২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ব্রিটেনে করোনায় বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ও ব্যারিস্টারসহ আরো ১০ বাংলাদেশীর ইন্তেকাল

ব্রিটেনে করোনায় বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ও ব্যারিস্টারসহ আরো ১০ বাংলাদেশীর ইন্তেকাল - সংগৃহীত

কোভিড -১৯ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ব্রিটেনে বাংলাদেশীদের মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলছে। সাধারণ মানুষ ছাড়াও মৃত্যুর মিছিলে রয়েছেন একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ,একজন ব্যারিস্টার এবং কয়েকজন কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব। এছাড়া সেখানে রয়েছেন ১০ দিনের ব্যবধানে মারা যাওয়া আপন দুই সহোদর। ৯ এপ্রিল বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত গত তিন দিনে বিভিন্ন স্যোশাল মিডিয়ায় আরো ১০ ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন স্বজনরা। সরকারি হিসেবে আলাদাভাবে বাংলাদেশীদের মৃত্যুর খবর প্রকাশ করা হচ্ছে না। তবে স্যোশাল মিডিয়ার পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে ব্রিটেনে এ পর্যন্ত প্রায় ৪০ জন বাংলাদেশী মৃত্যুবরণ করেছেন।

ডা. আব্দুল মাবুদ চৌধুরী ওরফে ফয়সাল
ব্রিটেনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত পূর্ব লন্ডনেই বাস করতেন লন্ডনের রমর্ফোডের কুইন এলিজাবেথ হাসপাতালের ইউরোলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডাঃ আব্দুল মাবুদ চৌধুরী ওরফে ফয়সাল। সবার কাছে তিনি ফয়সাল ভাই নামেই অধিক পরিচিত ছিলেন। সদা হাস্যোজ্জ্বল ফয়সাল ভাই অবসর সময়ে আড্ডা দিতেন বাঙালী পাড়ায়। স্ত্রী আর দুই সন্তান নিয়ে থাকেন চিগওয়েল এলাকায়। তার স্ত্রী ডাঃ রাণীও ডাক্তার হিসেবে কাজ করেন নিউহ্যাম হাসপাতালে। ইউরোলজি বিভাগের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হয়েও সম্প্রতি সরকারের ডাকে সাড়া দিয়ে করোনা রোগীদের সেবা দিচ্ছিলেন ডাঃ ফয়সাল। আর সেখানেই গত সপ্তাহে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে তাকে আইসিইউতে নেয়া হয় মঙ্গলবার। নিরাঙ্করি, পরোপকারী, অমায়িক ডাঃ ফয়সাল বুধবার রাতে ইন্তেকাল করেন। তার বয়স হয়েছিল ৫৩ বছর।

বাংলাদেশে তার আদি বাড়ি হবিগজ্ঞের নবীগজ্ঞ থানার কামারগাঁও। সিলেট ক্যাডেট কলেজে পড়াশুনা শেষ করে তিনি এমবিবিএস করেন চট্রগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ থেকে। বাবার মৃত্যুতে তার ১১ বছরের কন্যা ওরিশা ও ১৮ বছরের পুত্র ইনতিসারের কান্না আর স্ত্রীর বুকফাটা আতর্নাদে হাসপাতালে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের তৈরী হয়।

ব্যারিস্টার মনির জামান শেখ
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মৃত্যুবরণ করেছেন পূর্ব লন্ডনের আইনজীবি ব্যারিস্টার মনির জামান শেখ। তিনি মঙ্গলবার রাত ১০টায় লন্ডনের নিউহাম হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন বলে বিভিন্ন স্যোশাল মিডিয়ায় তার স্বজনরা জানিয়েছেন। লন্ডনের পি জি এ সলিসির্টস এর প্রিন্সিপ্যাল হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন সমাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি গ্রেজয়েট ক্লাব ইউকে‘র সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন। ৬২ বছর বয়সী ব্যারিস্টার মনির জামান শেখের গ্রামের বাড়ি বাগেরহাট জেলা রামপাল থানার কুমলাইগ্রামে। তার এক মেয়ে স্বামীসহ ব্রিটেনেই বসবাস করেন।

মাওলানা আব্দুল মুকিত
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সোমবার ইন্তেকাল করেন প্রবীণ কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব মাওলানা আব্দুল মুকিত (৬৭ )। তিনি পূর্ব লন্ডনের স্টেপনি গ্রিনের বাসিন্দা ছিলেন। জানা গেছে, মাত্র ৩ সপ্তাহ আগে তিনি বাংলাদেশ সফর শেষে ব্রিটেন ফিরেন। তার গ্রামের বাড়ি বিয়ানীবাজার উপজেলার তিলপাড়া ইউনিয়নের দাসউড়া গ্রামে। তিনি ব্রিটেনে কাউন্সিল অব মস্কসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন। একই গ্রামের বাসিন্দা ফরহাদ হোসেন টিপু ফেইসবুক বার্তায় তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন। তার স্ত্রী, চার ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে।

