২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

প্রিন্স ফিলিপের শেষকৃত্য ১৭ এপ্রিল

প্রিন্স ফিলিপ: ডিউক অব এডিনবারার শেষকৃত্য ১৭ এপ্রিল - ফাইল ছবি

ব্রিটেনের রাজপরিবারের আবাস বাকিংহাম প্রাসাদ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে প্রিন্স ফিলিপের শেষকৃত্য উইন্ডসরে ১৭ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে। ডিউকের শেষকৃত্য রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে হবে না। এটি হবে ‘রাজপরিবারের আনুষ্ঠানিক রীতি অনুযায়ী রাজকীয় অন্ত্যেষ্টি’। এ তথ্য জানিয়ে বাকিংহাম প্রাসাদের মুখপাত্র বলেছেন, ‘ডিউকের শেষকৃত্য হবে তার শেষ ইচ্ছা মেনে।’

প্রাসাদ থেকে জানানো হয়েছে, আগামী শনিবার, ১৭ এপ্রিল ব্রিটেনের স্থানীয় সময় বিকেল ৩টায় তার শেষকৃত্য হবে। এ অনুষ্ঠানে তার দীর্ঘ জীবনের নানা দিক প্রতিফলিত হবে। করোনাভাইরাস মহামারীর বিধি মেনে প্রিন্স ফিলিপের শেষকৃত্যানুষ্ঠান সীমিত আকারে করা হবে। রানি এই অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা অনুমোদন করেছেন বলেও জানানো হয়েছে ব্রিটিশ রাজ প্রাসাদ থেকে।

উইন্ডসর ক্যাসেলের নিজস্ব চ্যাপেল সেন্ট জর্জেস চ্যাপেলে ডিউক অব এডিনবারার লাশ রাখা হয়েছে। প্রাসাদ থেকে জানানো হয়েছে, তার কফিন ঢাকা আছে ব্যক্তিগত পরিচিতি বহনকারী কাপড়ে। তার ওপর সাজানো রয়েছে পুষ্পস্তবক। প্রিন্সের লাশ জনসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শায়িত রাখা হবে না।

আগামী শনিবার তার কফিন উইন্ডসর ক্যাসেলের প্রবেশদ্বার থেকে গাড়িতে তোলা হবে। প্রিন্স ফিলিপ নিজেই এই যাত্রার পরিকল্পনার সাথে যুক্ত ছিলেন। প্রাসাদ থেকে বলা হয়েছে, প্রিন্স অব ওয়েলস, প্রিন্স চালর্সসহ রাজপরিবারের সদস্যরা ডিউক অব এডিনবারার কফিনের পেছনে পায়ে হেঁটে চ্যাপেলে যাবেন। তবে রানি যাবেন আলাদাভাবে।

এর আগে গতকাল শনিবার ব্রিটেনে ৪১বার তোপধ্বনি করে ও গির্জায় ঘণ্টা বাজিয়ে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের স্বামী ডিউক অব এডিনবারাকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়েছে। ব্রিটেনের বিভিন্ন স্থানসহ স্পেনের জিব্রলটার ও সমুদ্রে রণতরী থেকে সমন্বিত ও বর্ণাঢ্য তোপধ্বনি করা হয়।

ব্রিটেনের স্থানীয় সময় শনিবার দুপুর ১২টা থেকে লন্ডন, স্কটল্যান্ডের এডিনবারা, ওয়েলসের কার্ডিফ ও আয়ার্ল্যান্ডের বেলফাস্টে প্রতি মিনিটে এক রাউন্ড করে ৪১বার তোপধ্বনি করা হয়। সমুদ্রে রয়াল নেভির জাহাজগুলো থেকেও ডিউকের স্মরণে তোপধ্বনি করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রিন্স ডিউক নেভাল অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে তিনি লর্ড হাই অ্যাডমিরাল পদে আসীন ছিলেন।

এই তোপধ্বনির অনুষ্ঠান টিভি ও অনলাইনে লাইভ সম্প্রচার করা হয়েছে। করোনা মহামারীর কারণে ব্রিটিশদেরকে নিজ নিজ ঘরে থেকে এই অনুষ্ঠান দেখতে অনুরোধ করা হয়েছিল। এ ধরনের সম্মানসূচক তোপধ্বনি এর আগে করা হয়েছিল ১৯০১ সালে রানি ভিক্টোরিয়ার সম্মানে। এর আগে ১৯৬৫ সালে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলের মৃত্যুর পর তার স্মরণে করা হয়।

ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের ৭৩ বছরের জীবনসঙ্গী ডিউক অব এডিনবারা ৯৯ বছর বয়সে শুক্রবার উইন্ডসর প্রাসাদে পরলোক গমন করেন।

ব্রিটিশ রাজ পরিবারের ইতিহাসে কোনো রাজা বা রানির এত দীর্ঘ সময়ের জীবনসঙ্গী আর কেউ ছিলেন না।

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের স্বামী প্রিন্স ফিলিপ ৯৯ বছর বয়সে পরলোক গমনের খবর শুক্রবার ঘোষণা করা হয় বাকিংহাম প্রাসাদের বিবৃতিতে। প্রিন্স ফিলিপ ১৯৪৭ সালে প্রিন্সেস এলিজাবেথকে বিয়ে করেন। এর পাঁচ বছর পর প্রিন্সেস এলিজাবেথ ব্রিটেনের রানি হন।

বাকিংহাম প্রাসাদ থেকে দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়, ‘মহামান্য রানি খুবই দুঃখের সাথে তার প্রিয় স্বামী প্রিন্স ফিলিপ, ডিউক অব এডিনবারার মৃত্যুর খবর ঘোষণা করেছেন। ডিউক, উইন্ডসর কাসেলে শান্তিপূর্ণভাবে মারা যান।’

বাকিংহাম প্রাসাদ থেকে শুক্রবার দুপুর ১২টার কিছু পরই দেয়া এই বিবৃতিতে জানানো হয় ‘রানি গভীরভাবে শোকাহত’।

বাকিংহাম রাজপ্রাসাদের পতাকা শুক্রবার থেকেই অর্ধনমিত রাখা হয়েছে। ডিউকের শেষকৃত্য হওয়ার পর দিন (১৮ এপ্রিল) সকাল ৮টা পর্যন্ত সব সরকারি ভবনগুলোতে পতাকা অর্ধনমিত রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী আট দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালনের সুপারিশ করেছেন, যা রানি অনুমোদন করেছেন বলে বাকিংহাম প্রাসাদ থেকে জানানো হয়েছে। আট দিনের রাষ্ট্রীয় শোক চলবে ১৭ এপ্রিল ডিউক অব এডিনবারার শেষকৃত্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত।

ওয়েস্টমিনস্টার গির্জায় বিশাল ঘণ্টায় প্রতি ৬০ সেকেন্ড পর পর ৯৯ বার ঘণ্টাধ্বনি করা হয়েছে শুক্রবার, ডিউকের জীবনের প্রতিটি বছরের স্মরণে। বহু মানুষ বাকিংহাম প্রাসাদের ফটকে ও উইন্ডসর প্রাসাদের বাইরে ফুল রেখে প্রিন্স ফিলিপের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন। তবে সরকার মহামারীর কারণে মানুষজনকে কোথাও জড়ো হতে বা পুষ্পস্তবক না দিতে অনুরোধ করেছিল।

রাজপরিবারের পক্ষ থেকেও জনসাধারণকে অনুরোধ জানানো হয়েছে, ফুল দেয়ার বদলে ডিউকের স্মরণে দাতব্য প্রতিষ্ঠানে অর্থ দান করার জন্য।

প্রিন্স ফিলিপ শারীরিক অসুস্থতার কারণে লন্ডনের কিং অ্যাডওয়ার্ড হাসাপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি। পরে লন্ডনে হৃদরোগের জন্য বিশেষায়িত সেন্ট বার্থলোমিউ হাসপাতালে তার হৃদযন্ত্রের সমস্যার কারণে সফল অস্ত্রোপচারও হয়েছিল। এক মাস চিকিৎসার পর ১৬ মার্চ তিনি উইন্ডসর কাসেলে ফিরে যান। শেষ পর্যন্ত উইন্ডসর ক্যাসেলেই তিনি শুক্রবার সকালে পরলোক গমন করেন।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement