেশের মহাসড়কগুলোতে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধাসহ বিশ্রামাগার নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন। এ প্রকল্পটিতে সে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সম্প্রতি প্রকল্পটি জাপানের সাখে পিপিপির আওতায় বাস্তবায়নের জন্য একটি প্রস্তাব অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, আগামী বছর থেকে এই সড়কে নির্মাণকাজ শুরু করা সম্ভব হবে।


আরো সংবাদ



premium cement