২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভূমিকম্পে তুরস্ক এবং সিরিয়ায় ব্যাপক বিপর্যয়, মৃতের সংখ্যা প্রায় ২০০০

ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে জীবিতদের উদ্ধারে চলছে মরীয়া লড়াই। - ছবি : বিবিসি

তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চল এবং উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার বহু অংশে প্রবল ভূমিকম্পের পর পুরো এলাকা জুড়ে বিশাল উদ্ধার অভিযান চলছে।

ভোর রাতে এই ভূমিকম্পে শুধু তুরস্কেই নিহত হয়েছেন ১২০০ বেশি মানুষ। হাজার হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।

সিরিয়ায় এ পর্যন্ত ৭৮৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে বার্তা সংস্থা এএফপির এক খবরে বলা হচ্ছে।

তবে সিরিয়ার কর্তৃপক্ষ এ পর্যন্ত ৩৭০ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। এর ফলে এই দু‘দেশ মিলিয়ে দেশে মৃতের সংখ্যা বেড়ে প্রায় দুই হাজার হয়েছে। তবে গ্রাম ও শহরগুলোয় উদ্ধারকর্মীদের ধ্বংসস্তূপ অনুসন্ধানের সাথে সাথে এই সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। হাজার হাজার মানুষ এই ভূমিকম্পে আহত হয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে।

সিরিয়ায় নিহতদের মধ্যে অনেকেই যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত এলাকায়। এই অঞ্চলটির সীমান্তের উভয় পাশে শিবিরগুলিতে লক্ষাধিক সিরীয় শরণার্থীর আবাসস্থল।

প্রাথমিকভাবে ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্পের পর বেশ কটি ‘আফটারশক’ হয়। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল তুরস্কের গাজিয়ানটেপ প্রদেশে।

সংবাদদাতারা জানাচ্ছেন, সোমবার ভোররাতে গাজিয়ানটেপের কাছে ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। তখন সব মানুষ ঘুমে ছিল।

স্থানীয় সময় আনুমানিক বেলা দেড়টায় সেখানে ৭.৫-মাত্রার নতুন এক কম্পন আঘাত হানে।

তবে কর্মকর্তারা বলেছিলেন, সেটা ‘আফটারশক নয়।’

ভূমিকম্পে দুটি দেশেই শত শত ভবন ধসে পড়ার পর ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া মানুষকে বাঁচাতে উদ্ধারকর্মীরা প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।

তুরস্ক সাহায্যের জন্য আন্তর্জাতিক আবেদন জানানোর পর বিশ্ব নেতারা সাহায্য পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

ভূমিকম্পটি এতটাই শক্তিশালী ছিল যে তুরস্ক ও সিরিয়া ছাড়াও লেবানন, সাইপ্রাস এবং ইসরায়েল জুড়ে লাখ লাখ মানুষ এর কম্পন অনুভব করেন। এরপর তুরস্কের একই অঞ্চলে আরেকটি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে, যার কেন্দ্রস্থল ছিল কাহরামানমারাস শহরের কাছে।

দুর্গত এলাকা থেকে যেসব মর্মান্তিক ছবি পাওয়া যাচ্ছে তাতে বাসাবাড়ি ও সড়কে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ এবং ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া লোকদের সন্ধানকারী উদ্ধারকারী দলগুলিকে মরীয়া হয়ে কাজ করতে দেখা যাচ্ছে।

তুরস্কের ১০টি শহর ও প্রদেশের স্কুল এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি হাতায়, মারাশ এবং আন্তেপের বিমানবন্দরগুলি বন্ধ বা আংশিকভাবে বন্ধ করা হয়েছে।

সিরিয়ায় কি হচ্ছে?
ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল প্রতিবেশী তুরস্কে হলেও সিরিয়াতেও অনেক মানুষ মারা গেছে। এই দুর্যোগের ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের ভিডিও এবং ছবি উঠে আসছে।

আলেপ্পোর উত্তর-পশ্চিমে এক শহর থেকে পাওয়া এক ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে যে ভবনগুলি ধসে পড়ার সাথে সাথে ধুলোর বিশাল মেঘের মধ্য দিয়ে বাসিন্দারা পালিয়ে যাচ্ছে এবং চিৎকার করছে।

ভূমিকম্পে খুবই ক্ষতিগ্রস্ত কিছু এলাকা সরকারি নিয়ন্ত্রণে নেই। তাই সেখানে চিকিৎসা সেবা এবং জরুরি সরবরাহের সুযোগ সীমিত।

সিরিয়ার বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকায় কাজ করা একটি ত্রাণ সংস্থা হোয়াইট হেলমেট জরুরি সাহায্যের আহ্বান জানিয়েছে।

এই জায়গায় কেন ভূমিকম্প?
তুরস্ক পৃথিবীর অন্যতম সক্রিয় ভূমিকম্প প্রবণ অঞ্চলগুলোর একটিতে অবস্থিত। এর আগে ১৯৯৯ সালে দেশটির উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে একটি শক্তিশালী ভূমিকম্পে ১৭ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল।

সর্বশেষ ভূমিকম্পটি ঘটেছে তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তের কাছে দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে উত্তর-পশ্চিমমুখী ‘পূর্ব আনাতোলিয়ান ফল্ট’-এর চারপাশে।

সিসমোলজিস্টরা দীর্ঘকাল ধরে বলে আসছেন যে এই ফল্টটি অত্যন্ত বিপজ্জনক, যদিও গত ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সেখানে কোনো উল্লেখযোগ্য কার্যকলাপ হয়নি। তবে অতীতে এই এলাকায় কিছু মারাত্মক ভূমিকম্প হয়েছে। বিশেষ করে, ১৮৮২ সালের ১৩ আগস্ট সেখানে ৭.৪ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয়েছিল। যা আজকের রেকর্ড করা ৭.৮-মাত্রার চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে কম। তা সত্ত্বেও, ১৯ শতকের সেই ভূমিকম্পে অনেক শহরের প্রচুর ক্ষতি হয়। আলেপ্পো শহরে ৭,০০০ মানুষ মারা যায়। শক্তিশালী ওই ভূমিকম্পের আফটারশক চলতে থাকে প্রায় এক বছর ধরে।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement