২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

মফিজ ভাইয়ের ট্রেনযাত্রা

-


মফিজ ভাই আর আমি একই অফিসে চাকরি করি। সেই সুবাদে গলায় গলায় ভাব! একই রুমে থাকি ব্যাচেলর লাইফ। অফিস টাইম শেষে ছুটির পরে প্রতিদিন বিকেল করে আমাদের বাসার পাশে রেললাইনে ঘুরতে যাই। এই ঘুরতে যাওয়াকে নেশা বলা চলে! কারণ আমি আর মফিজ ভাই এই রেললাইনে না গেলে, পেটের ভাত হজম হয় না। মাঝে মাঝে ঘুরতে ঘুরতে একটু দূরে মৌচাক রেলওয়ে স্টেশনেও যাই।
কয়েক দিন আগে মফিজ ভাই বাড়ি গেছে কী যেন এক কাজে! আজ ছুটি শেষ হয়েছে। আমাকে ফোন করে বলল, ট্রেনে করে এবার গাজীপুরে ফিরবে। এমনকি ট্রেনে চড়ে রওনাও করেছে। আমাকে বলল রাকিব আমি তো জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশনে নামব। এই কথা শুনে আমি বললাম এত দূরে যাবে কেন? তুমি কি বোকা! এবার মফিজ ভাই বলল, তাহলে কোথায় নামতে বলো তুমি?
ট্রেন কি বাসের মতো নাকি! আমার ইচ্ছে স্বাধীন মতো দাঁড় করাবে আর নেমে পড়ব। আমি বললাম, আমি কি তোমাকে এই কথা বলেছি?
আমরা যে রোজ বিকেলে ঘুরতে যাই রেললাইনে, রতনপুরের ওই দিকে। তুমি তো ওই স্টেশনে নামতে পারো। কারণ ট্রেন ওই স্টেশনে দাঁড়ায়। আমার কথা শুনে মফিজ ভাই বলল, তুমি ঠিক বলেছ। বাড়ির পাশে স্টেশন রেখে মিছে কষ্ট করব কেন।
এ কথা বলে ফোনের লাইন কেটে দিলো কিছু বলার সুযোগ দিলো না। মফিজ ভাইয়ের বাড়ি অনেক দূরে। আসতে আসতে রাত ১০টা বাজার কথা। তবে সে দিন সারা রাতেও মফিজ ভাইয়ের কোনো খোঁজ নেই। ফোনও বন্ধ! মফিজ ভাইয়ের চিন্তায় সারা রাত ঘুমাতে পারলাম না। পরের দিন সকালবেলা, কান্না করতে করতে রুমে এসে মফিজ ভাই আমাকে জড়িয়ে ধরল। আমি বললাম কী এমন হয়েছে এত কান্না করছ কেন? আর সারা রাত তুমি কোথায় কাটালে?
এবার মফিজ ভাই আমাকে বলল শোন তাহলে।
ট্রেন যখন মৌচাক রেলওয়ে স্টেশনে এসে দাঁড়ায়। তখন আমি এক লোককে বললাম ভাইয়া ট্রেন এখন কোন স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছে। উনি আমাকে বলেছে মৌচাক রেলওয়ে স্টেশনে।
তখন আমি মনে মনে বললাম, তুমি তো আমাকে বলেছ রতনপুর স্টেশনে নামতে। আর তাই আমি না নেমে ঘুমিয়ে পড়ি। ভেবেছি হয়তো আরো অনেক সময় লাগবে রতনপুর স্টেশনে যেতে। তার পরে এক সময় আমার ঘুম ভাঙে আর তাকিয়ে দেখি। অনেকে বলতেছে এই হচ্ছে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন। সবার কথা শুনে তো আমি বোকা বনে গেলাম! ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি, রাতের ৩টা, বাজে। হঠাৎ দুই-তিনজন ছেলে এসে আমাকে বলল : তোর কাছে কী কী আছে সব বের কর। নয়তো বুকে গুলি করব। ওদের কথা শুনে ভয়ে ফোন-টাকা সব দিয়ে দিলাম। এমনকি তোর ভাবী অনেক কষ্ট করে যে আচার বানিয়ে দিয়েছে তাও দিয়ে দিয়েছি। এ কথা বলে মফিজ ভাই হাউমাউ করে কান্না শুরু করল।
মফিজ ভাইয়ের এমন কাণ্ড দেখে আমি পড়লাম মহাবিপদে! হাসব নাকি আমিও মফিজ ভাইয়ের সাথে সুর মিলিয়ে কান্না করব ঠিক বুঝলাম না।
তবে মফিজ ভাইকে বললাম, আরে বোকা তুমি তো ভুল করেছ। রতনপুর নামে কোনো রেলওয়ে স্টেশন নাই। এই জায়গার নাম রতনপুর। আর আমরা যে স্টেশনে ঘুরতে যাই। ওই স্টেশনের নাম হলো মৌচাক রেলওয়ে স্টেশন। আমার এই কথা শুনে, মফিজ ভাই কান্না বন্ধ করে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকাল আমার দিকে। হ


আরো সংবাদ



premium cement