২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

তুরস্কের নির্বাচন থেকে যে বার্তা পাওয়া গেল

এরদোগানের জয়ের পর আঙ্কারার রাস্তা তুরস্কের পতাকায় ছেয়ে যায় - ছবি : বিবিসি

বিজয় অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর রজব তাইয়্যেব এরদোগান রোববার (২৮ মে) রাতে নিজের প্রাসাদের বাইরে জড়ো হওয়া সমর্থকদের হর্ষধ্বনির জবাবে কিছুটা বেসুরো গলায় গান গাইলেও নির্বাচনের হিসাব-নিকাশে তিনি ছিলেন প্রায় নিখুঁত।

মতামত জরিপ বোদ্ধা অথবা নির্বাচন বিশ্লেষকদের তুলনায় তিনি ভোটারদের মনোভাব খুব ভালো বুঝতে পেরেছিলেন।

নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলেছিলেন যে এরদোগান বিরোধীদের কাছে হেরে যাবেন- অন্তত এবার আর সেটি হচ্ছে না।

নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কামাল কিলিচদারোগ্লুর সাথে তার পাওয়া ভোটের ব্যবধান মাত্র ৪ শতাংশ। সন্দেহ নেই যে প্রেসিডেন্ট এরদোগান তৃতীয় মেয়াদে শাসন শুরু করলে হয়তো তার প্রতিফলন দেখা যাবে।

ন্যাটোভুক্ত ও কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ দেশ তুরস্কের নাগরিকরা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে বেছে নিয়েছেন। বেশিরভাগ ভোটার আরো এক মেয়াদে ‘স্বৈরশাসনের’ অধীনে থাকতে রাজি, কিন্তু তারা কিলিচদারোগ্লুর মতো অপরীক্ষিত গণতান্ত্রিক শাসনে থাকতে রাজি নয়।

বিরোধী নেতা নির্বাচনী প্রচারণায় নিজেকে ‘মিস্টার নাইস গাই’ বা ‘ভালোমানুষ’ হিসেবে তুলে ধরেছেন, যিনি তুরস্কের জন্য নতুন বসন্তের অঙ্গীকার করেছিলেন।

পরের দিকে তিনি কিছুটা ডানপন্থার দিকে ঝুঁকে পড়েছিলেন, শরণার্থীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর অঙ্গীকার করেছিলেন।

এতে তিনি জাতীয়তাবাদী ভোটারদের কাছ থেকে হয়তো কিছু বাড়তি ভোট পেয়েছেন ঠিকই, কিন্তু নির্বাচনে জেতার জন্য তা যথেষ্ট ছিল না।

তুরস্কের ইসলামপন্থী নেতা এরদোগানের সাথে তার সমর্থকদের সম্পর্কের বয়স অন্তত ২০ বছরের পুরনো।

অনেকেই তার মতো ধর্মীয় রক্ষণশীল। তারা এরদোগানের ভালো-খারাপ সব সময়ই সমর্থন দিয়ে গেছেন এবং অতিরিক্ত মুদ্রাস্ফীতির মধ্যেও তাকে আরো পাঁচ বছর শাসন ক্ষমতায় থাকতে সহায়তা করেছেন।

দ্বিতীয় দফা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরপর রাজধানী আঙ্কারার রাস্তা উৎসবের শহর হয়ে ওঠে। মুহূর্তেই শহরটি যেন তুর্কী পতাকার ক্যালাইডোস্কোপে পরিণত হয়, গাড়ির হর্ন বাজিয়ে সড়কে উল্লাস করেন এরদোগানের সমর্থকরা।

অনেক সমর্থক এরদোগানের এক হাজার কক্ষের প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেসের বাইরে গিয়ে জড়ো হয়। বিরোধী নেতা এই রাজপ্রাসাদকে জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

৫০ বছর বয়সী হাতিস দুরান, স্কার্ফের নিচ থেকে যিনি হাসছিলেন, বলেন, ‘আমরা ধন্য হয়েছি যে আমাদের প্রেসিডেন্ট আবার আমাদের নেতৃত্ব দেবেন। এর চেয়ে বড় আর কোনো আনন্দ হয় না। তিনি হচ্ছেন সেই নেতা, যিনি পুরো বিশ্বকে অবজ্ঞা করেছিলেন এবং পুরো বিশ্বকে শিক্ষা দিয়েছেন।’

এখানেই তার আকর্ষণের একটি মূল জায়গা - এরদোগান একজন শক্তিশালী নেতা, আগামী দিনের সুলতান, যিনি কারো কাছে মাথা নত করেন না।

নির্বাচন থেকে পাওয়া বার্তা হচ্ছে, মানুষ আসলে ‘ভালো মানুষের’ তুলনায় কঠোর একজন মানুষকে বেশি পছন্দ করে।

এখন তিনি নতুন করে উজ্জীবিত। দেশটির বিরোধীদল বাজেভাবে পর্যুদস্ত এবং ক্রেমলিন এই জয় উদযাপন করছে।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এ ধরনের ফলই চেয়েছিলেন এবং আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই যে তিনিই প্রথম নেতা যিনি তুরস্কের নেতাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

পরিস্থিতি তার পক্ষে রাখার জন্য পুতিন সম্ভাব্য সব কিছুই করেছেন, যার মধ্যে আছে রাশিয়ার প্রাকৃতিক গ্যাস কেনার ৬০০ মিলিয়ন ডলারের বিল পরিশোধের মেয়াদ বাড়িয়ে দেয়া।

নির্বাচনে এরদোগান অনেক বাড়তি সুবিধা পেয়েছেন - নগর এলাকায় নির্বাচনের অভিজ্ঞতা, জনগণের সান্নিধ্য এবং দেশের ৯০ শতাংশ সংবাদমাধ্যমের উপর নিয়ন্ত্রণ।

সমর্থকদের উদ্দেশে দেয়া ভাষণে তিনি বলেন, ‘শুধুমাত্র তুরস্ক জয়ী হয়েছে’।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement

সকল