আলহাজ্ব বদরুল হক
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেছেন প্রবীণ কমিউনিটি নেতা আলহাজ্ব বদরুল হক। ৬৫ বছর বয়সী আলহাজ্ব বদরুল হক ইষ্ট-লন্ডনের কমার্শিয়াল রোডের বাসিন্দা। তিনি দীর্ঘদিন থেকে হৃদরোগ ও ফুসফুসের ক্যান্সারে ভুগছিলেন। জীবনের শেষ মুহূর্তে কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে তিনি ৭ এপ্রিল মঙ্গলবার রাতে লন্ডনের একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। তার মা, স্ত্রী ও ৪ ছেলে রয়েছে। তার দেশের বাড়ী গোলাপগঞ্জ উপজেলার বহর গ্রামে। মরহুম আলহাজ্ব বদরুল হক বহরগ্রাম জনমঙ্গল সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সদস্যসহ গোলাপগঞ্জের একাধিক সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন।

দুই সহোদরের ইন্তেকাল
পূর্ব লন্ডনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১০ দিনের ব্যবধানে ইন্তেকাল করেছেন আপন দুই সহোদর। তারা শেডওয়েলহিথ এলাকায় বসবাস করতেন বলে জানা গেছে। গত ২৬ মার্চ ইন্তেকাল করেন বড় ভাই দেলোয়ার ওয়াহিদ ( ৩৭)। আর ৫ এপ্রিল ইন্তেকাল করেন ছোট ভাই এনামুল ওয়াহিদ (৩২)।

তাদের গ্রামের বাড়ি নবীগঞ্জ উপজিলার ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের দক্ষিণগ্রাম। তাদের পিতার নাম আব্দুল ওয়াহিদ। তারা ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার আব্দুর রউফের ভাতিজা। তাদের নিকট আত্মীয় নাসির আহমদ শ্যামল জানিয়েছেন, মৃত দেলোয়ার ওয়াহিদের স্ত্রী ও দুই ছেলে রয়েছে। অপর দিকে এনামুল ওয়াহিদের স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।

মফিজুল ইসলাম বকুল
ব্রিটেনের স্কটল্যান্ডে বসবাসকারী মফিজুল ইসলাম বকুল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ৪ এপ্রিল ইন্তেকাল করেন। স্যোশাল মিডিয়া সূত্রে জানা গেছে, তিনি ব্রাক্ষণবাড়ীয়া জেলার নবীনগর থানার বগডহর গ্রামের ইদ্রিছ বেপারীর ছেলে। তার স্ত্রী ও দুই সন্তান রয়েছে। মফিজুল ইসলাম বকুল ইতালির ভিসেন্সার মালো শহরে বাস করতেন।

জামিল আহমদ আজাদ
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মঙ্গলবার ভোররাতে ইন্তেকাল করেন পূর্ব লন্ডনের স্টেপনীগ্রীনের বাসিন্দা জামিল আহমদ আজাদ। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। তার স্ত্রী, ৩ ছেলে ৪ মেয়ে রয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন যাবত কিডনির জটিলতাসহ নানা রোগে ভুগছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার বুধবারী বাজার ইউনিয়নের বানীগ্রামে।

হাজী খলিলুর রহমান
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সোমবার বিকালে ইন্তেকাল করেছেন লিভারপুলের বাসিন্দা ৬০ বছর বয়সী হাজী খলিলুর রহমান। তার গ্রামের বাড়ি সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার খুছকিপুর গ্রামে। তিনি দীর্ঘদিন যাবত কিডনির জটিলতাসহ নানা রোগে ভুগছিলেন। তার স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।

দুই সহোদরের ইন্তেকাল
পূর্ব লন্ডনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১০ দিনের ব্যবধানে ইন্তেকাল করেছেন আপন দুই সহোদর। তারা শেডওয়েলহিথ এলাকায় বসবাস করতেন বলে জানা গেছে। গত ২৬ মার্চ ইন্তেকাল করেন বড় ভাই দেলোয়ার ওয়াহিদ ( ৩৭)। আর ৫ এপ্রিল ইন্তেকাল করেন ছোট ভাই এনামুল ওয়াহিদ (৩২)। তাদের দেশের বাড়ী নবীগঞ্জ উপজেলার ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের দক্ষিনগ্রাম। তাদের পিতার নাম আব্দুল ওয়াহিদ। তারা ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার আব্দুর রউফের ভাতিজা। তাদের নিকট আত্মীয় নাসির আহমদ শ্যামল জানিয়েছেন, মৃত দেলোয়ার ওয়াহিদের স্ত্রী ও দুই ছেলে রয়েছে। অপর দিকে মৃত এনামুল ওয়াহিদের স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছেন।

বদরুল ইসলাম টুনু মিয়া
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেছেন পূর্ব লন্ডনের ক্যানিংটাউনের বাসিন্দা প্রবীণ কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব বদরুল ইসলাম টুনু মিয়া ( ৬৫)। তার গ্রামের বাড়ি সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার দেওকলস ইউনিয়নের কোনারাই গ্রামে। তিনি গত ৫ এপ্রিল রোববার লন্ডনের একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। তিনি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত থেকে কমিউনিটির উন্নয়নে কাজ করে গেছেন।


আরো সংবাদ



premium cement