১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

গ্রিস-তুরস্কের সংঘাত এড়াতে আলোচনার প্রস্তুতি

- ছবি : সংগৃহীত

গ্রিসের সঙ্গে সংঘাতের জের ধরে তুরস্কের উপর ইইউ নিষেধাজ্ঞা চাপানোর উদ্যোগের মাঝেই দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সংলাপের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। স্থানকাল স্থির না হলেও আপাতত উত্তেজনা কমছে।

সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য হওয়া সত্ত্বেও তুরস্ক ও গ্রিসের মধ্যে সংঘাত বিপজ্জনক পথে অগ্রসর হচ্ছিল। ভূমধ্যসাগরের পূর্বাংশে জ্বালানি সম্পদের উপর দাবিকে কেন্দ্র করে বর্তমান বিরোধ দানা বাঁধছে। প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলনের অধিকারের দাবির প্রেক্ষাপটে সমুদ্রসীমা নিয়েও বিরোধ প্রকট হয়ে উঠেছে। গত আগস্ট মাসে তুরস্ক বিতর্কিত এলাকায় ভূমিকম্প গবেষণার জন্য সজ্জিত এক জাহাজ পাঠানোর পর থেকে এই উত্তেজনা চলছে। সেই জাহাজের সঙ্গে এক তুর্কি রণতরিও ছিল। দুই পক্ষই সামরিক মহড়ার আয়োজন করেছে এবং একে অপরকে কড়া কথা শুনিয়েছে।

অবশেষে দুই পক্ষ সরাসরি আলোচনার সদিচ্ছা দেখাচ্ছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্টের দফতর ও গ্রিক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভূমধ্যসাগরের পূর্বাংশে উত্তেজনা কমাতে দুই পক্ষ প্রাথমিক সংলাপ শুরু করতে চলেছে। তুরস্ক আলোচনার দিনক্ষণ নিয়ে কোনো মন্তব্য না করলেও গ্রিক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যে তুরস্কের ইস্তানবুলে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। তবে সেই বিবৃতিতে নির্দিষ্ট কোনো তারিখ উল্লেখ করা হয়নি। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালেও সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ মেটাতে দুই পক্ষ আলোচনায় বসেছিল।

এছাড়াও গতকাল মঙ্গলবার ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো ও তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগান টেলিফোনে আলোচনা করেন। এসময় দুই প্রেসিডেন্ট পূর্ব ভূমধ্যসাগরে উত্তেজনা নিরসনে একত্রে কাজ করতে সম্মত হয়। এছাড়াও দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্যিক চুক্তি নিয়েও আলোচনা করেন। ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমন সময় টেলিফোনে এরদোগানের সাথে আলোচনা করলেন যখন তুরস্ক, জার্মানি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় ভিডিও কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের বর্তমান সভাপতি দেশ জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল, ইইউ সরকার পরিষদের প্রধান শার্ল মিশেল এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগানের মধ্যে ভিডিও কনফারেন্সের পর এই সমাধানসূত্র উঠে এসেছে। এরদোগান মধ্যস্থতার উদ্যোগের জন্য ম্যার্কেলকে ধন্যবাদ জানান।

তার মতে, গ্রিসের পরবর্তী পদক্ষেপের উপর আলোচনার অগ্রগতি নির্ভর করবে। দুই পক্ষকেই উপযুক্ত পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনার আবহ ‘সুরক্ষিত’ রাখতে হবে, বলেন এরদোগান।

উল্লেখ্য, চলতি সপ্তাহের শেষে পরিকল্পিত ইইউ শীর্ষ সম্মেলনেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনার কথা ছিল। এমনকি তুরস্কের উপর ইইউ নিষেধাজ্ঞা চাপাতে পারে বলে শোনা যাচ্ছিল। গ্রিস ও ফ্রান্স এমন দাবি জানাচ্ছে। কিন্তু শার্ল মিশেল কোয়ারেন্টাইনে যেতে বাধ্য হওয়ায় সেই সম্মেলন ১ ও ২ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান মঙ্গলবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ভাষণ দিতে গিয়ে এক সার্বিক সমাধানসূত্রের প্রস্তাব দেন। অঞ্চলের উপকূলবর্তী সব দেশকে নিয়ে এক সম্মেলন আয়োজন করে জ্বালানি সম্পদের বিষয়টির নিষ্পত্তি চাইছেন তিনি। এমনকি সাইপ্রাস দ্বীপের তুর্কি নিয়ন্ত্রিত এলাকার সরকারকেও এই কাঠামোয় শামিল করতে চান তুরস্কের প্রেসিডেন্ট। কোনো শক্তির সঙ্গে সংঘাতের পথে না গিয়ে আন্তর্জাতিক আইন ও সমানাধিকারের ভিত্তিতে তিনি বিরোধ মেটানোর পক্ষে সওয়াল করেন। এরদোগান অবশ্য অন্য একটি ভাষণে তুরস্কের অধিকার কায়েম করতে প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেননি।

তুরস্কের অভিযোগ, ভূমধ্যসাগরের পূ্র্বাঞ্চলে দীর্ঘতম উপকূল থাকা সত্ত্বেও সে দেশের সমুদ্রসীমার আনুপাতিক এলাকা অত্যন্ত কম। অন্যদিকে ছড়িয়ে থাকা দ্বীপগুলির কারণে গ্রিসের ভাগের সামুদ্রিক এলাকা অনেক বেশি। তুরস্কের উপকূল থেকেও কয়েকটি দ্বীপ দেখা যায়। ডয়চে ভেলে ও ইয়েনি শাফাক


আরো সংবাদ



premium cement