১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সামরিক দায়িত্ব এড়াতে ব্রিটেনে আশ্রয় প্রার্থনা জায়নবাদবিরোধী ইসরাইলির

ইসরাইলের বিরুদ্ধে জায়নবাদবিরোধী ইহুদিদের বিক্ষোভ - ছবি : সংগৃহীত

ইসরাইলি সামরিক বাহিনীতে বাধ্যতামূলক দায়িত্ব পালন এড়াতে ব্রিটেনে আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন জায়নবাদবিরোধী এক ইসরাইলি ইহুদি তরুণ। সোমবার তুরস্কের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সি এই খবর জানায়।

এর আগে গত বছরের ডিসেম্বরে ২১ বছর বয়সী এই তরুণের আশ্রয়ের আবেদন প্রত্যাখ্যান করেন ব্রিটিশ আদালত। বর্তমানে তার আবেদনের আপিল শুনানি আদালতে চলছে।

আদালতের নির্দেশনা অনুসারে প্রতিবেদনে নাম প্রকাশ না করা এই তরুণ জানান, ইসরাইলি সামরিক বাহিনীতে বাধ্যতামূলক দায়িত্ব পালন করতে না চাওয়ার কারণে ২০১৫ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

আনাদোলু এজেন্সির কাছে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, 'আমাকে গ্রেফতার করে পুলিশ কাস্টডিতে নিয়ে যাওয়া হয়। আমাকে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে মেঝেতে ফেলে রাখা হয় এবং পরে হ্যান্ডকাফ ধরে মেঝের ওপর টানা হেঁচড়া করা হয়। আমাকে গালিগালাজ করা হয়, থুথু ছিটানো হয় এবং লাঠি দিয়ে পেটানো হয়। এটি খুবই অবমাননাকর ও বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা ছিলো।'

ব্রিটেনে আশ্রয়ের আবেদন করা ইহুদি তরুণ রাব্বি তথা ইহুদি ধর্ম বিশেষজ্ঞ হওয়ার জন্য অধ্যায়ন করছেন।

আনাদোলু এজেন্সিকে তিনি বলেন, 'জায়নবাদ ইহুদি ধর্মের জন্য অপমান। ইহুদি ধর্মগ্রন্থ অনুসারে, খোদা পবিত্র ভূমিতে গণহারে ইহুদিদের একত্রিত হতে নিষেধ করেছেন আমাদের পাপের শাস্তি হিসেবে। আর এই শাস্তি একমাত্র মেসিয়ার আগমনের মাধ্যমেই রহিত হতে পারে।'

তিনি বলেন, হলোকাস্টের আগেই এটিই বিশ্বজুড়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ ইহুদিদের মতামত ছিলো।

ইহুদি তরুণ বলেন, জায়নবাদ একটি রাজনৈতিক প্রকল্প যেটি ইহুদি জাতি ও ইহুদিদের কষ্টকে পুঁজি করে নিজস্ব অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে।

তিনি বলেন, 'এই প্রক্রিয়ায় এটি আদিবাসী ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীকে জোর করে উচ্ছেদ করে এবং তাদের ভূমি কেড়ে নেয়। জায়নবাদীরা চুরি ও গণহত্যার মাধ্যমে জায়নবাদী রাষ্ট্র তৈরি করতে চাচ্ছে যা শ্রেণীগতভাবে আরবদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক। তারা জঘন্য পন্থায় খোদার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করছে।'

কেন তিনি ইসরাইলি সামরিক বাহিনীতে যোগ দিতে অস্বীকার করছেন জিজ্ঞেস করা হলে ইহুদি তরুণ বলেন, 'আমি যা কিছু সমর্থন করি, এটি সবকিছুর বিরুদ্ধে। আমি জায়নবাদ ও ইসরাইল রাষ্ট্রের বৈধতার বিরোধিতা করি এবং এই কারণে আমি এই রাষ্ট্রকে রক্ষায় অংশ নিতে পারি না। একইসাথে ইসরাইল রাষ্ট্র জাতিগত বিদ্বেষ চর্চা করে এবং ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে নিয়মিত যুদ্ধাপরাধের সাথে যুক্ত। আমি কখনোই এমন অনৈতিক সেনাবাহিনীতে কাজ করতে পারি না যারা এই ধরনের নিপীড়ণের সাথে দৈনন্দিন ভিত্তিতে জড়িত।'

এদিকে ব্রিটেনে আশ্রয়ের আবেদন করা ইসরাইলি তরুণের আইনজীবী ফাহাদ আনসারি জানান, তার মক্কেলকে যদি ইসরাইলে ফেরত পাঠানো হয়, সেখানে তিনি নির্যাতনের শিকার হবেন এবং তার বিরুদ্ধে ১৫ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ হতে পারে।

আনসারি বলেন, ইসরাইলি কারাগারে তাকে পেটানো হয় ও মানসিকভাবে অত্যাচার করা হয়। কারাগার থেকে মুক্তির পর তিনি দেশ ছেড়ে পালান এবং ব্রিটেনে আশ্রয়ের জন্য আসেন।

তিনি বলেন, তার মক্কেল আশঙ্কা করছেন ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর পলাতক সৈন্য হিসেবে তাকে ফেরৎ পাঠানো হতে পারে। ব্রিটিশ আদালত তাকে ফেরৎ পাঠানোর নির্দেশ দিলে ইসরাইলে যাওয়ার পর এই তরুণের ১৫ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।

সূত্র : আনাদোলু এজেন্সি


আরো সংবাদ



premium cement