২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জরুরি কথা

-

মিলিকে আমার ভীষণ ভালো লাগে। ওর হরিণী চোখ আর মায়াবী হাসি দেখে যে কেউ ঘায়েল হবে। আমি তো ঘায়েল হয়েই গেছি সেদিন, যেদিন ফেসবুকে মিলিকে প্রথম দেখি।
দুপুরে তাকে মেসেজ লিখলাম, ‘আপনি কোথায় থাকেন আপু?’
মেসেজ পেয়েই সে চট করে লিখল, ‘জি ভাইয়া আমি ঢাকার মেয়ে। এখানেই থাকি। আপনি?’
আমি লিখলাম, ‘গ্রামে থাকি আমি। ব্যাংকে জব করি।’
আমি গ্রামে থাকি জেনে মিলি উচ্ছ্বাসে লিখল, ‘ওয়াও গ্রাম! আই লাভ গ্রাম। আমি জীবনেও গ্রামে যাইনি।’
আমি লিখলাম, ‘তাই! তো আসবেন আমার গ্রামে?’
মিলি সন্তুষ্ট হয়ে লিখল, ‘কেন নয়!’
এভাবেই মিলির সাথে আমার পরিচয় শুরু। প্রথমে বন্ধুত্ব, পরে প্রেম। প্রেমে অবশ্য আমিই পড়েছি। মিলি তা জানে না। আমারও জানানো হয়নি যে সে আমার মনের দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। সাহস করে বলা হয়নি।
আমি একজন ব্যাংক কর্মকর্তা। দিনভর অফিসের ওয়াইফাই দিয়ে ফেসবুক চালাই। রাতে বাসায় এলে নেটওয়ার্ক সঠিকভাবে পাই না বলে ফেসবুকে রাতে সেভাবে থাকা হয় না। গ্রামগঞ্জে নেটওয়ার্কের এই সমস্যাটা বেশ পুরনো।

২.
অনেক দিন থেকে ভাবছি মিলিকে মনের সব না বলা কথা জানিয়ে দেবো দ্বিধা লাজের তোয়াক্কা না করে। হ্যাঁ, আজই আমাকে তাই করতে হবে। বাবা-মা আমার জন্য পাত্রী খুঁজছেন। কোনো পাত্রীই আমার পছন্দ হয় না। অথচ পছন্দের পাত্রী পড়ে আছে ফেসবুকের ভেতরে। মিলিকে অনলাইনে দেখা যাচ্ছে।
‘হাই মিলি।’
‘হাই।’
‘কেমন আছেন?’
‘ভালো। ইউ?’
‘আমিও। কী করছেন?’
‘আচার খাচ্ছি। তেঁতুলের আচার। খাবেন?’
‘না। আপনি খান। আমাদের তেঁতুল গাছে অনেক তেঁতুল। পাঠাব?’
‘পাঠান।’
‘একটা কথা বলার ছিল!’
‘কী কথা?’
‘বলব?’
‘বলেন।’
‘না থাক।’
‘আহা বলেন না!’
‘রাগ করবেন?’
‘রাগ করার মতো কথা?’
‘না। তা হবে কেন?’
‘তো বলুন।’
‘আপনাকে খুব পছন্দ আমার। বাবা-মা আমার জন্য পাত্রী খুঁজছেন। কোনো পাত্রীই পছন্দ হচ্ছে না।’
‘কেমন পাত্রী পছন্দ আপনার?’
‘আপনার মতো।’
‘হা হা হা।’
‘হাসলেন যে?’
‘এমনি। তার মানে আমাকে বিয়ে করতে চাচ্ছেন?’
‘একদম তাই। আপনি রাজি?’
ওপার থেকে কোনো জবাব আসে না। অনেক সময় পার হলেও মিলি জবাব দেয় না। কী ব্যাপার! মনের কথা বলে কোনো অন্যায় করলাম নাকি? একেবারে চুপ হয়ে গেল।
বিকেলে হঠাৎ আমার প্রোফাইল পিকচারগুলোতে মিলির একতরফা লাইক আসতে শুরু করল। কমেন্টও। তার মানে সে আমার প্রস্তাবে নীরব ভূমিকা পালন করে জানাল যে, আমার তার সম্মতি আছে। মারহাবা!

৩.
বিকেলে হঠাৎ মিলির মেসেজ, ‘আজ রাতে আপনার সাথে জরুরি কথা আছে। নেটে থাকবেন তো?’
তৎক্ষণাৎ লিখলাম, ‘আসলে বাসায় নেট ভালো সার্ভিস দেয় না। তাই থাকা হয় না। এখন বলা যাবে জরুরি কথাটা?’
কিছুক্ষণ নীরব থেকে মিলি লিখল, ‘না। রাতেই বলি। কষ্ট করে একটু নেট সংযোগের ব্যবস্থা করবেন।’
লিখলাম, ‘ওকে।’
এখন রাত ১০টা। পুকুর পাড়ে বসে আছি। এখানে নেট তুলনামূলক ভালো। ফেসবুক চললেও দেরিতে সব পোস্ট শো করে। লোডিং আর লোডিং।
হঠাৎ ম্যাসেঞ্জারে কার যেন বার্তা টোন বাজল। আরে, মিলি রহমান আইডি থেকে মেসেজ এসেছে। কী লিখেছে মিলি! দেখতে মনটা আঁকুপাঁকু করছে। নিশ্চয়ই আমার প্রেম প্রস্তাব অ্যাকসেপ্ট করে বার্তা পাঠাল! মেসেজ ওপেন করলাম। কিন্তু শো করছে না। লোডিং। উফ, কখন যে শো করবে মেসেজ। আচ্ছা বড় আমগাছটির মগডালে উঠলে কেমন হয়! নিশ্চয়ই নেট আরেকটু ভালো সার্ভিস দেবে! হ্যাঁ, আমাকে আমগাছেই উঠতে হবে।
বহু কষ্টে আমগাছের মগডালে উঠলাম। কষ্ট সার্থক হয়েছে। নেটওয়ার্ক এখন ক্লিয়ার। মিলির মেসেজ ক্লিয়ার পড়া যাচ্ছে। সে লিখেছে, ‘ভাইয়া, আপনাকে চিনি না। তবে বোঝা যায় আপনি খুব ভালো মানুষ। আপনাকে ঠকানো আমার উচিত হবে না। তাই একটা সত্য কথা বলে দিচ্ছি। এই আইডিটি একটি ফেইক আইডি। ‘মিলি রহমান’ ফেইক আইডিটি আমি চালাই। আমার নাম আবু তাহের। যে ছবিগুলো রোজ ফেসবুকে ছাড়ি, সেগুলো আমার মামাতো বোনের। ভালো থাকবেন ভাইয়া।’
কথাগুলো পড়ে নিজেকে ভীষণ বোকা মনে হলো। আবু তাহের নামের কোনো এক ফাজিল মিলি সেজে আমাকে কী বোকাই না বানাল। নিজেকে সর্বদা চালাক ভাবলেও এই মুহূর্তে নিজেকে ভীষণ বোকা...
আমগাছের মগডাল থেকে নামতেই বিপত্তি ঘটে গেল। হাত ফসকে আমার প্রিয় মোবাইলটা পুকুরে পড়ে গেল। হায় হায় আমার দামি মোবাইলটা! কী হবে এখন! আবু তাহের মিলি সেজে জরুরি কথা শোনাতে আমাকে এত রাতে গাছে উঠিয়ে মোবাইলটা পুকুরে...! ব্যাটাকে সামনে পেলে ঠাস করে একটা চড় মারতাম।


আরো সংবাদ



premium cement