২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বিদায়বেলায় ফেদেরার আবার বুঝিয়ে দিলেন তিনিই ‘রাজা’

বিদায়বেলায় ফেদেরার আবার বুঝিয়ে দিলেন তিনিই ‘রাজা’ - ছবি : সংগৃহীত

অঝোরে কাঁদছেন তিনি। যেন বাচ্চা ছেলে। তাকে শক্ত করে জড়িয়ে স্ত্রী। একের পর এক চুমু খাচ্ছেন গালে, কপালে। কানে কানে কিছু বলছেন। হয়তো বলছেন, ‘নিজের আবেগকে সামলাও।’ কিন্তু এই আবেগ যে থামার নয়। তা গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে। স্ত্রীর পরে দুই ছেলে, দুই মেয়ে। তার পরে বাবা, মা। পরিবারের পরে সতীর্থ নোভাক জোকোভিচ, রাফায়েল নাদালরা এসে জড়িয়ে ধরলেন। হাউ হাউ করে কাঁদছিলেন নাদাল। জোকোভিচও বার বার চোখ মুছছিলেন। প্রতিপক্ষের বিদায়ে কবে কে এ দৃশ্য দেখেছে! তিনি দেখালেন। বার বার ফেদেরারকে ঘিরে আবেগের বিস্ফোরণ ঘটল লেভার কাপে। হাত বাড়িয়ে দিলেন কিংবদন্তি রড লেভার। নিজেকে কিছুটা সামলালেন ফেদেরার। পুরো কোর্ট ঘুরলেন। হাত নেড়ে দর্শকদের ধন্যবাদ জানালেন। শেষে নাদাল, জোকোভিচদের কাঁধে চড়ে বিদায় নিলেন ফেদেরার। বিদায়বেলায় আরো একবার বুঝিয়ে দিলেন, তিনিই ‘রাজা’।

জন ম্যাকেনরো বলছেন, ‘আমার দেখা সব থেকে সুন্দর টেনিস খেলোয়াড়।’ বিয়ন বর্গ বলছেন, ‘ইশ, আমি যদি ওর মতো টেনিস খেলতে পারতাম।’ কে শুনছেন? রজার ফেদেরার। কী শুনছেন? তাকে নিয়ে কী বলছেন পূর্বসুরীরা। পাশে দাঁড়িয়ে নাদাল, জোকোভিচরা। তাদের চোখও শুকনো নয়। এমনকি, চিচিপাসের, রুডদের মতো তরুণ টেনিস খেলোয়াড়দেরও চোখে পানি। সে সব দেখে নিজেকেও ধরে রাখতে পারলেন না ফেদেরার। কাঁদলেন। তার কান্না দেখে কাঁদলেন দর্শকাসনে থাকা তার স্ত্রী মিরকা ও পরিবারের অন্য সদস্য। সবাইকে কাঁদিয়ে টেনিস থেকে বিদায় নিলেন ফেদেরার।

দীর্ঘ চোটের পরে আরো একবার খেলবেন বলে জানিয়েছিলেন ফেদেরার। শেষবারের মতো। শেষ লড়াইয়ে পাশে নিয়েছিলেন অন্যতম সেরা প্রতিপক্ষ নাদালকে। লেভার কাপের প্রথম দিন ফেডেরারময়। সব আয়োজন তাকে নিয়েই। তিনি যতবার কোর্টে নেমেছেন ততবার উদ্বেল হয়েছে গ্যালারি। সবাই হয়তো ভুলে গিয়েছেন, সেখানে ফেদেরার ছাড়াও নাদাল, জোকোভিচ, মারেরাও রয়েছেন। গ্যালারি বুঝিয়ে দিয়েছে, শেষবারের মতো তাদের প্রিয় তারকাকে দেখার জন্যই এসেছেন। ফেদেরারের খেলা শুরুর আগেই কেঁদেছেন প্রৌঢ়া। ম্যাচের মধ্যে পাগলের মতো ফেডেরারের সংস্থার একের পর এক টি-শার্ট খুলে ছুড়ে দিয়েছেন তারই কোনো এক ভক্ত। ফেদেরার দেখেছেন। হালকা হেসেছেন। কিন্তু নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করেছেন। খেলা শেষে সেটা আর পারলেন না।

কোর্টে আর আগের মতো নড়াচড়া নেই। এক হাতের ব্যাক হ্যান্ড আর আগের মতো প্রতিপক্ষকে ছারখার করে দিতে পারে না। তবুও মাঝেমধ্যে দেখা গেল সেই পুরনো ঝলক। সঙ্গী নাদালও দীর্ঘ দিন ধরে চোট নিয়েই খেলছেন। তাই শুরুটা ভালো করলেও শেষ করতে পারলেন না ফেদেরাররা। হেরে গেলেন। কিন্তু এই ম্যাচ কি সত্যিই হার-জিতের পরোয়া করে। ফেদেরার জিতবেন, না হারবেন, তা দেখতে আসেননি কেউ। এসেছিলেন ফেদেরারকে দেখতে। এখানেই জিতে গেলেন তিনি। হার-জিতের ঊর্ধ্বে জিতে গেল টেনিস।

ফেদেরারের খেলা উপলক্ষে নানা বন্দোবস্ত রেখেছিলেন আয়োজকরা। খেলা শেষ হতেই দেখানো হল একটি ভিডিও। সেখানে ফেদেরারকে নিয়ে নিজেদের অনুভূতির কথা বললেন বর্তমান ও প্রাক্তন টেনিস তারকারা। সেটা দেখতে দেখতেই কেঁদে ফেললেন ফেদেরার। তার পরে সঞ্চালকের সাথে কথা বলার সময় আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না তিনি। কোনো রকমে নিজের কথা শেষ করেই জড়িয়ে ধরলেন স্ত্রীকে। অন্য দিকে তখন ফেদেরারকে সম্মান জানাতে ‘স্টিল ফলিং ফর ইউ’ গাইছেন বিখ্যাত শিল্পী এলি গোল্ডিং। কিন্তু সে দিকে তার তাকানোর সময় নেই। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছেন স্ত্রীকে। জীবনের এক ভালোবাসা চিরদিনের মতো ছাড়তে চলেছেন। সেই কষ্ট ঢাকতে আর তো আর এক ভালোবাসাকে আঁকড়ে ধরতেই হবে।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা

 


আরো সংবাদ



premium cement